আদিত্য পাঞ্চোলি। ফাইল চিত্র
আপাতত স্বস্তি আদিত্য পাঞ্চোলির। একটি ধর্ষণের মামলায় মঙ্গলবার মুম্বই সিটি সিভিল সেশন কোর্ট তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিন দেয়। পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ১৯ জুলাই। এক অভিনেত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে সম্প্রতি আটক করা হয় তাঁকে। বলিউডের প্রথম সারির ওই অভিনেত্রীর তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, ১৭ বছর বয়সে তিনি ধর্ষিতা হন। বুধবার সেই মামলার শুনানিতে আদিত্যর আইনজীবী বলেন, ১৫ বছর পর এই অভিযোগ করার কোনও অর্থ হয় না।
মুম্বইয়ের ভরসোভা থানায় আড়াই পাতার একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বলিউডের প্রথম সারির এই অভিনেত্রী। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, ২০০৪ সালে অনেক স্বপ্ন নিয়ে মুম্বইয়ে পা রাখেন। বয়স ছিল ১৭ বছর। মেয়েদের একটি হস্টেলে থাকতেন। সেই বছরই তাঁর পরিচয় হয় আদিত্যর সঙ্গে। তখন তাঁর বয়স প্রায় ৩৮। বিবাহিত আদিত্যর তখন দু’টি সন্তান ছিল। এমনকি তাঁর মেয়ে ওই অভিনেত্রীর বয়সী।
অভিনেত্রী লিখেছেন, সেই সময় আদিত্য পাঞ্চোলির সঙ্গে একটি পার্টিতে যান। একটি পনীয় খাওয়ার পরই তাঁর ঝিমুনি শুরু হয়। পার্টি শেষ হওয়ার পর আদিত্য পাঞ্চোলি তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সেই মতো তাঁরা দু’জনে গাড়িতে ওঠেন। ইয়ারি রোডের কোনও একটি জায়গায় গাড়ি থামিয়ে দেন আদিত্য। এর পর ধর্ষণ করেন অভিনেত্রীকে। এমনকি সেই অবস্থায় অভিনেত্রীর ছবিও তুলে রাখেন আদিত্য। ছবি তুলে রাখার বিষয়টি তিনি জানতেনও না।
আরও পড়ুন : ‘অশ্লীল’ গান গাওয়ার অভিযোগে এ বার বিপাকে হানি সিংহ
আরও পড়ুন : রাজ্যবর্ধনের চমকে দেওয়া কয়েন ট্রিক
পরের বার যখন দু'জনের দেখা হয়, আদিত্য অভিনেত্রীকে বলেন তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মতো সম্পর্কে থাকা উচিত। অভিনেত্রী তাঁকে বলেন, আদিত্য তাঁর বাবার বয়সী। তিনি এমন একজনকে বিয়ে করতে চান যে তাঁর বয়সের। তারপরই আদিত্য তাঁকে গাড়িতে ধর্ষণ করার পর যে ছবিগুলি তুলে রেখেছিলেন সেগুলি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করতে থাকেন। বলেন, ছবিগুলি সবাইকে দেখিয়ে দেবেন। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, তিনি তখন অল্প বয়সী, মুম্বইয়ে কাউকে চিনতেন না। সেই সুযোগ নেন আদিত্য।
অভিনেত্রী তাঁর অভিযোগে আরও জানিয়েছেন, ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় রেখেছিলেন আদিত্য। প্রতিবার অভিনেত্রীর অজান্তে পানীয়র সঙ্গে মাদক মিশিয়ে ধর্ষণ করতেন আদিত্য। ছবিও তুলে রাখতেন পরে ব্ল্যাকমেল করার জন্য। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একবার পুলিশে অভিযোগ জানাতে যাচ্ছিলেন অভিনেত্রী। রাস্তায় অটোরিক্সা আটকে অভিনেত্রীকে মারধর করেন অদিত্য। এক পথচারী তাঁকে উদ্ধার করেন আদিত্যর হাত থেকে। সেই সময় অভিনেত্রীর সঙ্গে সিনিয়র পুলিশ অফিসার বিপিন বিহারীর সঙ্গে দেখা হয়। তাঁকে বিষয়টি জানান। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।
এরপর অভিনেত্রী বাড়ি পরিবর্তন করেন। কিন্তু ২০০৬-২০০৭ সাল নাগাদ ভরসোভাতে একটি ফ্ল্যাট কেনার পরও নিস্তার মেলেনি আদিত্যর হাত থেকে। সেখানেও পৌঁছে যান আদিত্য। এমনকি ডুপ্লিকেট চাবি বানিয়ে নেন। একদিন ঘরে সব জিনিসপত্র ভাঙচুর করে সব চাবি কেড়ে নিয়ে অভিনেত্রীকে তালা বন্ধ করে চলে যান অদিত্য।
অভিনেত্রী ২০০৮-২০০৯ সাল নাগাদ বান্দ্রায় চলে যান। তাঁর বোনও তাঁর সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। একদিন যখন অভিনেত্রী শুটিংয়ের জন্য বাইরে ছিলেন, সেই সময় অদিত্য ফ্ল্যাটে গিয়ে তাঁর বোনকে মারধর করেন। অভিনেত্রী ফোন করে আদিত্যকে বলেন, কেন এভাবে জ্বালাতন করছেন। উত্তরে আদিত্য বলেন, অভিনেত্রীর পিছনে যা টাকা খরচ করেছেন, সব ফেরত দিতে হবে। আদিত্য ১ কোটি টাকা দাবি করেন। ৫০ লক্ষ টাকাও দেন অভিনেত্রী। তারপর কিছুদিন বন্ধ ছিল আদিত্যর উত্পাত।
এরপর যখন অভিনেত্রী ধীরে ধীরে পরিচিতি পেতে শুরু করেন, বলিউডে পায়ের তলার মাটি শক্ত হয়, তখন ফের ব্ল্যাকমেল করতে আরম্ভ করে আদিত্য। পুরনো সেই সব ছবির কথা তুলে ফের টাকা দাবি করতে শুরু করেন।
অভিনেত্রী ভরসোভা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন আদিত্যর বিরুদ্ধে। গত ১২ মে আদিত্যর বয়ান রেকর্ড করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আপাতত ১৯ জুলাই পর্যন্ত আদিত্যকে গ্রেফতার না করার কথা বলেছে আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy