প্রতীকী ছবি।
টলিপাড়ায় হঠাৎই ছন্দপতন। কাল, বুধবার থেকে শুটিং শুরু হওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। কিন্তু কেন? স্যানিটাইজেশনের কাজ প্রায় শেষ, অভিনেতারাও ব্যাগ গুছিয়ে ফেলেছেন, প্রস্তুতি একেবারে চরম পর্যায়ে...ঠিক সেই সময়েই কী হল হঠাৎ?
ঘটনার সুত্রপাত সোমবার সন্ধ্যায়। ওই দিন হঠাৎই আর্টিস্ট ফোরামের তরফ থেকে বিভিন্ন কলাকুশলীর কাছে একটি বার্তা পৌঁছয়। তাতে লেখা, ‘প্রিয় সদস্যবন্ধু, ১০ জুন শুটিং শুরু নিয়ে সংশ্লিষ্ট সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের (চ্যানেল ও প্রযোজক) স্বাক্ষর সহ কোনও নির্দেশিকা এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে আসেনি। এই অবস্থায় আর্টিস্ট ফোরাম শুটিংয়ের কোনও দায়িত্ব নিতে অপারগ। হয় আপনারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিন অথবা স্বাক্ষরসমেত নির্দেশিকার জন্য অপেক্ষা করুন। যদিও আমাদের জানা নেই, কবে মিলবে নির্দেশিকা।’’
এই বার্তাই পৌঁছিয়েছে ফোরামের তরফ থেকে
এর পরেই রাতারাতি অথৈ জলে টলিপাড়া। যেহেতু অধিকাংশ শিল্পী ফোরামের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে ছিলেন সেহেতু অনেকেই পড়েন চরম আতান্তরে।
অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্র ফেসবুকে লেখেন, ‘‘জানতাম এটাই হতে চলেছে। টিডিএস দেওয়ার সময়ে দূরবীন দিয়ে দেখলেও খুঁজে পাওয়া যায়না। এ দিকে তারা দেবে ইনসিওর্যান্স? অনেক দেখলাম। কম দিন তো হল না ইন্ডাস্ট্রিতে। কাদেরকে বোকা বানানো হচ্ছে?’’রূপাঞ্জনার ওই পোস্টকে সমর্থন করে কমেন্ট বক্স ভরান টলিপাড়ার একাংশ।
রূপাঞ্জনার পোস্ট
জানা গিয়েছে, গত ৪ জুনের বৈঠকে কলাকুশলীদের সুরক্ষা সংক্রান্ত যে প্রস্তাবিত গাইডলাইন প্রকাশ করেছিল আর্টিস্ট ফোরাম, তাতে বেশ কিছু জায়গায় বাকি সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতের অমিল হওয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়।শিল্পীদের জন্য যে বিমার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল তা নিয়েও নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। মৌখিক ভাবে বিমা সংক্রান্ত আলোচনা হলেও বিমার কাগজ এখনও পায়নি ফোরাম। কোনও অভিনেতা যদি আগে থেকেই প্রেসার, সুগার সমেত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন সে ক্ষেত্রে তিনিও কোভিডে মৃত্যু সংক্রান্ত বিমার আওতায় আসবেন কি না উঠছে সেই প্রশ্নও। তাই প্রথমে এসওপি প্রকাশ করার কথা ঘোষণা করলেও দিন দুয়েক বাদে নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ফোরাম কর্তৃপক্ষ লেখেন, ‘‘দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, এখনও দু’চারটে বিষয়ে জটিলতা না কাটায় আমরা এসওপি প্রকাশ করতে পারছি না। আশা করি শীঘ্রই আলোচনার মাধ্যমে সব কিছু নির্দিষ্ট হয়ে যাবে।’’
আর্টিস্ট ফোরাম সূত্রে জানা গিয়েছে, শুটিং শুরুর দিন দুই আগেও সর্বসম্মতিক্রমে স্বাক্ষর-সহ কোনও নির্দেশিকা না পাওয়ায় আপাতত শিল্পীদের দায়িত্ব নিতে নারাজ তারা। তবে পাশাপাশি কোনও শিল্পী যদি নিজেই নিজের দায়িত্বে কাজে যোগ দিতে চান সে ক্ষেত্রে ফোরাম হস্তক্ষেপ করবে না।
তিন দিন আগে ফোরামের পক্ষ থেকে যে পোস্টটি ফেসবুকে তাদের অফিসিয়াল পেজে করা হয়েছিল
কিন্তু কেন দু’দিন আগেও স্বাক্ষরিত গাইডলাইন পাওয়া গেল না? অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন প্রোডিউসারস-এর সভাপতি শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওঁরা (ফোরাম) কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন যেগুলো সবার সম্মতিতে গৃহীত হয়নি। চারটি সংস্থার (ইম্পা, ফোরাম, ফেডারেশন, প্রোডিউসারস গিল্ড) সম্মতিতে স্বাক্ষরিত যে গাইডলাইনটি আসবে তা সবার কাছে পৌঁছে যাবে। আসলে গোটা বিষয়টি বাংলাতে চেয়েছিলেন ওঁরা। তাই পাঠাতে দেরি হয়েছে।’’
এ বার প্রশ্ন হল, স্বাক্ষরিত গাইডলাইন না আসা পর্যন্ত ফোরাম যদি এ ভাবে হাত তুলে নেয় তবে শিল্পীদের বিমার জন্য যে ১০ শতাংশ আর্টিস্ট ফোরামের পক্ষ থেকে দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল তার কী হবে? যে সব শিল্পী ফোরামের সদস্য তাঁরা কি আদপে নিজের দায়িত্বে কাজ করবেন ১০ তারিখ থেকে? শুটিং কি আদৌ শুরু হবে কাল থেকে?
ফোরামের প্রস্তাবিত নির্দেশিকা
অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় যেমন বলছেন, ‘‘ফোরাম তো আমাদের কাজ করতে বারণ করেনি, তাই আগামিকাল থেকে নিজের দায়িত্বেই শুটিং করব আমি।’’ কিন্তু অভিনেত্রী সৌমিলি বিশ্বাস এ ভাবে যে কাজ করবেন না স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন। এমনিতেই বাড়িতে বয়স্ক মানুষ রয়েছেন, তাই এই ঝুঁকি তিনি নেবেন না। ঝুঁকির প্রসঙ্গ আসতেই ভাস্বর বললেন, ‘‘ঝুঁকি তো প্রযোজক, কলাকুশলী সবারই রয়েছে। প্রযোজক নিশ্চয়ই চাইবেন না তাঁর কলাকুশলী অসুস্থ হন। সেই বিশ্বাস নিয়েই শুটিং করব।’’
একই কথা বললেন অভিনেতা ভরত কলও। ‘‘অনেকেই হয়তো বলবেন, আমি পাশাপাশি প্রযোজক বলেই চাইছি কাজ শুরু করতে। তাঁদের বলব,প্রবীণ অভিনেতা হয়েও আমার অভিনেতা স্বত্ত্বা কাল থেকে কাজের জন্য বারেবারে আমায় তাগাদা দিচ্ছে। গত ৯০ দিন ধরে অনেক মানুষের অসহায়তা দেখেছি। আর না’’,বলছিলেন তিনি।
‘নকশিকাঁথা’ ধারাবাহিকের স্নেহা চট্টোপাধ্যায়ের কাছে শুটিংয়ে যাওয়ার ডাক এসেছে ১১ তারিখ। তিনি কী করবেন? যাবেন? স্নেহা বললেন, ‘‘প্রযোজনা সংস্থা ম্যাজিক মোমেন্টসের তরফে আমার কাছে যে গাইডলাইন এসেছিল তা অত্যন্ত ভাল এবং যুক্তিযুক্ত। কিন্তু একই সঙ্গে আমি আর্টিস্ট ফোরামেরও সদস্য। তাই এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি নিজে যেহেতু ক্রনিক অ্যাজমার রোগী, আমি অপেক্ষা করে আছি আমার প্রযোজক কী বলেন তার দিকে।’’
সুতরাং, নতুন ভাবে যাত্রা শুরুর আগেই হঠাৎ হোঁচট খেয়ে বেশ কিছুটা টালমাটাল টেলিপাড়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy