Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Sukumar Pahari

জীবনের মঞ্চ থেকে বিদায় নাট্যকর্মীর

পেশায় ছিলেন নন্দীগ্রামের দাউদপুর হাইস্কুলের গণিতের শিক্ষক। ষাটের দশক থেকে নন্দীগ্রামের ‘উদয়ন’ নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হন সুকুমার।

সুকুমার পাহাড়ি।

সুকুমার পাহাড়ি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৩৩
Share: Save:

অবিভক্ত মেদিনীপুরের জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। লোকে তাঁর বহুমুখী প্রতিভার কদর করতেন। ছিলেন বিশিষ্ট নাট্য অভিনেতা। নাটক রচনাতেও পারদর্শী। ভাল মাউথ অর্গান বাজাতে পারতেন। কবি, আবৃত্তিকার, গায়ক এবং ডাকাবুকো ফুটবলার হিসেবেও তাঁর পরিচিতি ছিল। তবে নাট্যকর্মী এবং ফুটবলার হিসেবেই তাঁকে বেশি কাছে পেয়েছিলেন মানুষজন। অনেকে এমন মতও পোষণ করেন, এই দুই ভিন্ন ক্ষেত্রের যে কোনও একটি নিয়ে মগ্ন থাকলেও তিনি একই রকম পরিচিতি পেতেন। রবিবার অসংখ্য অনুরাগীকে শোকস্তব্ধ করে প্রয়াত হলেন জেলার নাট্য ব্যক্তিত্ব সুকুমার পাহাড়ি। বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। রেখে গেলেন স্ত্রী, কন্যা, জামাতা এবং দুই নাতি-নাতনিকে। দীর্ঘদিন স্মৃতিভ্রংশ রোগে ভুগছিলেন তিনি। গত ডিসেম্বরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

পেশায় ছিলেন নন্দীগ্রামের দাউদপুর হাইস্কুলের গণিতের শিক্ষক। ষাটের দশক থেকে নন্দীগ্রামের ‘উদয়ন’ নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হন সুকুমার। মেদিনীপুর জেলার নাট্যচর্চায় সেই সময় নন্দীগ্রামের বেশ প্রভাব ছিল। প্রথম সারিতে ছিলেন শঙ্কর তিয়াড়ি ও সুকুমার পাহাড়ি। এঁদের হাতে তৈরি ‘উদয়ন’ সারা রাজ্যে নাটক করেছে। শঙ্কর আগেই প্রয়াত হয়েছেন। সুকুমার ‘ডায়নোসোর’, ‘ট্রোজান’, ‘শেষ দৃশ্যে পৌঁছে’, ‘চাক ভাঙা মধু’, ‘ধর্মাবতার হাজির’, ‘অথঃ স্বর্গ বিক্রি’র মতো দুরন্ত নাটক উপহার দিয়েছেন। দীর্ঘদেহী সুকুমারের মন্দ্র স্বর দর্শকদের মোহিত করত। পুরনো নাট্যকর্মীরা জানাচ্ছেন, ‘উদয়ন’ এর মহলা কক্ষে তাঁর উপস্থিতি প্রাণময় করে রাখত সকলকে।

নাট্যকর্মীর মৃত্যুতে জেলায় শোকের ছায়া। সমাজ মাধ্যমে অনেকেই শোক জানিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন। এদিন শেষ যাত্রায় প্রয়াত নাট্যকর্মীকে শ্রদ্ধা জানাতে লক্ষণীয় ভিড় হয়েছিল। সংস্কৃতিকর্মী অরুণাংশু প্রধান, নাট্যকার অলকেশ সামন্ত, সাহিব আলম শাহ, সঙ্গীতশিল্পী জয়দীপ চক্রবর্তী, কবি রাজকুমার আচার্য তাঁর স্মৃতিচারণা করেছেন। রাজকুমার বলেন, ‘‘উনি আমাদের অনুপ্রেরণা ছিলেন। কবিতাও লিখতেন খুব ভাল।’’ নাট্যকর্মী সাহিব আলম বলেন, ‘‘সুকুমার মামা নেই ভাবতেই পারছি না। আমরা তাঁকে দেখেই নাটক-গান চর্চায় এগিয়ে এসেছিলাম।’’

হলদিয়ার ফুটবল মহলেও শোকের ছায়া। হলদিয়ার প্রাক্তন ফুটবলার রসময় দাস ও মহমেডান স্পোর্টিংয়ে খেলা মহম্মদ কাদের বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের ডগলাস ফুটবল মাঠে দুরন্ত ফুটবলার ছিলেন সুকুমারবাবু। আমরা ছোটবেলায় তাঁর খেলা দেখেছি। যেমন চেহারা তেমন খেলার স্কিল। শুধু ফুটবল খেললেই তিনি সফল হতেন বলে মনে করেন তাঁর সময়সাময়িক খেলোয়াড়রা।’’ অভিনেতার পুত্র সুকল্যাণ ১৯৯৮ সালে নাগপুরে দুর্ঘটনায় মারা যান। পুত্রশোক ভুলতে গান বাজনায় ডুবে থাকতেন সুকুমার। নন্দীগ্রামেই ছেলের স্মৃতিতে দুই ডেসিমাল জায়গা দিয়েছেন একটি সাধারণ পাঠাগারকে। প্রয়াত নাট্যকারের জন্য আক্ষেপও রয়েছে। নাট্যকার সুরজিৎ সিংহ বললেন, ‘‘আমাদের নাট্যচর্চার অভিভাবক। কতবার নাটকের কর্মশালায় পেয়েছি তাঁকে। আক্ষেপ রয়ে গেল, ওঁর মতো মানুষ তেমন কোনও সরকরি স্বীকৃতি বা সম্মান পেলেন না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sukumar Pahari Death Haldia Theatre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy