ঋষি কপূরের সঙ্গে শেষ ছবিতে কাজ। অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন মুম্বইয়ের তরুণ অভিনেতা তারুক রায়না। তিনি জানালেন কতটা ভয়ে ছিলেন, কেমন করে সেই ভয় কাটল। ঋষি কপূরের মতো বর্ষীয়ান অভিনেতার কাছে কী কী শিখতে পারলেন, জানালেন তা-ও। আর সঙ্গে বললেন অন্যান্য কাজের গল্প।
ঋষির সঙ্গে তারুক
ঋষি কপূরের সঙ্গে তাঁর শেষ ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন। সেই দিনগুলো ফিরে দেখলেন তরুণ অভিনেতা তারুক রায়না। তার পাশাপাশি আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন তাঁর অন্যান্য কাজ থেকে শখের খুঁটিনাটিও।
প্রশ্ন: ‘শর্মাজি নমকিন’ ছবিতে খোদ ঋষি কপূরের সঙ্গে অভিনয়! ভয় করেনি?
তারুক: করেনি আবার! নার্ভাস হয়ে, ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসত। তখন মোটে বাইশ বছর বয়স আমার। আর সামনে ওই রকম এক জন অভিনেতা! প্রত্যেকটা শট দেওয়ার আগে ভাবতাম, ভুল যেন না হয়! কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম ঋষিজির মতো এত বড় মাপের অভিনেতা কী সুন্দর করে আমাকেও সহজ করে দিলেন। আমিও বুঝে গেলাম, এই অভিজ্ঞতাটা আসলে আমার জন্য যত না নিজের অভিনয় করার, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি হল ওঁর থেকে কাজ শেখার।
প্রশ্ন: কী কী শিখতে পারলেন ঋষি কপূরের থেকে?
তারুক: অ-নে-ক কিছু। কী করে চরিত্রে পুরোপুরি ঢুকে পড়তে হয়, কী করে চরিত্রটাকে জীবন্ত করে তুলতে হয়, কী ভাবে সংলাপ বা অভিব্যক্তি বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হয়, ওঁকে দেখে শিখলাম। এতদিনের এক জন অভিনেতা, এত জনপ্রিয় তারকা, তবু এই বয়সেও কী অসম্ভব মনোযোগ আর পরিশ্রমে অভিনয় ফুটিয়ে তোলেন। কী অসম্ভব প্রাণবন্ত এক জন মানুষ ঋষিজি! হাসতেন, হাসাতেন, হইহই করতেন। ফ্লোরে ওঁকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না মানুষটা এত অসুস্থ! তার পর তো শ্যুটিং করতে করতেই চলে গেলেন। আমাদের সবার জন্য যে সেটা কত বড় ধাক্কা ছিল!
প্রশ্ন: শ্যুটের ফাঁকে আড্ডা হতো? ঋষিজির পুরনো ছবি, শ্যুটিং নিয়ে?
তারুক: রোজ শটের ফাঁকে, বিরতিতে প্রচুর আড্ডা হতো ঋষিজির সঙ্গে। তবে ছবি করা, কেরিয়ার, শ্যুটিংয়ের মতো গুরুগম্ভীর বিষয় বাদ। আমাদের চর্চা বাধ্যতামূলক ভাবে ছিল খাবারদাবার নিয়ে! ব্রেকফাস্টে আলোচনা হতো লাঞ্চে কী খাওয়া যায়, লাঞ্চে আলোচনা হতো বিকেলে কী খাব, বিকেলে আবার ডিনারের পরিকল্পনা! (হাসি) সত্যি বলতে কী, অন্য কোনও বিষয় নিয়ে কথা বলার থাকলেও তার শুরুটা হতো খাওয়া নিয়ে! আসলে ঋষিজি অসম্ভব খেতে ভালবাসতেন। আমিও তাই। এখন বুঝি এ রকম হাল্কা আলোচনা করে করেই উনি আমার ভয়টা কাটিয়ে দিয়েছিলেন। কী যে মিস করি ওঁকে এখন!
প্রশ্ন: ঋষিজির মৃত্যুর পরে ওঁর অসমাপ্ত চরিত্রে কাজ করলেন পরেশ রাওয়াল। সে অভিজ্ঞতা কেমন?
তারুক: পরেশজিও তো অনবদ্য অভিনেতা। ওঁর থেকে শিখলাম, কী ভাবে অন্য এক জনের করে যাওয়া চরিত্রে মাঝপথে ঢুকেও কী ভাবে অনায়াসে মানিয়ে নেওয়া যায়। ঠিক দশ মিনিট লেগেছিল ওঁর, ঋষিজির করে যাওয়া চরিত্রে ঢুকে পড়তে। এ ভাবে ঋষিজির অভিনীত চরিত্রে মাঝপথে ঢুকে তার কাজ শেষ করা— পরেশজির মতো বড় অভিনেতার তাতে রাজি হওয়া, সেই চ্যালে়ঞ্জটা নেওয়াও তো বিরাট ব্যাপার। ভীষণ বড় মনের পরিচয় দেওয়ার মতো ঘটনাও বটে। আসলে সত্যিকারের বড় অভিনেতারা বোধহয় এমনই হন।
প্রশ্ন: ছবির শ্যুটিংয়ে এত রকম বাধা, বাড়তি অনেকটা সময় লাগা— চ্যালেঞ্জ ছিল?
তারুক: নিশ্চয়ই। কম বাধা তো এল না! ঋষিজির টানা অসুস্থতা, আচমকা মৃত্যু, অতিমারি, লকডাউনে কাজ বন্ধ, ফের কোভিড-বিধি মেনে শ্যুটিং— কত রকমের চ্যালেঞ্জ। আমাদের পরিচালক, প্রযোজকের বিরাট কৃতিত্ব যে এত কিছু সামলেও ওঁরা ছবির কাজ শেষ করেই ছাড়লেন! আমাদের পরিচালকও নতুন, তাতেও এই লড়াইটা সাহস করে লড়লেন। ওঁকে কুর্ণিশ!
প্রশ্ন: ওটিটি সিরিজ ‘মিসম্যাচড’-এ অ্যাপ তৈরি করতে দেখা গিয়েছিল আপনাকে। বাস্তবে পারেন?
তারুক: একেবারেই না! একটুও জানি না। চরিত্রের প্রয়োজনে যেটুকু দরকার বুঝেছিলাম। ওখানে আমার চরিত্র অনমোল একটা গেমিং অ্যাপ তৈরি করেছিল প্রতিযোগিতায়। সেই প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে একঝাঁক কিশোর-কিশোরীর সম্পর্ক, তার টানাপড়েনের গল্প এগোয়। অ্যাপ তৈরির খুঁটিনাটি শিখতে হয়নি ভাগ্যিস! (হা হা হাসি)
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক সিরিজ ‘জুগাড়িস্তান’-এ কেমন চরিত্রে আছেন?
তারুক: ‘জুগাড়িস্তান’-এ সূক্ষ্ম রাজনীতির গল্প। কলেজপড়ুয়াদের জীবনে রাজনীতি ঢুকে পড়া, সেই খোলসে জীবন-মানসিকতা পাল্টে যাওয়া, রাজনীতির আড়ালে আসল চেহারা— সবটাই তুলে ধরা হয়েছে। আমার চরিত্র যা চায়, তা যে কোনও মূল্যে পেতে চায়। আর সেটা করতে গিয়ে তার জীবনে কতটা ওঠাপড়া আসে, সেটাই উঠে আসবে কাহিনিতে।
প্রশ্ন: বাস্তবে আপনি বেশি দিন আগে কলেজ-জীবন পেরোননি। মিল পেলেন তার সঙ্গে?
তারুক: একেবারেই পাইনি! (হাসি) আসলে আমি অস্ট্রেলিয়ার এক কলেজে পড়েছি। ওখানে কলেজ-জীবনের স্বাদ এখানকার থেকে অনেকটাই আলাদা। তবে হ্যাঁ, ওখানেও রাজনীতি বা টানাপড়েন ছিল না, এমন নয়। তবে তার চরিত্র সিরিজে দেখানো দিল্লির কলেজ-জীবনের চেয়ে অনেকখানিই অন্য রকম।
প্রশ্ন: শুনেছি আপনি থিয়েটার বা গানের জগতেরও মানুষ। এত কিছু সামলান কী করে?
তারুক: সামলাতে হয় না, নিজে থেকেই ঠিকঠাক হয়ে যায় সব। আসলে এগুলো তো ভালবাসার জায়গা। থিয়েটারে আমি অভিনয় শিখেছি। রিটেক ছাড়া সরাসরি দর্শকের সামনে সংলাপ বলা, অভিব্যক্তি দেওয়া পর্দার অভিনয়ের ক্ষেত্রে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। আমাকে তৈরিও করে দিয়েছে অনেকটা। আর গান আমার প্রথম প্রেম। আমি আগে গানের মানুষ। পরে অভিনয়ের। নিজে গাই, সুর দিই।
প্রশ্ন: পর্দায় নিজের চরিত্রের জন্য গাইতে বা গানে সুর দেওয়ার ইচ্ছে আছে?
তারুক: ইচ্ছে শুধু নয়। বাস্তবেও হয়েছে। ‘মিসম্যাচড’-এ। মাঝে পরপর শ্যুটের চাপে গানকে ঠিকমতো সময় দেওয়া হয়ে ওঠেনি। ইচ্ছে আছে এ বছর বা আগামী বছরের শুরুতে যদি নিজের একটা অ্যালবাম করতে পারি। দেখা যাক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy