Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Celebrity

২৭ বছরের ছেলের সঙ্গে প্রেম আমার হবে না, ১৪ বছরের বড় স্বর্ণেন্দুই আমার বর: শ্রুতি

এক বছরে পড়ল ‘নয়ন’ শ্রুতি দাস এবং ওই ধারাবাহিকেরই পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দারের প্রেম। ১৪ বছরের বড় পরিচালককে নিজে থেকেই প্রেম প্রস্তাব দিয়েছিলেন শ্রুতি।

১৪ বছরের বড় পরিচালককে নিজে থেকেই প্রেম প্রস্তাব দিয়েছিলেন শ্রুতি।

১৪ বছরের বড় পরিচালককে নিজে থেকেই প্রেম প্রস্তাব দিয়েছিলেন শ্রুতি।

বিহঙ্গী বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১১:৩৫
Share: Save:

ভরতলক্ষ্মী স্টুডিয়ো। ‘ত্রিনয়নী’র শুটিং চলছে। পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার মন দিয়ে শট বোঝাচ্ছেন। কাটোয়ার মেয়েটা আড়চোখে এক বার দেখে নিল পরিচালককে। মনে ধুকপুক, মুখে হাসি খেলে যাচ্ছে। ও দিকে পরিচালকের কোনও হুঁশ নেই... তার পর?

এক বছরে পড়ল ‘নয়ন’ শ্রুতি দাস এবং ওই ধারাবাহিকেরই পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দারের প্রেম। ১৪ বছরের বড় পরিচালককে নিজে থেকেই প্রেম প্রস্তাব দিয়েছিলেন শ্রুতি। স্বর্ণেন্দুর প্রথম দিকে শ্রুতিকে একেবারেই ‘পোষাত না’। ভালবাসার এক বছরে এই প্রথম বার নিজেদের প্রেমের জার্নি নিয়ে মুখ খুললেন ওই নায়িকা-পরিচালক জুটি। আনন্দবাজার ডিজিটাল জেনে নিল তাঁদের সব ‘গোপন’ কথার রঙিন ইজহার।

‘কাছে গিয়ে বললাম, দেখো স্বর্ণেন্দুদা তুমি অন্যান্য মেয়েদের সঙ্গে কথা বললে আমার খুব রাগ হয়, বুঝলে?’

আজ ওরা নস্টালজিক। ধারাবাহিকের এপিসোডের মতো ভেসে আসছে একের পর এক ছবি। মনে পড়ে যাচ্ছে সেই প্রথম দিনের কথা। ২০১৯ এর জানুয়ারি। প্রথম বার ছোট পর্দায় বড় ব্রেক পেলেন শ্রুতি। চরিত্রের নাম নয়ন। ধারবাহিকের নাম ‘ত্রিনয়নী’। পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার। শুরু হল শুটিং। ও দিকে স্বর্ণেন্দুর মেয়েটিকে এতটুকু পছন্দ নয়। তাঁর (শ্রুতির) নাকি বিশাল ‘অ্যাটিটিউড’। এমনি করেই চলছিল।

একসঙ্গে

কিন্তু মে’মাস আসতেই ধারবাহিকের মতোই ‘কহানি মে টুইস্ট’। হঠাৎই বছর ২৪-এর মেয়েটার মন উথালপাথাল। চোখ জুড়ে স্বর্ণেন্দু। কী মুশকিল রে বাবা! প্রেম নাকি। এমনি করেই ওই মাসটা কেটে গেল। জুন আসতেই নিজেকে আটকে রাখা দায়! সোজাসাপ্টা কথা বলায় অভ্যস্ত শ্রুতি আর কিছু না ভেবেই সটান পরিচালকে সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। চোখে চোখ রেখে বলে ফেললেন, “শোনো, তুমি অন্যান্য মেয়েদের সঙ্গে কথা বললে খুব রাগ হয়। আমার এই রাগটার কারণ আমি বুঝতে পেরে গিয়েছি। তুমিও যত তাড়াতাড়ি বুঝে যাবে ততই মঙ্গল।“

‘পাত্তা দিচ্ছ না তো, বেশ দাদাই বলব তবে’

ভাবছেন তো, এর পর যা হয়... সুন্দরী নায়িকার প্রেম প্রস্তাব...পরিচালক গলে জল, বিগলিত চিত্তে কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে ফেলবে, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমিও তো তোমাকে সেই কবে থেকে...”। না, সে সব কিছুই হয়নি। উল্টে স্বর্ণেন্দু পরিষ্কার গলায় শ্রুতিকে বলে দিলেন, “দ্যাখ, তোর বয়স কম। এই বয়সে এমন একটু হয়। এটাকে মোহ বলে। কয়েক দিন পর ঠিক কেটে যাবে”।

কিন্তু মেয়ে তো নাছড়বান্দা। জুলাই মাস কেটে গেল। চলে এল অগস্ট। কিন্তু পরিচালকের কোনও হুঁশ নেই। শ্রুতির কথায়, “বিরক্ত হয়ে এ বার বলে ফেললাম, দেখো ভাই, হ্যাঁ বললে বল, আমার কাছে অপশন নেই এমন তো নয়। পিছনে পড়ে আছি, ভালবাসি তাই...তুমি পাত্তা না দিলে ঠিকাছে, আবার ওই দাদাই বলব”। ও দিকে পরিচালকের মনেও যে ততদিনে ফাগের রঙ লেগেছে! তা বুঝেই উঠতে পারেননি শ্রুতি। স্বর্ণেন্দু উত্তরে বলেছিলেন, “তোর জন্মদিন আসছে না সেপ্টেম্বরে। ওই দিনই যা বলার বলব”।

‘শ্রুতি শোন, আই লাভ ইউ টু...’

সেপ্টেম্বর অবধি আর অপেক্ষা করাননি স্বর্ণেন্দু। আউটডোরে শুটে গিয়েই পাশা গেল উল্টে। সিনেমা নয়, তবে ঠিক যেন ‘সিনেমার মতো’। কাজ পাগল মানুষটার সাইনাসের ব্যাথায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলেন। শ্রুতি যত্ন করে মলম লাগিয়ে দিচ্ছিলেন কপালে। হয়ে গেলে বেরিয়েই যাচ্ছিলেন ঘর থেকে, ঠিক তখনই পিছু ডাক। “শ্রুতি শোন...”, ‘হ্যাঁ বল দাদা বলো?”, “হ্যাঁ মানে বলছিলাম যে, ইয়েস, আই লাভ ইউ টু...”, কিউপিডে ঘায়েল পরিচালক। শুরু নায়িকা-পরিচালকের প্রেম।

‘যেমন নাচে, তেমন গায়, তেমন অভিনয়, এত গুণী একজন মেয়েকে ভাল না বেসে থাকা যায়?’

একটা ‘হ্যাঁ’ বলতে এত দিন নিয়ে নিলেন? পরিচালকের দিকে এই প্রশ্ন ছুড়ে দিতেই হেসে উঠলেন স্বর্ণেন্দু। “প্রথম দিকে এক দম ভাল লাগত না যে। মনে হত কী অ্যাটিটিউড। পরে বুঝলাম অ্যাটিটিউড না। চুপ চাপ থাকে। লোকে ভুল বোঝে তাই। যাকে ভালবাসে তাঁর জন্য সব কিছু করতে পারে,” বললেন পরিচালক। একটু থেমে আবার বলা শুরু করলেন, “সত্যি কথা বলব, “আমার যে ওকে একেবারেই ভাল লাগত না এমনটা নয় কিন্তু। একটা মেয়ে ভাল অভিনয় করে, গান করে , নাচ করে, আর কী আগ্রহ সব ব্যাপারে...আমি মুগ্ধ হয়ে যেতাম। প্রাণপাত করে সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে শিখত। এমন একটা মেয়েকে ভাল না বেসে থাকা যায়?” স্বর্ণেন্দুর গলায় অনুরাগের ছোঁয়া।

প্রথম দিকে ইউনিটের মেম্বার তো দূরের কথা, কাকপক্ষীকেও টের পেতে দেননি ওরা। শ্রুতি বলছিলেন, “এমনও হয়েছে আমরা হয়তো সাউথ সিটিতে দেখা করব। কিন্তু দু’জনে বেরিয়েছি আলাদা সময়ে, আলাদা গাড়িতে। তবে সবাই বুঝতে পেরে গিয়েছিল ধীরে ধীরে।“

‘গৌরবকে শ্রীমাকে নিয়ে খেপাতাম আমি, আর গৌরব আমায় স্বর্ণকে নিয়ে’

‘ত্রিনয়নী’তে শ্রুতির বিপরীতে ছিলেন গৌরব। শ্রুতি বলছিলেন, তাঁর আর স্বর্ণেন্দুর প্রেমটা সবার আগে বুঝে গিয়েছিলেন গৌরবই। ও দিকে আবার সে সময় গৌরবেরও শ্রীমা’র সঙ্গে পুরোদস্তুর প্রেম। শ্রুতি শ্রীমাকে নিয়ে গৌরবকে খেপাচ্ছেন আর ও দিকে গৌরবও ছাড়বার পাত্র নয়। শ্রুতির কথায়, “হয়তো বললাম, শরীরটা না ভাল লাগছে না। গৌরব অমনি বলত, ওই যে মনিটরটার সামনে দিয়ে ঘুরে আয়। দেখবি খুব ভাল লাগবে।“ এমনি করেই চলছিল। অবশেষে সময় এল বাড়িতে জানাবার। প্রথম দিকেই যে সবাই খুব হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলেন এমনটা নয়, জানালেন শ্রুতি।

শ্রুতি জানালেন তাঁর মা প্রথম থেকেই বুঝতে পেরে গিয়েছিলেন, বাবাকে এক দিন বলছেন, ‘ও সব দাদা-টাদা কিচ্ছু না। কিছু একটা ব্যাপার রয়েছে।‘

শ্রুতি যোগ করলেন, " মা মানতে চায়নি প্রথমে, মা-র বক্তব্য ছিল আমাদের মধ্যেকার এজ গ্যাপটা। বাবা শুধু বলেছিল, তাকেই ভালবাসবি যাকে আমার সামনে দাঁড় করাতে পারবি”। স্বর্ণেন্দু অবশ্য সেই পরীক্ষায় একবারেই পাস করেছিলেন। তাঁকে দেখেই শ্রুতির বাবা জানিয়ে দিয়েছিলেন, “জামাই পছন্দ”। ধীরে ধীরে মা-ও রাজি।

আর স্বর্ণেন্দু পরিবারের লোকেরা? হাসতে হাসতে শ্রুতি বললেন, “ভাগ্যিস তুই এসেছিলি। আমার ছেলেটা তো ধীরে ধীরে সন্ন্যাসী হয়ে যাচ্ছিল।

‘হ্যাঁ, ও আমার থেকে ১৪ বছরের বড়। তো? আপনাদের বাবাকে তো আর বিয়ে করছি না!’

এত সবের মধ্যেই সেলিব্রিটিদের নিত্যসঙ্গী কিন্তু ‘ট্রোলিং’ কিন্তু ওদের পিছু ছাড়েনি। ইন্ডাস্ট্রির ভেতরে-বাইরে, সামনে-পিছনে শ্রুতিকে শুনতে হয় , “বাবার বয়সী একটা লোকের সঙ্গে প্রেম করছে...”। দপ করে জ্বলে উঠলেন শ্রুতি। “ হ্যাঁ, আমার থেকে ১৪ বছরের বড় স্বর্ণ। সমস্যাটা কোথায় ওদের? আমার মা-বাবার বয়সের ফারাক দশ বছরের। খারাপ আছে ওরা? নেই তো! তা হলে? ওর মতো ভালবাসতে কেউ পারবে আমায়! কেউ এমন করে বুঝবে? কেউ এ ভাবে আদরে রাখবে? হবে না, ওই ২৭ বছরের ছেলের সঙ্গে প্রেম আমার হবে না। শ্রুতি দাসকে ডিল করতেই পারবে না তাঁরা। আরে ভাই আপনাদের বাবাকে তো আর বিয়ে করছি না। আমার বর আমি বুঝব”, এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে গেলেন শ্রুতি। অজান্তে যে কখন স্বর্ণেন্দুকে ‘বর’ বলে ফেলেছেন খেয়ালই হয়তো হল না তাঁর। গলাটা কি হাল্কা কেঁপে গেল তাঁর?

‘শ্রুতি খুব জেদি’: ‘টিভি আমার সতিন’

সবই তো ভাল ভাল বলে গেলেন দু’জন দু’জনের সম্পর্কে। খারাপ কিচ্ছু নেই?

একচোট হাসলেন দু’জনেই। শুরু করলেন শ্রুতিই। “খারাপ জিনিস বলব না। তবে স্বর্ণ না বাম বাতিকগ্রস্ত”। সেটা আবার কী? “ওর তো সাইনাসের সমস্যা আছে। তাই সারাক্ষণ মাথায় বাম ঘষছে। ও সামনে এলে বামের গন্ধ বেরয়। মানে যদি দরকার নাও হয় একটু ঘষে নিল”, বলেই হেসে ফেললেন শ্রুতি। “ও দাঁড়ান, আর একটা জিনিস খুব খারাপ ওর। টিভি দেখতে কী যে ভালবাসে। বিরক্ত লাগে। কোথাও যাচ্ছি ধরুন। সামনে টিভি থাকলে দেখতে দাঁড়িয়ে পড়ে। এমনটা দেখেছেন কখনও। আমি তো ওকে বলি এই টিভিই আমার সতিন। বিয়ের পর আমাদের ঘরে টিভি থাকলে দূর করে দেব আমি”, যোগ করলেন নায়িকা। অন্যদিকে আদরের ‘বাবি’র খারাপ কিছুই চোখে পড়ল না স্বর্ণেন্দুর। অনেক ভেবে চিন্তে বললেন, “হ্যাঁ। একটা পেয়েছি। খুব রাগী। খুউউউউব। রাগ পড়েও যায় সহজে। কিন্তু রেগে গেলে কোনও হুঁশ থাকে না। ওরে বাবা… !“

আজ শ্রুতির জন্মদিন। একই সঙ্গে ভালবাসারও এক বছর পার। সারাদিন অনেক প্ল্যান রয়েছে তাঁর। দুপুরে মায়ের হাতের রান্না। সন্ধে বেলায় দুই পরিবারের সঙ্গে ডিনার। পরের জন্মদিনটা কি শ্বশুরবাড়িতে পালন হবে? হেসে বললেন, “বিয়ে তো করবই। তবে এখনও বছর দুয়েক পর। গাড়ির শখ নেই আমার। একটা বাড়ির শখ আছে। বাবা-মায়ের নামে একটা বাড়ি হবে। আমি কিনে দেব। এই শখ পূরণ না করে বিয়ে কী করে করি বলুন?” স্বর্ণেন্দুর কোনও তাড়া নেই। তিনি জানেন, শ্রুতি আছে, থাকবে… এক বছর কেটেছে। ভরসা, বিশ্বাস আর ভালবাসায় কাটিয়ে দেবেন আগামি দিনগুলোও…

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy