টোটা রায়চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক।
দৃশ্য এক: বাংলা বিনোদন দুনিয়ার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকেরই উপলব্ধি, বাংলা ছবি ক্রমশ বুঝি পিছু হঠছে। সম্প্রতি, অগস্ট মাসে আরজি কর-কাণ্ড সেই দিকটি আরও এক বার সামনে এনেছে। এক দিকে নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসকের খুনের ঘটনা। অন্য দিকে স্বাধীনতা দিবস। এমন আবহে মুক্তি পায় সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘পদাতিক’, রাজ চক্রবর্তীর ‘বাবলি’, অমর কৌশিকের হিন্দি ছবি ‘স্ত্রী ২’। তৃতীয় ছবিটি শহর কলকাতায় ২২ কোটিরও বেশি ব্যবসা করেছে।
দৃশ্য দুই: দুবাইয়ের রাজধানী আবু ধাবিতে এক পুরস্কার বিতরণীর আসর। কর্ণ জোহরের ‘রকি ঔর রানি কি প্রেম কহানি’ ছবিতে অভিনয়ের দৌলতে ‘সেরা সহ-অভিনেতা’র মনোনয়ন পেয়েছিলেন টোটা রায়চৌধুরী। বিদেশ বিভূঁইয়ে আয়োজিত উদ্যাপনে প্রেস কর্নারে মুম্বইয়ের এক বাঙালি মহিলা সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন তাঁকে, উদ্যোক্তাদের আয়োজনে দক্ষিণের চারটি ইন্ডাস্ট্রি জায়গা করে নিয়েছে। অথচ, একটা সময় হিন্দি ছবির দুনিয়াকে পথ দেখিয়েছিল বাংলা ছবির দুনিয়া। সেই পথে হেঁটে বলিউড বহু দূর এগিয়ে গিয়েছে। বাংলা বিনোদন দুনিয়াকে নিয়ে বিদেশে এ রকম কোনও পুরস্কার মঞ্চ আজও দেখা যায় না। আফসোস হয় টোটার?
প্রশ্ন শুনে বাকি সাংবাদিক-সহ উপস্থিত প্রত্যেকের নজর কর্ণের ‘চন্দন চট্টোপাধ্যায়’-এর দিকে। উত্তর দেওয়ার আগে দ্বিধায় ভুগেছিলেন তিনি? টোটা বলেছেন, “সকলের নজর আমার দিকে। নিজেকে সামলে, ঠান্ডা মাথায় জানিয়েছিলাম, বলিউডের অগ্রগতি বাংলাকে অনুপ্রাণিত করে। টলিউডের হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার জন্য প্রত্যেকে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।” এই উত্তরে নিজে কতটা সন্তুষ্ট অভিনেতা?
না, এই উত্তর তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। অনুষ্ঠান ফুরিয়েছে। টোটাকে সাংবাদিকের করা প্রশ্ন তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। তিনি নিজের মনে নতুন করে উত্তর খুঁজেছেন। উত্তর খুঁজতে গিয়ে তাঁর যা মনে হয়েছে তা তিনি পোস্ট করেছেন সমাজমাধ্যমে। তাতে লেখা, “সত্যিই তো, একটা সময় আমরাই পথপ্রদর্শক ছিলাম। রায়, সেন, ঘটকদের কথা ছেড়েই দিলাম। অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের ‘নিশিপদ্ম’ (অমর প্রেম) বা অগ্রদূতের ‘ছদ্মবেশী’ ('চুপকে চুপকে')-র মতো অনেক বাংলা ছবির হিন্দি রিমেক এক সময়ে ভারত কাঁপিয়ে ব্যবসা করেছে। এক দশক আগেও ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবিগুলো বহু ভাষাভাষী দর্শক দেখতেন। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করতেন। কোথায় আমাদের ত্রুটিবিচ্যুতি হল বা কী করলে হারানো জায়গা ফিরে পেতে পারি— তা নিয়ে আত্মবিশ্লেষণ ও আত্মসমালোচনা আশু প্রয়োজন। কবে ঘি খেয়েছি বা ঘি চপচপে পোলাও বিতরণ করেছি, সেটা বারংবার বমন করে বাকিদের বিরক্তির ও করুণার পাত্র হয়ে এক ইঞ্চিও অগ্রগতি হবে না।”
তাঁর আরও মত, গত ১০-১২ বছরে বাঙালি যেন চিন্তাধারায়, মানসিকতায় ও কর্মে খুবই ক্ষুদ্র ও সঙ্কীর্ণ হয়ে উঠেছে। সমস্যার গভীরে পৌঁছে টোটা সমাধানও খুঁজে পেয়েছেন। তিনি বুঝেছেন, সেটা করতে গেলে প্রথমেই ঈর্ষা ত্যাগ করতে হবে। স্বীকার করে নিতে হবে, প্রতিযোগীর কাজ তুলনায় উচ্চমানের। তার পরে উন্নতিসাধনে প্রতিনিয়ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা।
টোটার উপলব্ধি, “আমাদের পূর্বসূরিদের হয়তো তাঁদের কিছু উত্তরসূরিদের মতো বিদেশি গাড়ি, ঘড়ি, সুগন্ধী, পোশাক, বিদেশে বেড়ানো, বহুতলে দক্ষিণখোলা ঘর ছিল না। কিন্তু তাঁরা মনখোলা, প্রাণখোলা ছিলেন বলে মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করতেন। আর আমরাও তাই তাঁদের মনেপ্রাণে স্থান দিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy