নতুন ছবি ‘চালচিত্র’, আলিয়া ভট্ট ও কর্ণ জোহরকে নিয়ে কী বললেন টোটা রায়চৌধুরী? ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: পুষ্পরাগ কি হারিয়ে গেল?
টোটা: একেবারেই না। আমার পরিবারে পুষ্পরাগ বলেই জানে সকলে। পুষ্পরাগ নামটা সুন্দর হলেও তা আমজনতার কাছে এক লহমায় কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, এই ভেবে নাম বদলে হয় টোটা রায়চৌধুরী। যে কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, আমার মধ্যে কোনও দিক থেকেই পরিবর্তন আসেনি।
প্রশ্ন: কিন্তু শরীরচর্চা আর জীবনযাত্রায় তো পরিবর্তন এসেছে?
টোটা: সেটা তো করতেই হবে। ভোর পাঁচটায় উঠি। শরীরচর্চা ছাড়া দিন কাটে না আমার। কোনও পার্টিতে যাই না। রাত জাগি না, বাইরের খাবার খাই না। তবে শুধু শরীরচর্চা নয়। খাওয়ার প্রতি ভালবাসা কমাতে হবে।
প্রশ্ন: শুধু কফি খান, তা-ও আবার ঠাণ্ডা…
টোটা: এটা আমার অসুবিধে। আমি গরম কফি খেতে পারি না।
প্রশ্ন: কফি আর টোটার প্রসঙ্গ যখন উঠল, তখন ‘কফি উইথ কর্ণ জোহর’-এর কথা তো উঠবেই…
টোটা: দারুণ মানুষ জানেন! আমি বুঝতে পারি না, এমন একজন মানুষকে কেন লোকে ভুল বুঝে মন্তব্য করে। আসলে কর্ণ কারও বিষয়ে কোনও বিরূপ মন্তব্য করেননি। কারও প্রশ্নের জবাবও দেন না। উনি এমন একজন পরিচালক, যিনি মাথা দিয়ে কাজ করেন না, হৃদয় দিয়ে কাজ করেন। ওঁর যদি কাউকে দেখে মনে হয় এই চরিত্রে অমুক মানুষকে নেবেন, উনি সঙ্গে সঙ্গে তা-ই করবেন।
প্রশ্ন: আপনাকেও কী সে ভাবেই…
টোটা: না, আমি অডিশন দিয়েছিলাম। সেই ছোট্ট ভিডিয়ো ক্লিপ দেখেই উনি আমাকে সরাসরি সেটে ডেকে নিলেন। আমি তো অবাক! আমার মনে আছে আমি ওঁকে বলেছিলাম, “আমি কিন্তু ধারাবাহিকে অভিনয় করি। আমি ধারাবাহিকের অভিনেতা।’’ শুনে এখানকার লোকেদের মতো নাক সিঁটকাননি। কিন্তু, উল্টে বলেছেন আমি যা-ই করি, ওঁর ‘রকি অউর রানি’তে আমাকে আলিয়ার বাবা হতে হবে।
প্রশ্ন: আলিয়া কেমন?
টোটা: কাজ নিয়ে মত্ত। ও বিশেষ কেউ, বিরাট তারকা এমন কোনও হাবভাব নেই। এমন হয়েছে আমি, ধরমজি, চূর্ণী, রণবীর, শাবানাজি সকলে কাজের ফাঁকে চেয়ারে বসে গল্প করছি, আলিয়ার চেয়ার নেই। ও কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র বিরক্তি প্রকাশ করল না। আমি উঠে দাঁড়াতে গেলে আমাকে বসিয়ে দিল। সেটে উঁচু একটা জায়গা ছিল, সেখানে বসে দিব্যি পা দুলিয়ে গল্প জুড়ে দিল। আমাদের এখানে তেমন নামী কেউ হলে বসার জায়গা নেই বলে ঝামেলা শুরু করে দিত। তবে একটা বিষয় বলি?
প্রশ্ন: বলুন না…
টোটা: মুম্বইয়ের খ্যাতনামীরা কেউই নিজেদের ব্যাক্তিজীবনের গল্প করেন না। কোথায় বেড়াতে গেলেন? কোন বিলাসবহুল হোটেলে থাকলেন, কোন ব্র্যান্ডের পোশাক পরলেন… এ সব কিচ্ছু না। বরং ছবি নিয়ে, ওটিটি নিয়ে আলোচনা হয়। কাজের কথা বলা হয়।
প্রশ্ন: রণবীর সিংহের সঙ্গে নাচের দৃশ্য কেমন লেগেছিল?
টোটা: এখনও পর্যন্ত আমার জীবনের সেরা ‘সিনেম্যাটিক জার্নি’। রণবীর সিংহ হলেন ‘মেথড অ্যাক্টর’।
প্রশ্ন: টোটা-রণবীরের মতো এখন তো টোটা-শান্তনু ঝড়…
টোটা: এখন তো বাংলা ছবির দর্শক সকলেই জানেন, প্রতিম ডি’গুপ্ত পরিচালিত ‘চালচিত্র’ ছবিটি মুক্তির অপেক্ষায়। ছবিতে একটি বিশেষ প্রচারমূলক গানে দর্শক আমাকে এবং শান্তনুকে একসঙ্গে নাচতে দেখবেন। ঊষা উত্থুপ এই গান গেয়েছেন। নাচ তো আমার প্রথম ভালবাসা। মনে আছে প্রভাতদা (পরিচালক প্রভাত রায়) একবার জানতে চেয়েছিলেন, আমি নাচতে পারি কি না। তার পর তাঁকে একটা অনুষ্ঠানে আমার নাচের একটা ভিএইচএস ক্যাসেট পাঠাই। উনি তা দেখে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন করেন। আমি যে ব্রেকডান্সও করতে পারি, সেটা অনেকেই জানে না।
প্রশ্ন: প্রতিমের ‘চালচিত্র’ ছবিতে আপনি তো পুলিশ আধিকারিকের চরিত্রে অভিনয় করছেন…
টোটা: আমি, অনির্বাণ, শান্তনু ও ইন্দ্রজিৎ কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের চার পুলিশের ভূমিকায় অভিনয় করছি। এই পুলিশ টিমের নেতৃত্বে আমি। প্রতিমের ছবিতে বরাবরই মনস্তত্ত্ব বিষয়টি উঠে আসে। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। শহর কলকাতায় ঘটে যাওয়া পর পর কয়েকটি খুনের ঘটনাকে ছবির কাহিনি হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে, যার কেন্দ্রে মহিলারা। প্রতিম আসলে নিজের মনের মতো ছবি করে। ওর নিজস্ব পড়াশোনা রয়েছে। কোনও ফর্মুলায় নিজেকে বাঁধেনি।
প্রশ্ন: আপনিও তো জীবনে বাঁধা গতে চলেননি?
টোটা: কখনও পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দিতে চাইনি। ভেবেছিলাম সেনাবাহিনীতে যোগ দেব। কলেজে পড়তে পড়তেই চলছিল প্রস্তুতি। ঈশ্বর অন্য কিছু ভেবেছিলেন। কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ চলাকালীন আমাকে একটি চরিত্রের জন্য পছন্দ করেন পরিচালক প্রভাত রায়। ‘দুরন্ত প্রেম’ ছবিতে মিস জোজোর বিপরীতে অভিনয় করি। সেখান থেকেই অভিনয়ের সফর শুরু।
প্রশ্ন: মনে হয়নি ওই সময় কেবল প্রসেনজিতের ভাই সেজেই অভিনয় করে যেতে হল, নায়ক হলেন না?
টোটা: তখন অল্প বয়স ছিল, খারাপ লাগত। এখন লাগে না। এত দূর চলে এসে মনে হয় আমি অঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করেছি, আবার ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গেও। কর্ণ জোহর তো বললামই।
প্রশ্ন: আর নীরজ পাণ্ডে?
টোটা: ওটা এখন বেশি বলা যাবে না। তবে আরও একটা কথা বলা দরকার, ধারাবাহিকও কিন্তু আমাকে অনেক এগিয়ে দিয়েছে।
প্রশ্ন: ‘শ্রীময়ী’র রোহিত সেন?
টোটা: অবশ্যই। কত মানুষ যোগাযোগ করতেন। ওই চরিত্রের কথা বলতেন। লীনাদির লেখাতেও চরিত্র জীবন্ত হয়ে উঠেছিল। আসলে ধারাবাহিক থেকে আরও অভিনেতাদের ছবিতে কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি। ধারবাহিকের অভিনেতারা নিয়মিত অভিনয় চর্চা করে। তাই তাদের ছবিতে নিলে তারা ভাল কাজ করবে। কত নতুন মুখ দেখি, বাংলা ছবিতে তাদের সুযোগ দেওয়া উচিত।
প্রশ্ন: আপনার অজস্র মহিলা ভক্ত, কী ভাবে সামলান?
টোটা: কথা শুনি। তাদের ভাল লাগাকে সম্মান করি। ওই পর্যন্ত।
প্রশ্ন: এত বছরে স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনও মহিলাকে ভাল লাগেনি?
টোটা: ভাল লাগা চোখ পর্যন্ত এসে থেমে গিয়েছে। আর ভালবাসা সেই মেয়েকে, যার সঙ্গে কলেজ থেকে প্রেম করেছি। বিয়ে করেছি। তিনিই একমাত্র আমার হৃদয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy