Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Satabdi Roy

উফ্! আর পারছি না, বাড়িতে বদ্ধ লাগছে: শতাব্দী

রবিবার কি আর ছুটির দিন? লকডাউনে এখন রোজ রবিবার। ডায়েরি লিখলেন শতাব্দী রায়

শতাব্দী রায়।

শতাব্দী রায়।

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ১৬:৩৪
Share: Save:

রবিবার কি আর ছুটির দিন? লকডাউনে এখন রোজ রবিবার। ডায়েরি লিখলেন শতাব্দী রায়

সকাল ৮টা

ঘুম ভাঙতেই মনে হল এখনই উঠে পড়ি। তারপরেই ভাবলাম, কী আর করব? এখন সকাল থেকে রাত শুধু ফোন এসে যাচ্ছে। ঝাড়খণ্ড থেকে এখনই ফোন পেলাম। ‘দিদি আমি বীরভূমের এখানে কাজ করতে এসেছি। আমি আটকে। আমায় বাড়িতে নিয়ে যান।’ কেউ লিখছেন, ‘আমি মেয়ে নিয়ে আটকে কেরলে। আমায় বাড়িতে নিয়ে আসুন’...বীরভূম থেকে ফোন আসছে, ‘দিদি আপনি আসুন। মেয়েরা আপনাকে দেখতে চাইছে।’

কী যে অস্থির লাগছে আমার! কী করে বোঝাই ওদের, আমি গেলে তো জমায়েত হয়ে যাবে। আর এখন জমায়েত মানে ক্রিমিন্যাল অফেন্স! রোজ সকাল এরকম ভয়ানক দুর্ভাবনা নিয়ে কাটছে। প্রশাসন মারফৎ খাবার পৌঁছে দিচ্ছি আমরা। সরকার, আমাদের মুখ্যমন্ত্রীও দারুণ কাজ করছেন। এই ফোনের পরেই শুরু হয় মেয়ের কার্টুন দেখা।ছেলে টিভি চালিয়ে দেয়। উফ্ফ্!

সকাল ৯টা

খাওয়া নিয়ে খুব বেশি বাড়াবাড়ি করছি না আজকাল। বাড়িতে যা আছে তাই দিয়ে চালাচ্ছি আমরা। আমার মেয়ে সাত বছর। ছেলে উচ্চমাধ্যমিক দেবে। ওর তো একটা পরীক্ষা বাকি পড়ে আছে। দু’জনে মিলে আমার মাথা খাচ্ছে। সারাক্ষণ কার্টুন। আমি তো ওদের বলেছি বাড়িতে সারাক্ষণ এমন কার্টুন চললে আমি এয়ারপোর্টে চলে যাব। বসে থাকব। যখন যে প্লেন ছাড়বে তাতে করে চলে যাব। আর পারছি না বাড়িতে এ ভাবে। আমার কি এতদিন বাড়িতে বসে থাকার অভ্যাস আছে! ব্রেকফাস্টে আজ ব্রেড আর সালামি। এ বার মেয়ের গরম জামাকাপড় গোছাতে যাব।

সকাল ১১টা

মেয়েকে নিয়ে গরম জামাকাপড় গোছাতে গিয়ে দেখি মেয়ের অনেক জামা ছোট হয়ে পড়ে আছে। সেগুলোও সব আলাদা করলাম। আমার মেয়ে খুব মজার মজার কথা বলে। ওকে বলা হয়েছে,‘তোমার কিছু জামা এমন বাচ্চা, যার নেই তাকে দিতে হয়।’ এ বারে প্রচুর জামা ওর ছোট হয়ে গিয়েছে। এই সব দেখে ও বলল, “মা, তুমি এমন অনেককে আমার সব জামা-ই তো দিয়ে দিলে। এ বার তো আমার আর জামা রইল না!” ওকে চেষ্টা করি নানা ভাবে ব্যস্ত রাখতে। আমার মাথায় তেল দিয়ে দেয় ও আজকাল!

বেলা ১২টা

বাড়িতে দু’জন আমায় কাজকর্মে সাহায্য করলেও বাইরে থেকে যাঁরা কাজের জন্য আসতেন তাঁদের এখন ছুটি। ওঁদের সাহায্য করার জন্য আমি ন্যাতা লাগানো রডে ঘর মুচ্ছি। এতদিন বাড়িতে বসা, এতে করে এক্সারসাইজও হয়ে যায়।

দুপুর ২টো

আজ ডালিয়া খেলাম। রুটিও খাই। তবে আমায় যাঁরা সাহায্য করেন তাঁরা ভাত ছাড়া খেতে পারেন না। ওঁদের জন্য ৫০ কিলো চাল আনিয়েছি।

দুপুর ৩টে

ছেলেকে তো বাগেই আনতে পারি না। সে হয় মোবাইল, নয় টিভি। কাল জোর করে বসিয়েছি। নেটফ্লিক্স ডাউনলোড করে দিয়েছে ও আমায়। দুপুরের পর সিনেমা দেখলাম, ‘বদলা’। অমিতাভ বচ্চনের, কি ভাল! এর পর ‘মাসকা’ দেখব। খেয়াল করিনি। ছবি দেখতে দেখতে দেখলাম সন্ধে নেমে গিয়েছে। শাশুড়ি পাশেই থাকেন। উনি পড়ে গিয়েছেন। দেখে এলাম গিয়ে। খাবারও দিয়ে এলাম।

রাত ৮টা

বড্ড অস্থির লাগছে। একটু ভিডিয়ো কল করলাম চারজন মিলে, বোন, বউদি, আড্ডা হল। দেখা হল। কোনও কিছুই একটানা করতে ইচ্ছে করছে না আর। এত শান্ত চারিদিক, কাজ নেই, এখন তো আমার কবিতা লেখার সময়! কই এক লাইনও লিখতে পারছি না। ছবি দেখতে বসলেও একটানা দেখতে পারছি না। এ কী অদ্ভুত পরিবেশ! এ বার খেতে যাব। আমি তাড়াতাড়ি খেয়ে ৯টার মধ্যে শুয়ে পড়ি।

রাত ৯টা

শুয়ে আছি…একটা ভাবনা ঘুরছে। কী শেখাচ্ছে আমাদের এই সময়? এখন খুব মায়ের কথা মনে পড়ছে। এই ১৯ ফেব্রুয়ারি মা হুস করে চলে গেল। কি প্রাণোচ্ছ্বল! হইহই করা আমার মা। জাস্ট নেই!ওই চলে যাওয়া দেখে মনে হল আমি কত কাজ করেছি! কী মানে তার? এত টাকা জমানো, গাড়ি, বাড়ি, কাজ করা, ভাল থাকা, বাইরে ঘোরার প্ল্যান— এ সব কী হবে আর? আজ আমায় কেউ কোটি টাকা দিয়ে বলল, যাও, শপিং করে এস। কোথায় যাব? যদি বা করি! কে দেখবে?এত ঘর সাজাতে ভালবাসি। এখন মনে হচ্ছে কার জন্য সাজাব? কে দেখবে? করোনা শিখিয়ে দিচ্ছে অনেক কিছু!

জীবনের আর কোনও মানে আছে কি? কেউ বলবে, জীবন তো আছে! আমি বলব, এই বদ্ধ হয়ে আসা জীবনের সত্যি কোনও মানে নেই…

অন্য বিষয়গুলি:

Satabdi Roy Lockdown Coronavirus Tollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy