Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Tathagata Roy

আইনি মোড় নিল টুইট-যুদ্ধ, অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর তথাগতর

২০১৫ সালে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের টুইটার হ্যান্ডল থেকে একটি গ্রাফিক শেয়ার হয়েছিল। একটি শিবলিঙ্গের ছবি। তাতে কন্ডোম পরাচ্ছে এক মহিলা।

সায়নী ঘোষ ও তথাগত রায়

সায়নী ঘোষ ও তথাগত রায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:১২
Share: Save:

তথাগত রায় ও সায়নী ঘোষের টুইট-যুদ্ধ এ বার আইনি মোড় নিল। টলি অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করলেন প্রবীণ রাজনীতিক তথা ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল। হিন্দুধর্মের ভাবাবেগে আঘাত করার দায় এখন সায়নীর ঘাড়ে।

তথাগত রায় তাঁর টুইটার প্রোফাইলে অভিযোগপত্রের একটি ছবি পোস্ট করেছেন। সেই সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের টুইটার হ্যান্ডল থেকে একটি গ্রাফিক শেয়ার হয়েছিল। একটি শিবলিঙ্গের ছবি। তাতে কন্ডোম পরাচ্ছে এক মহিলা। গ্রাফিক থেকে বোঝা যাচ্ছে, মহিলাকে এডস সচেতনতার বিজ্ঞাপনের ম্যাসকট ‘বুলাদি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্রাফিকের ভিতরে লেখা, ‘বুলাদির শিবরাত্রি’। পোস্টের ক্যাপশনে ছিল, ‘এর থেকে বেশি কার্যকরী হতে পারেন না ঈশ্বর’।

বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের অভিযোগ, হিন্দু ধর্মের পবিত্রতাকে নষ্ট করছেন সায়নী। শনিবার কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর থানায় সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে এই অভিযোগে মামলা রুজু করেছেন প্রবীণ বিজেপি নেতা। অভিযোগপত্রে লেখা, ‘আমি শিবের ভক্ত। ১৯৯৬ সালে শিবের পুজো দেওয়ার জন্য পায়ে হেঁটে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা করেছিলাম। অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের এই ছবিটি দেখে আমার ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত হয়েছে। আমার আর্জি, আপনারা এই বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুন সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে’।

এফআইআর-এর ছবি শেয়ার করে তথাগত ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘সায়নী ঘোষ, আপনার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়ে গিয়ে‌ছে। তার মধ্যে গুয়াহাটি থেকে একজন ব্যক্তি আমায় জানিয়েছেন, তাঁর ভাবাবেগও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তিনিও মামলা রুজু করবেন। আশা করি, অসম পুলিশ এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ করবে’।

অভিযোগটি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন সায়নী ঘোষ। নিজের টুইটার প্রোফাইল থেকে টুইট করে জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে তাঁর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হয়েছিল। অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করার পর তিনি এই ছবিটি সরিয়ে ফেলেছিলেন। উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে কখনওই কারোর ধর্মকে তিনি আঘাত করতে চাননি। তাঁর ভাষায়, ‘আমি আগেই বলেছি যে ২০১৫ সালের টুইটটির বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম। যেই মুহূর্তে সেটিকে আমার নজরে আনা হয়, আমি সেটার তীব্র নিন্দা করে সবাইকে জানিয়ে ডিলিট করি... তবে আজকের এই বিষয়টাকে কেন্দ্র করে যে বিদ্বেষের সম্মুখীন আমায় হতে হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক’।

কিন্তু তাঁর কথায় বিশ্বাস রাখেননি নেটাগরিকরাও। তথাগত রায়ের পোস্টের তলায় একাধিক টুইটার ব্যবহারকারী তাঁদের বক্তব্য রেখেছেন। কারওর দাবি, ‘আইনি পথ বেছে নিয়ে ভাল করে‌ছেন স্যর। এর দাম ওঁকে চোকাতেই হবে’। কেউ হুমকি দিয়েছেন, বাঙালি হিন্দুরা ঘুমিয়ে নেই। তারা যোগ্য জবাব দেবে। কেউ কেউ সায়নীর পক্ষেও দাঁড়িয়েছেন।

আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। তিনি জানালেন, ‘‘আইনি প্রক্রিয়া চলবে নিজের মতো। একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করব আমি। তবে তাঁদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। মানুষ সব বুঝতে পারছেন। তাঁরাই বিচার করবেন।’’

শুক্রবার ১৫ জানুয়ারি সকাল থেকেই টুইটারে বাক-যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তথাগত রায় ও সায়নী ঘোষের মধ্যে। তার আগের দিন একটি বাংলা চ্যানেলে অতিথি বক্তা হিসেব উপস্থিত হয়েছিলেন সায়নী। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘‘যে ভাবে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগানটিকে রণধ্বনিতে পরিণত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত ভুল। উপরন্তু, এটি বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যেও পড়ে না। ঈশ্বরের নাম ভালবেসে বলা উচিত।’’ এর পরেই টুইটারে যুযুধান দুই পক্ষ।

সায়নীর বিশ্বাস, সাম্প্রতিক টুইট যুদ্ধেরই ফলাফল এটা। তাঁকে এই পথে হারানোর চেষ্টা করছেন তথাগত রায়। তিনি তাঁর আগের বক্তব্যে অনড় বলেই জানালেন আনন্দবাজার ডিজিটালকে। তাঁর কথায়, ‘‘এই সব কিছুর প্রতি আমার একটাই প্রতিক্রিয়া, ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির’। এটাই মেনে চলব আমি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE