শাহাব আলি।
‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর স্বল্পভাষী খল তিনি। পর্দায় ‘সাজিদ’ হয়ে রাতারাতি ‘তারকা’ তকমা পেয়েছেন দিল্লির মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা শাহাব আলি। ২০১৮ সালে ‘কেদারনাথ’ ছবিতে কয়েক মুহূর্তের চরিত্র থেকে অ্যামাজন প্রাইমের জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজে মনোজ বাজপেয়ীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয়— কেমন ছিল তাঁর সফর? আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে অকপট অভিনেতা।
প্রশ্ন: আপনাকে তো এখন সবাই ‘সাজিদ’ বলেই চিনছে…
শাহাব: হ্যাঁ। ‘ফ্যামিলি ম্যান’-এর দ্বিতীয় কিস্তি মুক্তি পাওয়ার পর বিষয়টা সে রকমই হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার মতো একজন নবাগতর কাছে এটা বড় পাওয়া। তবে আমি চাই, ভবিষ্যতে মানুষ আমাকে শাহাব আলি হিসেবে চিনুক। আমার অন্যান্য চরিত্রগুলোকেও একই রকম ভালবাসা দিক। তবে প্রথম কাজে এই সাফল্য পেয়ে আমি খুব খুশি।
প্রশ্ন: মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে অভিনয়, যাত্রাটা কেমন ছিল?
শাহাব: অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছা আমার বরাবরই ছিল। কিন্তু পরিবারের দায়িত্বের চাপে তা হয়ে উঠছিল না। আমার বাবা যখন মারা যান, আমার বয়স তখন খুব কম। মায়ের আগ্রহে স্কুল পাশ করে টুকটাক অনেক কাজ করেছি। দোকানও চালিয়েছি। এর পর আমি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সেখানে কয়েকটি পথনাটিকা করতাম। কিন্তু জানতাম আমাকে চাকরি করে রোজগার করতে হবে। ভেবেছিলাম অভিনয় না করতে পারলেও তার কাছাকাছি কিছু একটা করব। তাই সংবাদপাঠক হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে জামিয়ামিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। কয়েক দিন একটি কাগজেও চাকরি করি। তবে বুঝতে পারছিলাম সেই কাজটা করতে আমার ভাল লাগছে না।
প্রশ্ন: তার পর?
শাহাব: ইউ টার্ন নিয়ে সোজা ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় ভর্তি হয়ে গেলাম। একই সঙ্গে তখন ‘মুঘল-এ-আজাম’ এবং ‘জাঙ্গুরা’ নামে দুটি ব্রডওয়ে মিউজিক্যালে অভিনয় করেছি। কাজের সূত্রে তখন দেশে-বিদেশেও ঘুরেছি। সেখান থেকে যা রোজগার হতো, সেটা দিয়েই সংসার চলত।
প্রশ্ন: নাটক থেকে সোজা বলিউড, ইন্ডাস্ট্রিতে নবাগতরা এমন সুযোগ কম পায় বলে অভিযোগ…
শাহাব: আমার ক্ষেত্রে কিন্তু এই অভিযোগ প্রযোজ্য নয়। বাকি সকলের মতো আমিও পরিশ্রম করেছি। তেমন ফলও পেয়েছি। মুকেশ ছাবড়া কাস্টিং কোম্পানির সঙ্গে আমি যোগাযোগ রেখেছিলাম। ওরাই আমাকে জানিয়েছিল ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর জন্য অডিশন নেওয়া হচ্ছে। সেই সময় আমি ‘সাজিদ’ এবং ‘করিম’, দুটি চরিত্রের জন্যই অডিশন দিয়েছিলাম। শেষমেশ ‘সাজিদ’-এর জন্য নির্বাচিত হই। যখন জানতে পারি মনোজ (বাজপেয়ী) স্যর আমার সঙ্গে অভিনয় করবেন, আনন্দ ধরে রাখতে পারিনি।
প্রশ্ন: মনোজ বাজপেয়ীর মতো অভিনেতার সঙ্গে দীর্ঘ কাজ। কোনও পরামর্শ পেলেন?
শাহাব: (কিছুটা ভেবে) মনোজ স্যরকে দেখলে, ওঁর আশেপাশে থাকলেই অনেক কিছু শিখে নেওয়া যায়। শ্যুটিংয়ের ফাঁকে উনি আমাদের বিভিন্ন ছবির ক্লিপ দেখাতেন, নানা অভিনেতাকে নিয়ে আলোচনা করতেন। তবে একটা দিনের কথা আজীবন মনে থেকে যাবে। সিজন ১-এ কাশ্মীরে একটা দৃশ্য শ্যুট করছিলাম আমরা। সেই দৃশ্যে মনোজ স্যর আমাকে তাড়া করবেন। শট শেষ হওয়ার পর উনি আমাকে ফোন করে ডাকলেন । আমি বেশ উত্তেজিত হয়েই দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমার প্রশংসা করে তিনি বলেছিলেন, নিজের কাজের প্রতি সৎ থাকলে, তার প্রতিদান পাবে।
প্রশ্ন: কিন্তু এত মন দিয়ে কাজ করে, রাতারাতি সাফল্য পেয়েও অর্থকষ্ট…
শাহাব: (কিছুটা ভেবে) আমি নিজেও বুঝে উঠতে পারছি না কেন এ রকম হল। আসলে এখানে কাজ পাওয়াটা খুব কঠিন। ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর প্রথম সিজনের পরে আমি যতগুলো অডিশনে ডাক পেয়েছি, সব কটি সন্ত্রাসবাদী চরিত্রের জন্য। আমি বাড়িতে একটা খেলনা বন্দুক কিনে রেখেছিলাম। অডিশনের সময় সেটা ব্যবহার করব ভেবেছিলাম। এক ধরনের চরিত্রে অভিনয় না করতে চেয়েও, শুধুমাত্র কাজের তাগিদে অডিশন দিয়ে গিয়েছি। কিন্তু কোনও কাজের জন্য আর ডাক পেলাম না। আশা করেছিলাম এই সাফল্যের পর আরও ভাল ভাল সুযোগ পাব। কিন্তু…
প্রশ্ন: তবে অনেকেই মনে করছেন, ওটিটির রমরমায় বড় তারকাদের পাশাপাশি আপনার মতো মঞ্চাভিনেতারাও জায়গা করে নিতে পারছেন…
শাহাব: হ্যাঁ। সে কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই। আসলে কী বলুন তো, ছবিতে মাত্র ২-২.৩০ ঘন্টার পরিসরে সব চরিত্রকে সমান গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু একটা ৮-৯ ঘন্টার ওয়েব সিরিজে কিন্তু সেই সুযোগটা পাওয়া যায়। প্রত্যেকটা চরিত্র পর্দায় নিজের মতো করে ফুটে উঠতে পারে। তার উপর রাজ এবং ডিকে স্যরের (‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর পরিচালকদ্বয়) মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করলে তো আর কোনও কথাই নেই…
প্রশ্ন: ওটিটির প্রসঙ্গ যখন উঠলই, আপনার প্রিয় ওয়েব সিরিজ কোনগুলি?
শাহাব: (কিছুটা হেসে) এই রে! এটা খুব কঠিন প্রশ্ন। তবে ভারতীয় ওয়েব সিরিজের মধ্যে ‘দিল্লি ক্রাইমস’, ‘সেক্রেড গেমস’, ‘মেড ইন হেভেন’, ‘পঞ্চায়েত’ খুব ভাল লেগেছে।
প্রশ্ন: আর যদি প্রিয় তিন জন অভিনেতার তালিকা করতে বলা হয়?
শাহাব: অতি অবশ্যই মনোজ (বাজপেয়ী), স্বর্গীয় ইরফান (খান) স্যর এবং শাহরুখ খানের নাম সবার আগে মাথায় আসে। তবে আরও দু’জনের নাম যোগ করার অনুমতি দিলে নাসিরুদ্দিন (শাহ) স্যর এবং গোবিন্দ স্যর থাকবেন তালিকায়।
প্রশ্ন: অভিনয়ের ছাত্র আপনি। বাংলা ছবি দেখেছেন নিশ্চয়ই…
শাহাব: (উৎসাহিত কণ্ঠে) হ্যাঁ। প্রচুর। আমি মনে করি সংস্কৃতিকে ভাল ভাবে জানতে চাইলে, বুঝতে চাইলে অতি অবশ্যই বাংলা ছবি এবং সাহিত্যকে জানতেই হবে। আমি সত্যজিৎ রায়, ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রচুর ছবি দেখেছি। অসাধারণ সব কাজ।
প্রশ্ন: বাঙালি অভিনেতাদের চেনেন?
শাহাব: কয়েকজনকে চিনি। তবে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে আমার ভীষণ ভাল লাগে। ‘কহানী’-তে প্রথম ওঁর কাজ দেখেছিলাম।
প্রশ্ন: বাংলা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে অনেক কিছুই তো জানেন। কলকাতায় এসেছেন কখনও?
শাহাব: হ্যাঁ। দু’বার। ওখানকার বিভিন্ন রেস্তরাঁয় খাওয়া দাওয়া করেছি। এক বাঙালি বন্ধুর বিয়েতে ভেটকি পাতুরি খেয়েছিলাম। কী অসাধারণ খেতে! আর কলকাতার মিষ্টি নিয়ে তো কোনও কথাই হবে না।
প্রশ্ন: ‘ফ্যামিলি ম্যান’-এর পর মহিলা অনুরাগীর সংখ্যা প্রচুর। জীবনে বিশেষ কেউ আছে?
শাহাব: না, এখনও পর্যন্ত তো কেউ নেই। কী আর বলব… তবে মহিলারা একজন খলনায়ককে ভালবাসছেন, সেটা কিন্তু বেশ লাগছে। (মৃদু হাসলেন শাহাব)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy