Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Tollywood

রাজ-নীতি

হলিউডে রাজনৈতিক অবস্থান দর্শাতে পিছপা নন তারকারা। এ দেশে অবশ্য তা ‘রাজ়’ রাখারই ট্রেন্ড।ক্ষমতার অলিন্দে যিনি, তাঁর পাশেই ভিড় বেশি। অনেক তারকা আবার সৌজন্যের সম্পর্ক রাখলেও, রাজনীতির ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলতে চান।

পরমব্রত, মিমি, কোয়েল।

পরমব্রত, মিমি, কোয়েল।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২০ ০৬:০৮
Share: Save:

কেউ তাঁকে ‘নির্বোধ’ বলেছেন, কেউ বলছেন ‘ধাক্কা মেরে সরিয়ে দাও’, কেউ আবার তাঁর কারণে ‘দেশত্যাগী’ হতে চেয়েছেন। দেশের প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে এ ধরনের মন্তব্য অবমাননাকর সন্দেহ নেই, কিন্তু ক্ষমতার বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও হিম্মত লাগে। আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছেন হলিউডের তারকারা। কিন্তু এখানে? ‘শোলে’ ছবির সংলাপ ধার করে বলা যায়, ‘ইতনা সন্নাটা কিউঁ হ্যায়...?’

দিন কয়েক আগে আমেরিকার নির্বাচনের প্রেক্ষিতে অভিনেত্রী-সাংসদ মিমি চক্রবর্তী টুইট করে একটি প্রশ্ন তুলেছিলেন, নিজেদের রাজনৈতিক মতামত ব্যক্ত করতে হলিউডের শিল্পীরা যতটা সরব, এখানে তা নয় কেন? তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদের ইঙ্গিত কোন দিকে তা স্পষ্ট। কিন্তু তাঁর প্রশ্নটা যুক্তিসঙ্গত। হিন্দি ইন্ডাস্ট্রিতে একদল তারকা কেন্দ্রীয় সরকারের স্তুতিতে রত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অক্ষয়কুমার, কঙ্গনা রানাউত, প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, কর্ণ জোহর, একতা কপূর, রাজকুমার হিরানিদের অন্তরঙ্গতা গোপন নেই। অন্য দিকে অনুরাগ কাশ্যপ, তাপসী পান্নু, স্বরা ভাস্করেরা রয়েছেন, যাঁরা বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিরোধিতা করেছেন। আবার একদল পুরোপুরি মৌন, যাঁর মধ্যে অমিতাভ বচ্চন থেকে শাহরুখ খানের মতো তারকার নাম আসে।

কাছাকাছি ছবি টলিউডেও। ক্ষমতার অলিন্দে যিনি, তাঁর পাশেই ভিড় বেশি। অনেক তারকা আবার সৌজন্যের সম্পর্ক রাখলেও, রাজনীতির ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলতে চান। মিমির প্রশ্ন, ‘‘যে দলের সমর্থকই হন না কেন, রাজনৈতিক পছন্দ বা অপছন্দ ব্যক্ত করতে বাধা কোথায়?’’ নিজের রাজনৈতিক মতামত স্পষ্ট করতে দ্বিধা নেই পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের। শাসকদলের কোনও মিছিল বা সভায় তাঁকে হয়তো দেখা যায় না, কিন্তু তিনি চলচ্চিত্র উৎসবের কমিটিতে রয়েছেন। তারকাদের নীরবতা প্রসঙ্গে পরমব্রতের বক্তব্য, ‘‘আমরা দর্শক ভাগ হওয়ার ভয় পাই। যেহেতু গণমাধ্যমে কাজ করি, তাই দর্শককে আমাদের প্রয়োজন। এই ভয়টা আমার মতো বাকিদেরও আছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে মুখ বন্ধ রাখা যায় না, তখন বলে ফেলি। বাংলা বা জাতীয় স্তরে অনেকেই নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ করেন। আবার অনেকে একেবারে চুপ। তাঁদের একটু বেশি ইনসিকিয়োর বলে মনে হয়।’’ অবস্থান ব্যক্ত করতে গিয়ে বিরাগভাজন হওয়ার আশঙ্কা অমূলক নয়। এই আশঙ্কার প্রশ্ন রাখা হয়েছিল মিমির কাছে, তবে তিনি জবাব এড়িয়ে যান।

পাশাপাশি ট্রোলিং এবং #বয়কট... তো চলছেই। বিজেপি সরকারের সমালোচনার জেরে অনুরাগ কাশ্যপের মেয়েকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকারের বিরোধিতায় মুখর কঙ্গনা রানাউত। অভিনেত্রীর বিজেপি ঘনিষ্ঠতা সুবিদিত। সেই কারণেই তাঁর অফিস ভাঙা, তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর, বলে অনেকের মত।

বিরাগভাজনের উদাহরণ এ রাজ্যেও আছে। পরিচালক অনীক দত্তের ছবি ‘ভবিষ্যতের ভূত’এ শাসকদলের ব্যঙ্গাত্মক সমালোচনা ছিল, যার জেরে ছবির প্রদর্শন বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে আদালতের রায়ে ছবিটি চালানো হয়। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, জিৎ, আবীর চট্টোপাধ্যায়ের মতো টলিউডের প্রথম সারির তারকারা এ প্রসঙ্গে বরাবরই নীরব। তাঁরা মনে করেন, রাজনৈতিক চয়েস তাঁদের ‘ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ’। হয়তো জটিলতা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ এড়াতেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত। কোয়েল মল্লিক যেমন তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করতে চান না। তাঁর কথায়, ‘‘সব কিছুর পিছনে একটা কারণ থাকে। ভোটদান প্রক্রিয়ায় কিন্তু গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। কারণ এটা অত্যন্ত ব্যক্তিগত ভাবনা। সেই ভাবনাকে কেন আমি প্রকাশ্যে আনব? তবে বিষয়টা মানুষভেদে বদলে যায়। কিছু মানুষ বিভিন্ন ব্যাপারে অত্যন্ত সরব, কেউ তা নন। সেটা আমেরিকা হোক বা পশ্চিমবঙ্গ।’’ অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘‘যে কোনও প্রসঙ্গেই আমি পজ়িটিভ দিকগুলো নিয়ে কথা বলা পছন্দ করি। দল-মত নির্বিশেষে সরকারের ভাল কাজের দিকগুলো নিয়ে কথা বলি। নেতিবাচক বিষয়গুলো নিজের মধ্যে রাখি বা ঘনিষ্ঠ বৃত্তে আলোচনা করি। কিছু বললেই ট্রোলিং শুরু। এতে নিজের মানসিক শান্তি নষ্ট হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে তো বলতেই হয়।’’

আমাদের সংবিধানে মৌলিক অধিকারের মধ্যে মতামত প্রকাশের অধিকার থাকলেও, তার সঙ্গে একগুচ্ছ ‘যদি-কিন্তু’ জুড়ে রয়েছে। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ট্রোলিং এবং ভার্চুয়াল বিচারসভা। অতএব, এখানে তারকারা আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে যতটা সরব, নিজের দেশের ক্ষেত্রে ততটাই নীরব।

অন্য বিষয়গুলি:

Tollywood Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy