Vikrant Massey is a powerful actor in TV and as well as in Movies dgtl
bollywood
কফিশপে টেবিল মোছা থেকে নায়ক, বিক্রান্তের সঙ্গে দেখা করতে বিয়ের আসর থেকে সেটে হাজির কনে
বিক্রান্ত মডেলিং শুরু করেছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণিতেই পড়ার সময়। সেখানে তিনি অভিনয় করেছিলেন মায়ের সঙ্গে। পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ২০০ চটাকা। স্কুলে নাচ এবং অভিনয়ের প্রতি আকর্ষণ দেখে শিক্ষকরা তাঁকে অভিনয় শেখার উপর জোর দিয়েছিলেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২১ ১০:১৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
এক সময় কাজ করতেন কফিশপে। সেখানে টেবিলে টেবিলে ধোঁয়া ওঠা কফিমাগ ঘিরে শুনতেন ছবি নিয়ে আলোচনা। আজ তিনি নিজেই অভিনয় করেন ছবিতে। ‘দিল ধড়কনে দো’, ‘ছপাক’, ‘মির্জাপুর’ ছবির অভিনেতা বিক্রান্ত মেসী কোনও পার্টি বা অ্যাওয়ার্ড ফাংশন থেকে ডাক পান না। কিন্তু ভাল অভিনয়ের প্রয়োজন হলেই তলব আসে তাঁর কাছে।
০২২০
ভরসোভার বাসিন্দা বিক্রান্ত অভিনয়জীবন শুরু করেছিলেন টেলিভিশন থেকে। তার পর তিনি পা রাখেন ছবির জগতে। কিন্তু তাঁকে শুনতে হয়েছিল ছোট পর্দার অভিনেতারা সিনেমায় কিছু করতে পারেন না। সেই অপবাদ নিজের কাজ দিয়ে খণ্ডন করেছেন তিনি। ভরসোভার সোনু হয়ে উঠেছেন মির্জাপুরের বাবলু ভাইয়া।
০৩২০
ভরসোভার এক নিম্নবিত্ত পরিবারে বড় হয়ে ওঠেন বিক্রান্ত এবং তাঁর দাদা। তাঁদের বাবা জলি ছিলেন সাধারণ চাকুরে। মা মীনা ব্যস্ত থাকতেন ঘর সংসারেই। এক সাক্ষাৎকারে বিক্রান্ত বলেছিলেন, তাঁদের বাবার বেতনের বেশির ভাগ অংশ ফুরিয়ে যেত মাসের মাঝামাঝিই। তার পর সংসার চলত টেনে টুনে।
০৪২০
বিক্রান্তের বাড়ি সামনেই একটি পার্ক ছিল। সেখানে এক যুবককে প্রায়ই লম্বা ঝোলা কাঁধে বসে থাকতে দেখা যেত। পরে তাঁকেই ‘মকবুল’ ছবিতে দেখে চমকে গিয়েছিলেন বিক্রান্ত। জানতে পেরেছিলেন, নিজের জীবনের স্ট্রাগলের সময়ে ওই পার্কে বসে থাকতেন ইরফান।
০৫২০
অনেকেই জানেন না, বিক্রান্ত মডেলিং শুরু করেছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়। সেখানে তিনি অভিনয় করেছিলেন মায়ের সঙ্গে। পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ২০০ টাকা। স্কুলে নাচ এবং অভিনয়ের প্রতি আকর্ষণ দেখে শিক্ষকরা তাঁকে অভিনয় শেখার উপর জোর দিয়েছিলেন।
০৬২০
কিন্তু দশম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই বাস্তবটা ধরা পড়ল তাঁর সামনে। বাবা চাকরি করেন সামান্য বেতনে। সেই টাকায় তাঁর এবং দাদার পড়াশোনার খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। সংসারের হাল ধরতে স্থানীয় এক কফিশপে চাকরি নেন বিক্রান্ত। সেখানে তিনি কফি তৈরি, কফি সার্ভ করা থেকে শুরু করা টেবিল পরিষ্কারও করতেন।
০৭২০
উপার্জন থেকে নিজেরও একটা শখ পূর্ণ করেছিলেন বিক্রান্ত। ভর্তি হয়েছিলেন শমক দভরের নাচ শেখানোর প্রতিষ্ঠানে। তাঁর নাচের দক্ষতায় খুশি হয়ে শমক তাঁকে ৪০ জন সেরা শিক্ষার্থীর মধ্যে বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর সহকারী রূপে কাজ করার পাশাপাশি বিক্রান্ত নাচ শেখাতেন যৌনকর্মীদের সন্তানদের।
০৮২০
পড়াশোনা শেষ করে বিক্রান্ত ঠিক করেছিলেন ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্ট হবেন। পরীক্ষার প্রতিটা ধাপ পেরিয়েও গিয়েছিলেন। সে সময় একদিন হঠাৎই পাল্টে গেল জীবনের মোড়। বন্ধুর সঙ্গে গিয়েছিলেন রেস্তরাঁয়। সেখানে অপেক্ষা করছিলেন টয়লেটের সামনে কিউয়ে। তাঁকে দেখে এক প্রযোজক প্রস্তাব দেন শো-এ অংশগ্রহণের।
০৯২০
এই সময় বড় দ্বিধার মুখে পড়েন বিক্রান্ত। একদিকে তাঁর ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্টের চাকরি প্রায় হয়েই গিয়েছিল। কিন্তু অভিনয়ের প্রতি ভালবাসাও এড়াতে পারছিলেন না। শেষে তিনি মনের ডাকেই সাড়া দেন। রাজি হয়ে যান অভিনয়ের প্রস্তাবে। দৈনিক পারিশ্রমিক ছিল ৬ হাজার টাকা।
১০২০
শো-এর নাম ছিল ‘কঁহা হুঁ ম্যায়ঁ’। কিন্তু এই ধারাবাহিক কোনওদিন টিভিতে সম্প্রচারিতই হয়নি। মাঝপথেই তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আবার বন্ধ হয়ে যায় উপার্জনের পথ। বিক্রান্ত এর পর ওই প্রযোজনা সংস্থার কাছেই কাজ চান। তাঁকে সহকারী প্রযোজকের কাজ দেওয়া হয়। তাঁর কাজ ছিল অডিশন নেওয়া।
১১২০
কিন্তু একটানা অন্যদের পোর্টফোলিয়ো বাছাই করতে ভাল লাগছিল না বিক্রান্তের। তাঁর স্বপ্ন ছিল অভিনেতা হওয়ার। এর পর তিনি ঝুঁকি নিয়ে পুরো সময় দেন অভিনেতা হওয়ার পিছনেই। এনডিটিভি ইমাজিন-এ তিনি সুযোগ পান ‘ধর্মবীর’ ধারাবাহিকে ধর্মের চরিত্রে। তাঁর কাজ জনপ্রিয় হয়।
১২২০
‘বালিকা বধূ’ সিরিয়ালেও তাঁর কাজ দর্শকদের পছন্দ হয়। মাত্র দু’মাসের জন্য তিনি এই ধারাবাহিকে এসেছিলেন। কিন্তু দর্শকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে তাঁর চরিত্র থেকে যায় দু’বছর অবধি। ক্রমে ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা হয়ে ওঠেন তিনি।
১৩২০
দীর্ঘ দিন টেলিভিশনে কাজ করার পরে বিক্রান্ত ছবিতে অভিনয় করার কথা ভাবেন। তার জন্য দীর্ঘ অডিশনেও তিনি রাজি ছিলেন। ‘লুটেরা’ ছবিতে একটি পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ আছে বলে তিনি খবর পান। সেখানে প্রথমে খারিজ হওয়ার পরেও শেষ মুহূর্তে সুযোগ পান। অভিনয় করেন রণবীর সিংহের সঙ্গে, ‘দেবদাস’ চরিত্রে।
১৪২০
এর পর তাঁকে দেখা যায় ‘দিল ধড়কনে দো’ ছবিতে। অনেক তারকার মাঝেও নিজের অভিনয়ের ছাপ রেখে যান তিনি। এর পর পরিচালক অলঙ্কৃতা শ্রীবাস্তবের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। সে সময় অলঙ্কৃতা কাজ করছিলেন তাঁর ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বোরখা’ ছবিতে। এই ছবিতে তাঁর কাজ প্রশংসিত হয় সমালোচকদের কাছে।
১৫২০
এই ছবিতে কাজের সুবাদে তিনি নমিনেশন পান অ্যাওয়ার্ড ফাংশনে। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, অনুষ্ঠানে যাওয়ার আমন্ত্রণই পাননি তিনি। টেলিভিশনে অভিনয় করা বিক্রান্তকে গুরুত্ব দিত না বলিউডের তথাকথিত কুলীন সমাজ। অবশ্য বিক্রান্তের কিছু এসে যায়নি। তিনি অপেক্ষা করে থেকেছেন ভাল সুযোগের।
১৬২০
এর পর বিক্রান্ত তাঁর কেরিয়ারের সবথেকে বড় অফার পান। অভিনয়ের ডাক আসে দীপিকা পাড়ুকোনের ছবি থেকে। ‘ছপাক’-এ অভিনয় করেন বিক্রান্ত। মেঘনা গুলজারের পরিচালনায় দীপিকার মতো সুপারস্টারের পাশে অভিনয় করে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন তিনি। এর পর তাঁর সামনে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অভিনয়ের সুযোগ খুলে যায়।
১৭২০
‘মির্জাপুর’, ‘মেড ইন হেভন’, ‘ক্রিমিনাল জাস্টিস’, ‘ব্রোকেন বাট বিউটিফুল’ সিরিজে তাঁর অভিনয় চূড়ান্ত প্রশংসিত হয়। কেরিয়ারে থিতু হওয়া বিক্রান্তের জীবন বহু ওঠাপড়া দেখেছে। জীবনের কঠিন সময়ে তাঁর কাছে অন্যতম ভরসা ছিল আমির খানের প্রশংসা। ‘দিল ধড়কনে দো’ ছবিতে তাঁর অভিনয় দেখে আমিরের এত ভাল লেগেছিল তিনি ফোন করে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছিলেন বিক্রান্তের সঙ্গে।
১৮২০
অভিনয় করতে গিয়েই বিক্রান্তের আলাপ শীতল ঠাকুরের সঙ্গে। ‘ব্রোকেন বাট বিউটিফুল’ শো-এ শীতল ছিলেন তাঁর সহঅভিনেত্রী। তাঁদের সম্পর্কের বয়স পেরিয়ে গিয়েছে ৪ বছর। এনগেজমেন্ট হয়ে গেলেও এখনও বিয়ের কথা ভাবেননি দু’জনের কেউ।
১৯২০
আপাতত কেরিয়ার উপভোগ করছেন বিক্রান্ত। যে কেরিয়ার বহু কষ্টে তিল তিল করে তৈরি করেছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে বিক্রান্ত। অভিনয়ের প্রতি ভালবাসাই তাঁকে দুঃসময়ে লড়াই করার ধৈর্য দিয়েছে।
২০২০
বিক্রান্তের মতে, এখনও অবধি কেরিয়ারের সবথেকে স্মরণীয় ঘটনা বেশ অন্যরকমের। তিনি বলেছেন, এক বার বিয়ের আসর থেকে কনে ছুটে এসেছিলেন শ্যুটিং স্পটে। শুধু বিক্রান্তের সঙ্গে আলাপ করবেন বলে। বিয়েবাড়ির কাছেই সে সময় চলছিল বিক্রান্তের শ্যুটিং। খবর পেয়ে ছুটেছিলেন তাঁর অনুরাগিণী।