সলমনের কাছে ক্ষমা চান অরিজিৎ, অনুরোধ করেন, যাতে তাঁর গান ‘সুলতান’ থেকে বাদ না পড়ে। নিজস্ব চিত্র
এই মুহূর্তে হিন্দি প্লেব্যাক জগতের শীর্ষে রয়েছে তাঁর নাম। তাঁর কণ্ঠ, গায়কিতে বিভোর আট থেকে আশি। তিনি আর কেউ নন, বাংলার অরিজিৎ সিংহ। বিলাসবহুল গাড়ি বা হেলিকপ্টারে নয়, বরং ট্রেনে চেপে আর পাঁচ জন মধ্যবিত্তের মতোই রাজ্যের মধ্যে অনুষ্ঠান করতে যান অরিজিৎ। টিকিটের দাম আকাশছোঁয়া হলেও একটি আসনও ফাঁকা যায় না কনসার্টের। খবর, অরিজিৎ তাঁর শো থেকে টাকা তুলে সেই টাকা দুঃস্থের সেবায় দান করেন। নিজে সেই থেকে যান ছাপোষা জীবনেই। ২৫ এপ্রিল, অরিজিতের ৩৬তম জন্মদিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভেসে এল শুভেচ্ছাবার্তা। তারকা থেকে শুরু করে সাধারণ, সবাই তাঁর গানের ভক্ত।
পেশাদার জীবনে খুব বেশি বিতর্কে জড়াননি গায়ক। তবে হিন্দি সিনেমায় জায়গা করে নিতে তাঁকেও কাঠখড় পোহাতে হয়েছে দু’এক বার। অভিনেতা সলমন খানের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন অরিজিৎ, যার ফল ভাল হয়নি। বহু মানুষের কেরিয়ার গড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ খ্যাতি রয়েছে বলিউডের ‘ভাইজান’-এর। তবে রগচটা হিসাবে তাঁকে নিয়ে ভীতিও রয়েছে বলিপাড়ায়।
২০১৪ সালে এক পুরস্কার অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন সলমন। সে বার ‘তুম হি হো’ গানের জন্য পুরস্কৃত হন অরিজিৎ। যদিও সব শেষে অরিজিতের নাম ডাকা হয়। তিনি গিয়ে পুরস্কার নেওয়ার সময় সলমন রসিকতা করে বলেন, “ঘুমিয়ে পড়েছিলে নাকি?” তার জবাবে অরিজিৎ বলেন, “কী করব, আপনিই তো ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলেন।” যদিও এই আলাপচারিতা খুব মধুর ভাবে শেষ হয় না।
সেই রাতেই মিঠুন পুরস্কার জেতেন সেরা গীতিকার হিসাবে। তখন তিনি অরিজিতের পক্ষ নিয়ে বলেন, “অরিজিৎ ঘুমিয়েই পড়েছিল বোধহয়, কারণ ওকে অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাখা হয়েছিল।” এর পরই সলমনের বেশ কয়েকটি ছবি থেকে অরিজিতের গান বাদ পড়ে।
‘ভারত’ এবং ‘সুলতান’-এর কথা স্পষ্ট ভাবেই বলা যায়, যদিও দু’টি ছবির ক্ষেত্রেই অরিজিতের গান বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে কাউকে দায়ী করা যায়নি। দেখানো হয়েছিল, পাকেচক্রে এমনটি করা হয়েছে। অরিজিৎ এতে আঘাত পান। শেষমেশ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে সলমনের কাছে ক্ষমা চান তিনি। অনুরোধ করেন, যাতে তাঁর গান ‘সুলতান’ থেকে বাদ না পড়ে। অরিজিৎ জানান, নিজের ব্যবহারের জন্য তিনি অনুতপ্ত।
সমাজমাধ্যমেও শোরগোল পড়ে যায় এতে। অরিজিতের ভক্তেরা তীব্র আপত্তি তুলে জানান, অরিজিতের কোনও ভুল নেই। শেষে অরিজিৎ সেই পোস্ট মুছে দেন।
শ্রোতাদের কাছে তিনি সেই ‘মাটির মানুষ’। অরিজিৎকে মাঝেমধ্যেই কর্মসূত্রে যেতে হয় মুম্বইয়ে। সেখানে একটি আবাসনে ফ্ল্যাটও কিনেছেন তিনি। কিন্তু বছরের বেশির ভাগ সময় অরিজিৎ সময় কাটান নিজের জন্মস্থান মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে। ছুটে আসেন নিজের ভিটেমাটির টানে, মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে।
গত ১৫ ডিসেম্বরের কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁর কাছে গান শোনানোর আবদার করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আবদার রেখেওছিলেন তারকা গায়ক। তবে অরিজিৎ গাওয়ার আগে মজার ছলেই বলেছিলেন, ‘‘একটা গান গেয়ে দিলেই ল্যাটা চুকে যাবে।’’ সাত-পাঁচ না ভেবেই শিল্পী গেয়ে ওঠেন ‘রং দে তু মোহে গেরুয়া’। ‘গেরুয়া’ বিতর্কেও মুখ খোলেন তিনি।
অরিজিৎ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বললেন, “আরে, এই শব্দ নিয়ে খামোকা বিতর্ক তৈরি হল। গেরুয়া তো সন্ন্যাসীদের রং। স্বামী বিবেকানন্দও তো গেরুয়া পরতেন। তিনি যদি সাদা পরতেন, তা হলে কি এত বিতর্ক হত?”
১৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার অ্যাকোয়াটিকায় কনসার্টে এসেছিলেন অরিজিৎ। টিকিটের দাম ছিল আকাশছোঁয়া। উপচে পড়েছিল ভিড়। শ্রোতাদের সঙ্গে ভিড়ে দাঁড়িয়ে অরিজিতের সঙ্গে গলা মিলিয়েছিলেন বাংলা ব্যান্ডের গায়ক রূপম ইসলামও। নেটমাধ্যমে সেই ভিডিয়ো মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy