ছোটরা অনেকেই এখন খুব জনপ্রিয়। ফাইল চিত্র
সন্ধ্যার বৈঠকখানা আলো করে থাকে ওরা। কেউ ভুতু নামে সবার প্রিয় আবার কেউ বয়সে এত্তটুকু হলেও রানি রাসমানী হয়ে সকালের কাছে মাতৃসমা। ধারাবাহিকে এখন শিশুশিল্পীর ছড়াছড়ি। বাংলা বা হিন্দিতে তো বটেই, গোটা দেশে অন্যান্য ভাষার টিভি ধারাবাহিকে এখন ‘শিশু-রাজ’ চলছে বলাই যায়। শুধুই কি অভিনয়, টিভিতে সম্প্রচারিত নাচ-গানের অনুষ্ঠানও মাতিয়ে রাখে কচিকাঁচারা। নানা নামে হিট শোয়ের মঞ্চে নাচ, গান, ম্যাজিক দেখানো থেকে কমেডি— সবেতেই শিশুদের দেখা যায়। কিন্তু ভারতে এত শিশু শিল্পীকে নিয়ে কাজের সময় সব নিয়ম মেনে চলা হয় কি? এমন প্রশ্ন উঠেছে বারবার। তাদের আয়ের টাকা কতটা পরিবার পায় আর কতটা শিশুর ভবিষ্যতের জন্য থাকে, তা নিয়ে নানা সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে কড়া আইন রয়েছে দেশে। সেইসঙ্গে আইন ভাঙার অভিযোগও। অনেক ক্ষেত্রে শিশুশিল্পীদের শ্রমিকের মতো খাটানোর অভিযোগও ওঠে।
শুধু টিভি কেন, ভারতীয় চলচ্চিত্রে আমির খান থেকে আলিয়া ভট্ট তো শিশু শিল্পী হিসেবেই বলিউডে পা রেখেছিলেন। বড় হৃতিক রোশনকে ছোট হৃতিক হিসেবে অনেক আগে থেকেই চেনে বলিউড। ছবিতে শিশুশিল্পীদের অভিনয় নিয়ে আইন ভাঙার অভিযোগ কম। কারণ, সাধারণত চলচ্চিত্রে শ্যুটিংয়ের সময় কম। কিন্তু টিভির অনুষ্ঠান বা ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে দিনের পর দিন চলে শ্যুটিং। অনেক সময় দিনরাত। আর সেখানে শিশু শিল্পীদের সুরক্ষা ও অধিকার বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অভিযোগও তাই বেশি ওঠে। তবে সব নিয়ম মানার পরেও খাটনি কম নয় শিশুশিল্পীদের। কারণ, বড়দের সমান আলো, শব্দ, মেকআপ নিয়ে কাজ করতে হয় খুদেদেরও।
ভারতে ১৪ বছর বয়স না হলে কেউ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে পারে না। কিন্তু শিশুশিল্পীদের ক্ষেত্রে কী হবে! তারা তো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজের বিষয়ে নিজেরা সিদ্ধান্ত নেয় না। অভিভাবক বা পরিবারে চাহিদা মতোই কাজ করতে হয়। ২০১৭ সালে ভারতের শিশু শ্রমিক আইন সংশোধন হয়। সেখানে ৩ নম্বর ধারায় বলা রয়েছে, ১৪ বছরের নীচে কেউ কোনও কাজ করতে পারে না। কিন্তু পরিবারের আর্থিক প্রয়োজনে কোনও শিশু বিপজ্জনক বা ঝুঁকিপূর্ণ নয় এমন ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে। তবে ভারতে যে হেতু ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সব শিশুর শিক্ষার অধিকার রয়েছে, তাই শিশুশিল্পীদের লেখাপড়াকে প্রাথমিক গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা রয়েছে। লেখাপড়ার বাইরে অন্য সময়ে তারা কাজ করতে পারে।
বিনোদন ও ক্রীড়া জগতে শিশুরা পরিবারের প্রয়োজনে অর্থোপার্জনের জন্য কাজ করতে পারলেও সেই নিয়ম প্রযোজ্য নয় সার্কাসের ক্ষেত্রে। তবে শিশুদের নিয়ে শ্যুটিংয়ে কতগুলি নিয়ম মেনে চলতেই হয়। এমন ভাবে শ্যুটিং করতে হবে যাতে কোনও শিশুকে একটানা তিন ঘণ্টার বেশি কাজ করতে না হয়। প্রতি তিন ঘণ্টা কাজের পরে এক ঘণ্টা বিশ্রামের সময় দিতেই হবে। এক দিনে বিশ্রাম-সহ সর্বোচ্চ ছ’ঘণ্টার জন্য শিশুশিল্পীকে নিয়ে শ্যুটিং করা যায়। সন্ধ্যা ৭টার পরে এবং সকাল ৮টার আগে শ্যুটিং করা যায় না। কোনও ভাবেই অতিরিক্ত সময় কাজ করানো যাবে না। একইসঙ্গে একটির বেশি সংস্থার জন্য কাজ করতে পারবে না একজন শিশুশিল্পী। আর সপ্তাহে একটা গোটা দিন ছুটি দিতেই হবে।
শিশুশিল্পীদের লেখাপড়া যাতে বিঘ্নিত না হয় তার জন্যও নজর রাখার নিয়ম রয়েছে। সেখানে বলা আছে একটানা ২৭ দিনের বেশি কোনও শিশুকে শ্যুটিংয়ের জন্য নিয়মিত স্কুল থেকে বাইরে রাখা যাবে না। শ্যুটিং চলার সময়েও যাতে শিশুরা লেখাপড়া করতে পারে তার ব্যবস্থার রাখারও নিয়ম রয়েছে। এ ছাড়াও প্রতি পাঁচজন শিশু পিছু একজন নিয়োগ করার নিয়ম রয়েছে যিনি শিশুদের যাবতীয় অধিকার রক্ষা হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর রাখবেন।
এই ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে শিল্পীদের আয়ের কোনও নির্দিষ্ট হার থাকে না। জনপ্রিয়তা এবং কোন সংস্থার হয়ে কাজ করছেন একজন শিল্পী, তার উপরেই নির্ভর করে মজুরির হার। নিয়ম মতো আয়ের টাকা পায় পরিবারই। তবে বিশ্বের অনেক দেশেই এমন কড়া নিয়ম রয়েছে যে শিশুদের আয়ের সব টাকা পরিবার পাবে না। কমপক্ষে ১৫ শতাংশ শিশুর ভবিষ্যতের জন্য অভিভাবকদের সঞ্চয় করতে হবে। ভারতে শিশুশিল্পীদের জন্য আইনের অন্তর্গত একটি অধিনিয়মে বলা রয়েছে, মোট আয়ের ২০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট শিশুশিল্পীর নামে স্থায়ী আমানতে জমাতে হবে। বড় হওয়ার পরে ওই টাকা খরচের অধিকার পাবে শিশুশিল্পী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy