সুদীপ্তা চক্রবর্তী, সন্দীপ্তা সেন এবং কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
বিনোদন ইন্ডাস্ট্রিকে এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে এনে দাঁড় করিয়েছে করোনা-ত্রাস। শুটিং করতে গেলে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। পুরোপুরি শুটিং বন্ধ রাখলে ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত অনেকেরই দিন গুজরান করতে নাভিশ্বাস উঠছে। রোজের দমবন্ধ করা পরিস্থিতি থেকে শিল্পীসত্তা বাঁচিয়ে রাখতে অভিনয়ের প্রশিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী এবং কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরনো পেশা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের ভূমিকায় মানুষের পাশে সন্দীপ্তা সেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এটি বিকল্প আয়ের পথ হলেও, তিন শিল্পী বাঁচার নতুন রসদ খুঁজে পেয়েছেন এই কাজের মধ্য দিয়ে।
যাত্রাপথ
২০২০-র বাংলা নববর্ষের দিন অ্যাক্টিং অ্যাকাডেমি উদ্বোধনের পরিকল্পনা ছিল সুদীপ্তা চক্রবর্তীর। সেইমতো চলছিল প্রস্তুতি। কিন্তু লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরে বন্ধ করতে হয় সে সব। ‘‘ভাল কাজ করতে গিয়ে প্রথমেই বাধা পাওয়ায় মন ভেঙে গিয়েছিল। কোনও দিন অ্যাক্টিং স্কুল খুলব ভাবিনি। কারণ নিজে কখনও অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিইনি। কিন্তু জুনিয়র-সিনিয়র সহকর্মীদের কাছ থেকে অনেক সময়ে প্রস্তাব পেয়েছি এমন কিছু করার। গত বছর স্কুল খুলতে না পারায় বাড়িতেই ওয়ার্কশপ করার প্রস্তাব দিলেন অনেকে,’’ বলছিলেন সুদীপ্তা। এর আগে জয়া আহসান, পার্নো মিত্র, বিক্রম চট্টোপাধ্যায়, অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলার মতো শিল্পীরা সুদীপ্তার কাছ থেকে অভিনয়ে সাহায্য নিয়েছেন। এই নববর্ষে তাঁর স্কুলের আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হয়েছে। তবে এখন অনলাইন ক্লাস করাচ্ছেন অভিনেত্রী। ‘‘ভার্চুয়ালি ক্যামেরার লেন্স, এক্সপোজ়ার...অনেক কিছু শেখার রয়েছে,’’ বললেন তিনি।
দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন নাচ শেখাতেন কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে। ‘‘গত এক বছরে ঘরবন্দি হয়ে আমার ক্রিয়েটিভিটি জ়িরো হয়ে গিয়েছিল। আনলক পর্ব শুরু হওয়ার পরে বাপের বাড়িতে এলাম। মেয়েকে সামলানোর কেয়ারগিভার পেলাম। তখন বন্ধুদের পরামর্শে অনলাইন অভিনয় শেখানোর ক্লাস শুরু করলাম,’’ বললেন তিনি। তাঁর ভার্চুয়াল আট নম্বর ব্যাচের ক্লাস শুরু হবে কয়েক দিনের মধ্যেই।
কনীনিকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন নাসার বিজ্ঞানী থেকে বিদেশে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ার-ডাক্তার। উচ্ছ্বসিত শিক্ষিকা বললেন, ‘‘অফলাইন একটাই ব্যাচ করেছি। চেন্নাইয়ে কর্মরত এক ব্যক্তি শুধু আমার ক্লাস করবেন বলে বাড়ি (ঘাটাল) ফিরেছিলেন। এদের বেশির ভাগেরই বয়স ৪০-৫০ বছর। অভিনয় শেখার মধ্যে যে আনন্দ রয়েছে, সেই তাগিদেই ওঁরা এসেছেন।’’
অভিনয়ের ফাঁকে নিজের বিষয় সাইকোলজি নিয়ে এখন ব্যস্ত সন্দীপ্তা। ‘‘আমি আগেও প্র্যাকটিস করতাম, তবে নিয়মিত নয়। গত বছর আমার এক বান্ধবী (পেশায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ) ওয়েবসাইট লঞ্চ করে। সেখানে আমি সাইকোলজিস্ট হিসেবে যোগ দিই। অতিমারির কারণে মানসিক সমস্যা বেড়ে গিয়েছে। ক্লিনিকেও এখন যাওয়া সম্ভব নয়। এমন প্ল্যাটফর্মের দরকার ছিল। এখনও অবধি খুব ভাল সাড়া পেয়েছি,’’ বললেন তিনি।
আর্থিক নিশ্চয়তা?
সুদীপ্তার কথায়, ‘‘অ্যাকাডেমিতে অনেকেই এখন নিয়মিত ফি দিতে পারছেন না। কিন্তু তা নিয়ে কখনও চাপ দেওয়া হয় না।’’ কনীনিকা বলছেন, ‘‘আর্থিক অনিশ্চয়তা সকলের রয়েছে। এই ক্লাস করিয়ে যে আমার সংসার চলছে, এমন বলতে পারব না।’’ একই মত সন্দীপ্তার। তবে এই শিল্পীদের আর্থিক নিশ্চয়তার ঊর্ধ্বে রয়েছে নিজেদের ও অন্যদের ভাল রাখার তাগিদ এবং সংকল্প।
সিনেমা-সিরিয়াল
মেগা ধারাবাহিক থেকে বিরতি নিয়েছিলেন সন্দীপ্তা। ‘‘পারিশ্রমিক কমাতে বলায় সমস্যা হচ্ছিল। কমফর্ট জ়োন থেকেও বেরোতে চাইছিলাম। তবে আগামী দিনে সিরিয়াল, সিনেমা কোনওটাতেই ‘না’ নেই,’’ বললেন তিনি। অঞ্জন দত্তের ‘মার্ডার ইন দ্য হিলস’ সিরিজ়ে অভিনয় করেছেন সম্প্রতি। অনেক দিনই ছোট পর্দা থেকে দূরে সুদীপ্তা। জানালেন, তেমন চরিত্র না পেলে টেলিভিশনে ফিরবেন না। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের হিন্দি ছবি ‘মনোহর পাণ্ডে’তে তিনি শেষ অভিনয় করেছেন। গত বছর একাধিক শর্ট ফিল্মে কাজ করেছেন কনীনিকা। ‘‘মেয়ে ও মা-বাবার জন্য শুটিং করায় ভয় রয়েছে। কয়েকটি বিজ্ঞাপনী শুটও বাতিল করেছি,’’ বললেন তিনি।
কঠিন সময়েও রোজগারের দায়বদ্ধতা সকলের রয়েছে। তবে এই শিল্পীরা এমন দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন, যে কাজে তাঁরা পারদর্শী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy