Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Tollywood

নেটমাধ্যমে তারকা প্রার্থীদের ব্যক্তিগত নম্বর ছড়িয়ে দেওয়া কি একপ্রকার হেনস্থা নয়?

এই তালিকা প্রকাশ করা কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?

যশ- শ্রাবন্তী-রাজ-জুন

যশ- শ্রাবন্তী-রাজ-জুন

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৫২
Share: Save:

সোশ্যাল মিডিয়া আশীর্বাদ, অভিশাপও ক্ষেত্রবিশেষে। এ বছরের বিধানসভা নির্বাচনের তারকাপ্রার্থীরা হয়তো এখন তেমনটাই ভাবছেন। নির্বাচনের আগে তৃণমূল এবং বিজেপিতে টলিউডের একাধিক শিল্পী যোগদান করেছেন। তারকাপ্রার্থীদের জনপ্রতিনিধি হয়ে ওঠার যোগ্যতা, তাঁদের রাজনৈতিক বোধ, দূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের কার্যকলাপের চুলচেরা বিশ্লেষণে ফাঁক রাখেননি সাধারণ মানুষ থেকে সেলেব্রিটিদের একাংশ। কিন্তু অনুমতি না নিয়ে প্রার্থীদের ফোন-নম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করায় কি তাঁদের ব্যক্তিগত পরিসর লঙ্ঘিত হয় না? সোমবার সকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল তাবড় নেতাদের সঙ্গে বিজেপি ও তৃণমূলের একাধিক তারকাপ্রার্থীর ব্যক্তিগত নম্বর। এই তালিকা প্রকাশ করা কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত? কারণ, ওই তালিকায় দেওয়া হয়নি বাম সমর্থিত সংযুক্ত মোর্চার কোনও প্রার্থীর নম্বর।

পরিচালক ইন্দ্রাশিস আচার্য ফেসবুকে ওই তালিকা শেয়ার করে পোস্ট করেছেন, ‘‘যাঁরা মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়ে করে উঠতে পারছিলেন না, তাঁদের যোগাযোগের ডিটেলস সব জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হোক।’’ ইন্দ্রাশিসের পোস্টটি ব্যঙ্গাত্মক। বিরূপ মন্তব্যের জেরে ওই তালিকা পরে তিনি পোস্ট থেকে সরিয়ে দেন। ইন্দ্রাশিসের পোস্টে শ্রীলেখা মিত্রের মন্তব্য, ‘‘কাজটি করার জন্য উদ্গ্রীব ছিলাম।’’ এই আচরণে আদতে কি বাংলা ইন্ডাস্ট্রির হীনম্মন্যতাই প্রকট হয়ে ওঠে না?

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভাবে নম্বর ছড়িয়ে দিলে, ওই প্রার্থীরা যে হেনস্থার মুখে পড়বেন, তা অনুমেয়। তবে খেলা যতটাই ‘অসুস্থ’ হোক, মাঠ ছাড়তে নারাজ প্রার্থীরা। মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া বললেন, ‘‘রবিবার রাত থেকেই ফোনের বন্যা। তার সঙ্গে অশালীন মেসেজ। কিন্তু আমি ফোন নম্বর পাল্টাব না। রাজনীতিতে থাকলে এমন ঝক্কি যে পোহাতে হবে, তা জেনেই এসেছি। যাঁরা ফোন করছেন, তাঁরাও কত দিন এই ধৈর্য দেখান, আমি দেখতে চাই।’’ চণ্ডীতলার বিজেপি প্রার্থী যশ দাশগুপ্ত বললেন, ‘‘এখনও ফোন নাগাড়ে বেজেই চলেছে। যে ফোনগুলি পেয়েছি, বেশির ভাগই কাজের নয়। তাঁরা অভিনেতা যশের সম্পর্কে জানতে চান। কারও যদি অক্সিজেন বা হাসপাতালে বেডের দরকার হয়, সেই কাজের ফোনগুলি এখন আমার ম্যানেজারকে স্ক্রিনিং করতে হচ্ছে। এ ভাবে যাঁরা আমাদের নম্বর ছড়িয়ে দিয়েছেন, তাঁরা চান না আমরা আসলে কাজটা করি।’’ সোমবার আসানসোল দক্ষিণে ভোট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন সায়নী ঘোষ। কিন্তু তিনিও রেহাই পাননি ফোন-সন্ত্রাস থেকে। ‘‘যাঁরা এটা করেছেন, তাঁরা খুবই নিম্ন মানসিকতার মানুষ। পরে আমি সাইবার সেলে অভিযোগ জানাব,’’ বলেছেন তিনি। অতিষ্ঠ হয়ে ফোন বন্ধ রেখেছেন রাজ চক্রবর্তী।

রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন কোয়েল মল্লিক। তিনি গোটা বিষয়টির নিরিখে বলেছেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে তারকারা এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে নন। কারও ক্ষোভ বা অভিযোগ জানানোর থাকলে, তাঁরা তারকার সঙ্গে সরাসরি প্রোফাইলে যোগাযোগ করুন। এ ভাবে ফোন নম্বর দেওয়া ঠিক পথ নয়।’’ আবার নীতিগত ভাবে কাজটি সমর্থনযোগ্য নয় বলেও, সুদীপ্তা চক্রবর্তীর মত, ‘‘নম্বর শেয়ার করাটা অনৈতিক হলেও ক্ষোভটা সঙ্গত। নির্বাচনের আগে মানুষের জন্য কাজ করব বলে ঝাঁপিয়ে পড়লেন অনেকে, নীতি-আদর্শ-অতীত রাজনৈতিক পরিচয়ের তোয়াক্কা না করে। মার খেলে যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় জানাচ্ছেন, তখন কী কাজ করেছেন সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানাচ্ছেন না কেন?’’

বিজেপি ও তৃণমূলের একাধিক প্রার্থীর নম্বর থাকলেও, বামজোটের কারও নম্বর না থাকায়, এর নেপথ্যে আঙুল উঠছে তাঁদের দিকে। সে প্রসঙ্গে দেবদূত ঘোষের মত, ‘‘পরিস্থিতি এমন যে, অনেকেই বিক্ষুব্ধ, অসহায় বোধ করছেন। ক্ষোভের জায়গা থেকে হয়ে থাকলে, তাঁদের পুরোপুরি দোষ দিতে পারব না।’’

কোভিড পরিস্থিতিতে তারকাপ্রার্থীরা কতটা কাজ করছেন, সেই খতিয়ান সোশ্যাল মিডিয়ায় দিতে তাঁরা দায়বদ্ধ নন। তাঁরা দায়বদ্ধ সাধারণ মানুষের কাছে। আগামী দিনে সে বিচার নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু কোনও অবস্থায়ই তাঁদের ব্যক্তিগত পরিসরে হস্তক্ষেপ করা যায় না। বাংলার রাজনীতিতে সুস্থবোধের যে বড়ই অভাব, তা ফের প্রমাণিত এই ঘটনায়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy