শক্তি ঠাকুর
চলে গেলেন গায়ক-অভিনেতা শক্তি ঠাকুর। সত্তর-আশি দশক এবং নব্বইয়ের গোড়ার দিকের জনপ্রিয় এই শিল্পী রবিবার রাতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। বছর কয়েক আগে সেরিব্রাল অ্যাটাকের পর থেকেই শারীরিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। দৃষ্টি ও স্মৃতিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসে। রবিবার রাতে শ্বাসকষ্ট হলে তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। সোমবার সকালে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন বড় মেয়ে মেহুলি গোস্বামী ঠাকুর। ছোট মেয়ে মোনালি ঠাকুর বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে রওনা হয়েছেন সুইৎজ়ারল্যান্ড থেকে।
শক্তিপ্রসন্ন দাস ঠাকুরের জন্ম দেশের স্বাধীনতা-বর্ষে। ও পার বাংলা থেকে এসে মসলন্দপুরে থাকতে শুরু করে ঠাকুর পরিবার। শক্তি ঠাকুরের প্রথম জীবন কেটেছে শিক্ষকতা করে। নেতাজিনগর স্কুলে কেমিস্ট্রি পড়াতেন তিনি। শখ ছিল গানবাজনা ও অভিনয়ের। শক্তি ঠাকুরের বাড়িতে গিয়ে গান শেখাতেন অখিলবন্ধু ঘোষ। যৌবনে গণনাট্য আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন শক্তি। অভিনয় করেছেন উৎপল দত্তের সঙ্গেও। বড় মেয়ে মেহুলির বয়স তখন চার-পাঁচ বছর। স্মৃতি হাতড়ে বললেন, ‘‘একবার বাবার হাত ধরে উৎপল দত্তের বাড়ি গিয়েছিলাম, রিহার্সাল চলছিল। দেওয়ালে টাঙানো লেনিনের বিশাল ছবি এখনও মনে আছে। সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে বাবাকে পাঠানো হয়েছিল কিউবায়, ইউথ ফেস্টিভ্যালে যোগ দিতে। ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে ছবিও ছিল বাবার। এ দেশ থেকে ভূপেন হাজারিকা আর বাবা গিয়েছিলেন হাভানায়।’’
পারফর্মার হিসেবে তো বটেই, শিক্ষক হিসেবেও জনপ্রিয় ছিলেন শক্তি। ছাত্রদের নিয়ে প্রায়ই মঞ্চাভিনয়ের আয়োজন করতেন। খেলাধুলোতেও ছিলেন দড়। তবে একটা সময়ে শিক্ষকতার পরিবর্তে গানবাজনাই মুখ্য হয়ে উঠল। ‘হারমোনিয়ম’ ছবিতে তাঁকে প্রথম গাওয়ার সুযোগ দিলেন তপন সিংহ। পরবর্তী কালে ‘দাদার কীর্তি’, ‘দামু’, ‘বিষবৃক্ষ’র মতো ছবিতে গান গেয়েছেন। লাইভ স্টেজ শো করায় অপ্রতিরোধ্য ছিলেন শক্তি। এক দিনে ছ’টা শো-ও করেছেন এক সময়ে। তাঁর কণ্ঠে ‘ও সাধের নদী’, ‘খোকাখুকু ছুটে এসো’, ‘ওগো সুন্দরী’, ‘বাসব ভাল রাখব ভরে’, ‘আমি ইতিহাস হতে চাই’-এর মতো গান ছিল ‘হিট’। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ভূপেন হাজারিকার সুরে তাঁর অসংখ্য বেসিক গানও জনপ্রিয় হয়েছিল সে সময়ে। আকাশবাণীতে ‘এ মাসের গান’-এ প্রায়ই শোনা যেত শক্তি ঠাকুরের মৌলিক গান। তবে ক্যামেরার সামনে অভিনয়কে কোনও দিনই সিরিয়াসলি নেননি তাঁর বাবা, জানালেন মেহুলি। পার্শ্বচরিত্র, কমেডিয়ান হিসেবে তাঁকে দেখা গিয়েছে বেশি। ‘‘বাবা অনেক বেশি সাবলীল ছিলেন মঞ্চে। গানের জলসা ছাড়াও তরুণকুমার, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে ‘কল্পতরু’ নাট্যদলে অভিনয় করতেন, গাইতেন ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়্যারেও। কত কিছু যে একসঙ্গে করেছেন,’’ বললেন মেহুলি। জানালেন, ছোট মেয়ের সাফল্যে গর্বিত ছিলেন তাঁদের বাবা। বলতেন, ‘আমি যা পারিনি, তা মোনালি করে দেখিয়ে দিল।’ বাবাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন মোনালি। আগামিকাল দেশে ফিরছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy