Advertisement
E-Paper

বিতর্কের তাণ্ডবনৃত্যই সার, হতাশ করে আলি আব্বাস জাফরের নির্মাণ

‘তাণ্ডব’-এর প্রথম এবং প্রধান সমস্যা, লার্জার দ্যান লাইফ ছবি করে অভ্যস্ত আলি এ দেশের সংসদীয় ও ছাত্র রাজনীতির অতি-সরলীকরণ করে ফেলেছেন তাঁর সিরিজ়ে।

তাণ্ডবে র দৃশ্যে সেফ আলি খান, সারা জেন ডায়াস ও ডিনো মোরিয়া।

তাণ্ডবে র দৃশ্যে সেফ আলি খান, সারা জেন ডায়াস ও ডিনো মোরিয়া।

সায়নী ঘটক

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২১ ১১:৩১
Share
Save

তাণ্ডব (ওয়েব সিরিজ় )

পরিচালনা: আলি আব্বাস জ়াফর

অভিনয়: সেফ, জ়িশান, সুনীল, ডিম্পল, কৃতিকা, ডিনো

৪.৫/১০

গ্রেফতারির হুমকি, ক্ষমা চাওয়া এবং শেষমেশ দৃশ্য বাদ পড়া... ‘তাণ্ডব’ নিয়ে গত ক’দিন যাবৎ তোলপাড় চলছে। কিন্তু যাকে ঘিরে এত কিছু, আলি আব্বাস জ়াফরের সেই সিরিজ়ের কাহিনি, চরিত্রচিত্রণ এবং সর্বোপরি নির্মাণ হতাশ করে। এতটাই যে, এ সিরিজ়ের চেয়েও বড় হয়ে ওঠা বিতর্কও নিরর্থক মনে হতে পারে।

‘তাণ্ডব’-এর প্রথম এবং প্রধান সমস্যা, লার্জার দ্যান লাইফ ছবি করে অভ্যস্ত আলি এ দেশের সংসদীয় ও ছাত্র রাজনীতির অতি-সরলীকরণ করে ফেলেছেন তাঁর সিরিজ়ে। প্রধানমন্ত্রিত্বের মসনদ দখলের জন্য পরিবারতন্ত্রের লড়াই, প্রতিবাদে গর্জে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, সেখান থেকে উঠে আসা ছাত্রনেতা, জমি কেড়ে নিতে চাওয়া সরকারের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন, দলিতদের অপমান, সংখ্যালঘুকে সহজ টার্গেট করতে চাওয়া— সাম্প্রতিক অতীতের প্রায় সব ক’টি চর্চিত বিষয়ের দিকে বোধহয় একসঙ্গে আঙুল তুলতে চেয়েছিলেন পরিচালক। মুশকিল হল, সেটা করতে গিয়ে অতিনাটকীয়তার পারদ চড়েছে। চটিয়ে দেওয়া হয়েছে সরকার ও ধর্মের কারবারিদের একাংশকেও!

সিরিজ়ের প্রথম পর্বে দেখানো হয়, প্রধানমন্ত্রীরূপে শপথ নেওয়ার আগেই দেবকীনন্দনকে (তিগমাংশু ধুলিয়া) হত্যা করে তার ছেলে সমরপ্রতাপ (সেফ আলি খান)। কিন্তু শেষরক্ষা হয় না, তাকে ব্ল্যাকমেল করে গদি দখল করে অনুরাধা (ডিম্পল কাপাডিয়া), যে দেবকীর ‘খাস’ লোক, ক্যাবিনেটের অন্যতম স্তম্ভ। দাবিদারের সংখ্যা কম নয়। তাই ক্যাবিনেটের মধ্যে জারি থাকে অন্তর্দ্বন্দ্ব। উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ইউনিভার্সিটি পলিটিক্সের সাহায্য নেওয়া, সেখানে প্রেম ও বিশ্বাসঘাতকতার সমীকরণ— চেনা ছকে পড়ে যায় গল্প। সমরের কুকীর্তি ফাঁস হয়ে যাবে কি না, এমন একটা চমৎকার সাসপেন্সকেও ঠিকমতো যেন কাজে লাগানো হয়নি। জেএনইউ-এর আদলে ভিএনইউ, সেখানে কানহাইয়া কুমার ধাঁচের তরুণ ছাত্রনেতা শিবা শেখর (মহম্মদ জ়িশান আয়ুব), প্রধানমন্ত্রী অনুরাধার চরিত্রে ইন্দিরা গাঁধীর ছায়া— এমন বহু ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছেন নির্মাতারা। কিন্তু সবক’টিই চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা। সংসদীয় গণতন্ত্র, মন্ত্রিসভা যে আবেগে চলে না, তা বোধহয় ভুলে গিয়েছিলেন সিরিজ়ের লেখক গৌরব সোলাঙ্কি। ‘আর্টিকল ফিফটিন’-এর মতো ছবির স্ক্রিনরাইটারের কলমের ধার এমন ভোঁতা, মেনে নিতে কষ্ট হয়। ধীর লয়ে এগোনো ন’টি পর্বের শেষে রয়েছে আগামী সিজ়নের পূর্বাভাস।

তরুণ ছাত্রনেতা শিবার এন্ট্রি সিনেই উঠেছে ওজর-আপত্তি। সম্প্রতি বাদ পড়া সেই দৃশ্যে দেখানো হয়েছিল, মঞ্চে শিব ও নারদের কিছু কথোপকথন। এনআরসি ও সিএএ বিরোধিতায় একসময় সরব অভিনেতা জ়িশানের হিন্দু দেবতার বেশে এসে রামের টুইটার ফলোয়ার ও ‘আজ়াদি’ নিয়ে সংলাপ আওড়ানোয় আপত্তি উঠেছে। দলিতকেন্দ্রিক মন্তব্যেও কোপ পড়েছে। ওয়েবে সেন্সরের চোখরাঙানি নেই বলেই যে শিল্পীর স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার রয়েছে, এমন আশা করার মাশুল এখন দিতে হচ্ছে নির্মাতাদের।

সেফ আলি খান কাহিনির মুখ। খলনায়কোচিত অভিব্যক্তিতে মোড়া চরিত্রটিতে সেফের অভিনয়-ক্ষমতার প্রতি সুবিচার করা হয়নি। জ়িশান সাবলীল, কিন্তু চিত্রনাট্যের সামনে হাত-পা বাঁধা মনে হয় তাঁকে। একই কথা প্রযোজ্য ডিম্পল কাপাডিয়ার ক্ষেত্রেও। অমন ব্যক্তিত্বময়ী চরিত্রের অসহায়তা ঢাকতে পারেনি দুর্বল চরিত্রনির্মাণ। ডিনো মোরিয়া অনেক দিন পরে এসেও নজর কাড়তে ব্যর্থ। তাঁর প্রেমিকার চরিত্রে কৃতিকা কামরার অভিনয় একটু একপেশে। অভিনয়ে সেরা প্রাপ্তি সুনীল গ্রোভার। সমরের ডান হাত ঠান্ডা চাহনির গুরপালের চরিত্রটি কমেডিয়ান সুনীলকে ভুলিয়ে দেবে। ক্যাম্পাসের দৃশ্যে এ আর রহমানের কণ্ঠে ‘যুবা’র গানটি বেশ লাগসই।

আলি আব্বাসের প্রথম ওয়েব প্রজেক্ট এটি। তাঁর সঙ্গে প্রকাশ ঝা কিংবা অনুভব সিংহের ছবির ভাষা মিলবে না, সেটাই স্বাভাবিক। তবে নিজের মতো করেও দাগ কেটে যেতে পারে না এ সিরিজ়। তাণ্ডবনৃত্যই সার!

Web Series Movie Review Saif Ali Khan Amazon Prime Controversey Tandav

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।