গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে সিনেমাহলগুলি খুলতে পারবেন মালিকরা. কারণ কোভিড বিধি মেনে রাজ্যে সিনেমাহলগুলিকে খোলার নির্দেশ দিল রাজ্য। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি নির্দেশিকা দিয়েছে নবান্ন। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোভিড বিধি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। শনিবার, ৩১ জুলাই থেকেই নতুন নিয়ম কার্যকর হবে।
গত বছর অক্টোবর মাসে প্রেক্ষাগৃহ খোলা হয়েছিল বটে, কিন্তু করোনা আতঙ্কে মানুষের আনাগোনা ছিল না। ফের অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপে বন্ধ হয়ে যায় প্রেক্ষাগৃহ। দীর্ঘ দিন পরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার আলো দেখতে পেলেন দর্শক, পরিচালক, প্রযোজক এবং সিনেমাহলের মালিকরা।
আনন্দবাজার অনলাইন পরিচালক-প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি ঘুরিয়ে প্রশ্ন রাখলেন, ‘‘বাস, বিমান বা মেট্রোতে গুনে গুনে বসানো হয়? ৫০ শতাংশ লোকই তোলা হচ্ছে কি? মনে হয় না। তা হলে প্রেক্ষাগৃহে ১০০ শতাংশ লোক নেওয়া হবে না কেন?’’ পরিচালকের কথায় স্পষ্ট, ৫০ শতাংশ লোক নিয়ে প্রেক্ষাগৃহ খোলায় আপ্লুত নন তিনি। তাঁর যুক্তি, করোনা তো বেছে বেছে কিছু জায়গায় বেশি বা কম হয় না। তা হলে প্রেক্ষাগৃহের ক্ষেত্রে এই কড়াকড়ি থাকার কোনও মানে নেই। ব্যাঙ্গের সুরে শিবপ্রসাদ বললেন, ‘‘রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে বোধহয় করোনা ঢুকতেই পারে না। এত বড় বড় নেতা থাকে তো! কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রেক্ষাগৃহেই করোনার ছড়াছড়ি।’’ তাঁর প্রশ্ন, প্রেক্ষাগৃহে একটি করে আসন খালি রাখা হচ্ছে, কিন্তু বিমানে কি তা হচ্ছে? বিমানে উঠে গন্তব্যে পৌঁছতে যত সময় লাগে, প্রক্ষাগৃহে সিনেমা দেখার সময়কাল তার চেয়ে খুব বেশি নয়, বা কখনও তার থেকে কমও হতে পারে। উপরন্তু কেউ নিজের আসন ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারবে না বিমানে। প্রেক্ষাগৃহের ক্ষেত্রে সেই রাস্তাও খোলা। তবে প্রেক্ষাগৃহ খুলল, এই বিষয়ে তিনি সন্তুষ্ট। শিবপ্রসাদের কথায়, ‘‘প্রেক্ষাগৃহ খোলা দরকার ছিল, ৫০ শতাংশ মানুষ নিয়ে খুললেও খুলছে, এই অনেক।’’
যদিও পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত জানালেন, তিনি সব বিষয়ে অভিযোগ করতে চান না। তিনি আপাতত এই নিয়েই খুশি। বিরসার গলায় আনন্দ, ‘‘সিনেমাওয়ালাদের কাছে এর থেকে বড় সুখবর আর কীই বা হতে পারে? অবশ্যই ১০০ শতাংশ লোক নিয়ে খুললে বেশি খুশি হতাম। কিন্তু এখনও সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’’ তাঁর বিশ্বাস, ধীরে ধীরে সব খুলবে, তবে সময় লাগবে। যত দিন সম্ভব এ ভাবেই অন্তত চলুক। তাঁর ভয়, ‘‘কখন আবার তৃতীয় ঢেউ এসে সব ধ্বংস করে দেবে কে জানে। তখন তো ফের সব বন্ধ হয়ে যাবে।’’ পরিচালক রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি হয়ে মুম্বইয়ের সঙ্গে তুলনা করে বললেন, ‘‘ভারতের সব থেকে বড় ইন্ডাস্ট্রিও তো এখনও সিনেমাহল খোলেনি। ভারতের সব থেকে উচ্চ মানের ছবি যেখানে বানানো হয়, অর্থাৎ কেরল, সেখানেও তো এখনও সিনেমাহল বন্ধ। তা হলে আমি এইটুকুতেই খুশি।’’
বিনামূল্যে ছবি দেখার জন্য নতুন ওটিটি মঞ্চ খুলেছেন অভিনেতা-পরিচালক সৌরভ চক্রবর্তী। সিনেমাহল খোলায় তিনি আপ্লুত। কিন্তু সিনেমাহল খুললে ওটিটি-তে মানুষ কম ছবি দেখবে, এ রকম কোনও চিন্তা নেই তো তার মনে? সৌরভের সাফ উত্তর, ‘‘একদমই না। আমি মনে করি, পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবির ঐতিহ্য এত সহজে মোছার নয়। যাঁরা চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের কাছে সিনেমাহল খোলার মতো আশীর্বাদ আর কিছুই হতে পারে না।’’ তিনি একইসঙ্গে কোভিড বিধি মেনে চলার বার্তাও দিলেন সকলকে। কিন্তু তাঁর মতে, গত এক বছর ধরে মানুষ যে ভাবে জীবন যাপন করছেন, তা সুস্থ নয়। একটা সিনেমাহল খোলা বা একটি উৎসব পালন মানে তো কখনওই কেবল একটি সিনেমা দেখা বা উৎসবে হইহুল্লোড় করা নয়। সৌরভের কথায়, ‘‘এই এক একটা ক্ষেত্রে কত কোটি মানুষের জীবন জীবিকা জড়িয়ে আছে। আমাদের আসলে ভেবে দেখতে হবে, আমরা কী ভাবে মরব? কোভিডে নাকি চার দেওয়ালে বন্দি হয়ে না খেতে পেয়ে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy