মুক্তির চার দিন আগে ‘ভবিষ্যতের ভূত’ চলচ্চিত্রটি দেখতে চেয়ে রাজ্য পুলিশ নিজের গণ্ডির বাইরে গিয়ে কাজ করেছিল বলে রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট।
এখন তার খেসারত হিসেবে কোর্টের নির্দেশ— রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশের ডিজি-কে চিঠি লিখে হল-মালিকদের জানাতে হবে, রাজ্য সরকার ‘ভবিষ্যতের ভূত’ চলচ্চিত্রটির উপরে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। প্রযোজকদের কাছে মুক্তির আগে ছবিটি দেখতে চেয়ে পাঠানো সেই চিঠিও প্রত্যাহার করতে হবে।
‘ভবিষ্যতের ভূত’ ছবিটির প্রদর্শন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংবিধানে বাক্স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ছবির প্রযোজক সংস্থা। প্রশ্ন উঠেছিল, কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের সময় মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ঘিরে অনীক দত্তর মন্তব্যের জেরেই কি তাঁর ছবির প্রদর্শন বন্ধ করা হল?
রাজ্য সরকার আজ সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দিয়েছে, রাজ্য সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকলেও, এই ছবির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। কিন্তু তাতে কান না-দিয়ে শীর্ষ আদালতের বিচারপতি ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তের বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছেন, কেন ছবি মুক্তির এক দিনের মাথাতেই অধিকাংশ সিনেমা হল ছবিটি সরিয়ে নিল? নিশ্চয়ই আতঙ্ক ছিল। সেই কারণেই স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশের ডিজি-কে হল-মালিকদের চিঠি দিয়ে জানাতে হবে, ‘ভবিষ্যতের ভূত’ দেখানোয় কোনও বাধা নেই। প্রযোজকেরা জানিয়েছেন, এই রায়ের পরে তাঁরা মাল্টিপ্লেক্সগুলির কাছে ছবি বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাখ্যা চাইতে পারবেন। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর ও পুলিশের কর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, রায়ের কপি হাতে পাননি বলে তাঁরা কোনও মন্তব্য করবেন না।
বাক্স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের নিরিখেই আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র সত্ত্বেও পুলিশ ছবি মুক্তির চার দিন আগে তা দেখতে চেয়েছিল? সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, ছবিটি দেখতে চেয়ে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) নিজের এক্তিয়ার লঙ্ঘন করেছেন। তাই প্রযোজকদের কাছে পাঠানো চিঠি তাঁকে প্রত্যাহার করতে হবে। রাজ্য সরকারের উদ্দেশে বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মন্তব্য, ‘‘চিন্তাভাবনার স্রোত বহমান থাকুক। পশ্চিমবঙ্গের মতো মেধার রাজ্যে শত ফুল বিকশিত হতে দিন। আমরা তো মুক্ত সমাজে বাস করছি!’’
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেয়েছিল ‘ভবিষ্যতের ভূত’। তার চার দিন আগে, ১১ ফেব্রুয়ারি প্রযোজককে চিঠি দিয়ে পুলিশ জানায়, ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার মধ্যেই পুলিশ-কর্তাদের জন্য ছবির প্রদর্শনের বন্দোবস্ত করতে হবে। কারণ তাদের কাছে খবর রয়েছে, এই ছবির ফলে ‘রাজনৈতিক আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা’ তৈরি হবে। বিচারপতি চন্দ্রচূড় কড়া সুরে প্রশ্ন করেন, এই ‘রাজনৈতিক আইন-শৃঙ্খলা সমস্যা’ জিনিসটা কী?
ছবির প্রযোজকরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার পরে সুপ্রিম কোর্ট গত ১৫ মার্চ রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল, কেন ‘ভবিষ্যতের ভূত’ ছবির প্রদর্শন বন্ধ করা হয়েছিল, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। ছবির প্রদর্শনে যাতে বাধা না আসে, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। আজ রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেন, রাজ্য সরকার ছবির প্রদর্শন বন্ধ করেনি। রাজ্যের সিনেমা নিয়ন্ত্রণ আইন ও সিনেমাটোগ্রাফ আইনে রাজ্যের সে ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু ছবির ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। কোনও হল-মালিককে ছবি বন্ধ করার নির্দেশও দেওয়া হয়নি।
মনু সিঙ্ঘভি যুক্তি দেন, হল-মালিকদের রাজ্য বলতে পারে না, কোন ছবি কত দিন দেখাতে হবে। ছবির প্রচার বা বিপণন করা রাজ্যের দায়িত্ব নয়। এখন ১০টি হলে ছবিটি চলছে বলেও দাবি করেন তিনি। কিন্তু প্রযোজকের আইনজীবী সঞ্জয় পারেখ দবলেন, এর মধ্যে কোনও হলই কলকাতায় নয়। মনু সিঙ্ঘভি যুক্তি দেন, কলকাতার কোনও হল না দেখালে সেটা বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিচারপতিরা নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে জানিয়ে দেন, স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশের ডিজি-কে হল মালিকদের জানাতেই হবে যে ছবির প্রদর্শনে বাধা নেই। সেই নির্দেশ পালন হয়েছে বলে হলফনামা দিয়ে আগামী ১ এপ্রিল ফের শুনানির আগে সুপ্রিম কোর্টকে জানাতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy