কিশোরী লতা মঙ্গেশকর। ফাইল চিত্র
কোভিডের কারণে মাস্টার দীননাথ মঙ্গেশকর পুরস্কারের অনুষ্ঠান পিছিয়ে যায় ২০২০ সালে। ওই বছরে তার আয়োজন আর সম্ভব হয়নি। নির্ধারিত হয় ২০২১-এ। ওই পুরস্কার নিতে আমার মুম্বইয়ে যাওয়ার কথা ছিল। লতাজি চাইছিলেন, আমি যাই। কিন্তু কোভিডের কারণে আজকাল কোথাও যাওয়া-আসার বিষয়ে একটু আশঙ্কায় থাকি। লতাজিকে বলেছিলাম, আগামী বছরে যাব। ওঁর সঙ্গে দেখাও হবে তখন। কিন্তু বুঝিনি যে, সেই দেখা হওয়ার দিন আর কখনও আসবে না। আজ এটা ভাবতে-ভাবতেই আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।
বহু দিনের স্মৃতি। বহু দিনের পারিবারিক যোগাযোগ। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই টাইগার (মনসুর আলি খান পটৌডি) ছিল লতাজির গানের ভক্ত। তালাত মাহমুদ, মহম্মদ রফির পশাপাশি ওকে তন্ময় হয়ে লতা মঙ্গেশকরের গান শুনতে দেখেছি। লতাজির রেকর্ডিং স্টুডিয়োয় গিয়ে ছবি তুলেছে টাইগার। দুর্দান্ত সেই সব ছবি। আমাদের মধ্যে পারিবারিক বন্ধন তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
রাজ সিংহ দুঙ্গারপুর তো ছিলেনই, আরও কয়েক জন ছিলেন ‘কমন ফ্রেন্ড’। আর এটাও অনেকে জানেন না যে, লতাজির যেমন ছবি তোলার (ফোটোগ্রাফি) শখ ছিল, তেমনই উনি ক্রিকেটের বড় ভক্ত এবং সমঝদার ছিলেন। গানের বাইরে তাঁর আগ্রহ, উৎসাহ ছিল বিভিন্ন বিষয়ে। আর সেই প্রত্যেকটি বিষয়েই তিনি ছিলেন অসম্ভব ‘সিরিয়াস’। পাটিয়ালার ধ্রুব পাণ্ডব স্টেডিয়ামে বসার খুব সুন্দর ব্যবস্থা ছিল, পৃথক এনক্লোজ়ারে। ওখানে আমরা একসঙ্গে বসে কত ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট ম্যাচ যে দেখেছি। আজ সেই সব স্মৃতিই বারবার ফিরে আসছে।
লতাজির গানের সঙ্গে আমার অভিনয়ের সফরও দীর্ঘ। প্রবল জনপ্রিয়তা পেয়েছে, এমন কত গানে যে ‘লিপ দিয়েছি’, তার ইয়ত্তা নেই। ‘অমর প্রেম’ ছবিতে রাহুলদেব বর্মণের সুরে ‘রয়না বিত যায়ে’ যিনি এক বার শুনেছেন, তিনি কি তা ভুলতে পারবেন কখনও? ওই ছবিতেই তাঁর গাওয়া ‘বড়া নটখট হ্যায় রে কৃষ্ণ কানহাইয়া’ গানটিও আমার বড় প্রিয়। ‘মৌসম’ ছবিতে ওঁর গাওয়া ‘রুকে রুকে সে কদম’ গানটির দৃশ্যে রেডিয়োয় গানটি চলছে এবং সারা গান জুড়ে আমার ‘এক্সপ্রেশন’। ‘আরাধনা’ ছবির ‘চন্দা হ্যায় তু, মেরা সুরজ হ্যায় তু’ গানটি তো এখন নাতনিও গায় আমার সঙ্গে! হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘অনুপমা’ ছবিতে লতাজির গাওয়া ‘কুছ দিল নে কহা’ গানটির কথাও আজ মনে পড়ছে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুর। আমার সঙ্গে ধর্মেন্দ্র অভিনয় করেছিলেন ছবিটিতে।
কিশোর কুমার, মহম্মদ রফির সঙ্গে তো গেয়েছেনই, পাশাপাশি মান্না দে-র সঙ্গেও তাঁর অবিস্মরণীয় ডুয়েট— ‘প্যার হুয়া ইকরার হুয়া।’
উনি প্রথম যখন ছবিতে গান গাইছেন, ১৯৪৮ সালে, আমার বয়স তখন চার বছর! তার পরে উনি আমার জন্য গান তো গেয়েইছেন, আমার মেয়ে সোহার জন্যও ‘রং দে বসন্তী’-তে গেয়েছেন! একই ভাবে শোভনা সমর্থ, তনুজা, কাজল— তিন প্রজন্মের জন্য গেয়েছেন। এর থেকেই বোঝা যায় তাঁর
ব্যাপ্তি। ওঁর কণ্ঠে সেই ম্যাজিক ছিল, যা সারা ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। উনি জীবনের শুরুতে অভিনয়ও করেছিলেন কিছু ছবিতে। গান গাওয়ার সময়ে অভিনেত্রীর চরিত্রের ‘ইমোশন’ও তাই বুঝতে পারতেন।
ওঁর শরীর ভাল নেই, সেই খবর জানতাম। প্রার্থনা করতাম দ্রুত আরোগ্যের। হাসপাতালে যাওয়ার পরে ওঁর ভাইঝি রচনার সঙ্গে কথা হয়েছে। মাঝে একটু ভাল হলেন, খবর পেলাম। আশা করছিলাম, সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। কিন্তু তা হল না। আক্ষরিক অর্থেই একটি যুগের অবসান হল। ওঁর কণ্ঠ অমর হয়ে থাকবে। নিজেই তো গেয়েছেন, ‘নাম গুম যায়েগা/ চেহরা বদল যায়েগা/ মেরি আওয়াজ হি পহেচান হ্যায়...!’
অনুলিখন: অগ্নি রায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy