Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
পরাজয় ভুলে ফের মানুষের মন জিতে নে‌ওয়ার কাজে নেমেছেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
Sayantika Banerjee

নায়িকা মানেই শখের রাজনীতি নয়, এটা মানুষ বুঝেছেন

পরাজয় ভুলে ফের মানুষের মন জিতে নে‌ওয়ার কাজে নেমেছেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়

সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২১ ০৭:২৫
Share: Save:

ভোট মিটলেই নেতা-মন্ত্রীদের দেখা পাওয়া যায় না— দল-মত নির্বিশেষে এটা চালু প্রবাদ। সেই ভোটপ্রার্থী যদি বিনোদন জগৎ থেকে আসেন, তবে ওই আপ্তবাক্যে অদৃশ্য সিলমোহর পড়ে যায়। এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে একাধিক ওজনদার তারকাপ্রার্থী দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে পরাজিত তারকারা ফের নিজ বৃত্তে ফিরে যাবেন, এমনটাই মনে করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু তারকা হেরে গিয়েও ময়দানে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনের ঠিক আগেই তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন বাঁকুড়া থেকে। তবে তিনি যে সিরিয়াস রাজনীতি করতে পারেন, এই ধারণা ইন্ডাস্ট্রির অধিকাংশেরই ছিল না। ‘‘আমি কিন্তু শুরু থেকেই সিরিয়াস ছিলাম। অন্যরা কী ভেবেছিলেন, জানি না। হয়তো নার্ভাস ছিলাম প্রথমে, কিন্তু এই কাজের গুরুত্ব বুঝেই এসেছি। হেরে গিয়ে পিঠটান দেব না,’’ বলছেন সায়ন্তিকা।

পরাজয়ের দুঃখ তাঁর আছে। তা গোপন না করেই বললেন, ‘‘হার মেনে নিতে সত্যিই কষ্ট হয়েছিল। খুব কম ভোটে হেরেছি। তার পর নিজেকে শক্ত করলাম। ধীরে ধীরে কাজ শুরু করলাম। সময় নষ্ট করে তো লাভ নেই, আমি ওখানকার মানুষদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। এখন যেমন আমার হারানোর কিছু নেই।’’ বাঁকুড়ার কোভিড পরিস্থিতির জন্য একগুচ্ছ ব্যবস্থা নিয়েছেন সায়ন্তিকা। হেল্পলাইন নম্বর, অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা, দুয়ারে অক্সিজেন, সেফ হোম, কোভিড ফিল্ড হাসপাতাল ইত্যাদি চালু করেছেন। বলছিলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জন্য কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিলাম, তবে ঝড়ে বাঁকুড়ায় তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি। কোভিড নিয়েই বেশি চিন্তা। একটা গ্রামের ২৪টা পরিবার একসঙ্গে আক্রান্ত হয়েছিল! কলকাতা থেকেই যেটুকু পেরেছি, ব্যবস্থা করেছি।’’

তাঁর সদিচ্ছা দেখেই হয়তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। নতুন দায়িত্ব পেয়ে সায়ন্তিকা যেমন গর্বিত, কিছুটা নার্ভাসও। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও আভাস ছিল না আমার কাছে। দিদি আমাকে যোগ্য মনে করেছেন, তার জন্য আমি সম্মানিত। রাজনীতির অভিজ্ঞতা কম বলে, অনেক কিছুই নতুন ঠেকছে। তবে ভাল লাগছে কাজগুলো করতে।’’ গত সপ্তাহেই বাঁকুড়া গিয়েছিলেন অভিনেত্রী। তাঁর বাবার করোনা হওয়ায় আগে যেতে পারেননি। বলছিলেন, ‘‘বাবার করোনা হল, আমি চলে গেলে মা একেবারে একা হয়ে যেত। আমার কলকাতায় থাকাটা জরুরি ছিল। এখান থেকে ফোনে স্থানীয় কর্মী, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই সব ব্যবস্থা করেছি। ভোটের রেজ়াল্ট বেরোনোর দিন আমি বাঁকুড়ায় ছিলাম। তার ঠিক এক মাস পরে ২ জুন আবার গেলাম। ওখানে গিয়ে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিল, ঠিক বলে বোঝাতে পারব না। আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম!’’

তাঁর এবং অন্য নায়িকাদের রাজনীতিতে আসা নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রুপের ঝড় বয়ে গিয়েছিল। সায়ন্তিকা অবশ্য স্পষ্ট করে দিলেন, তিনি নেগেটিভিটিকে প্রশ্রয় দিতে চান না। তাঁর মতে, ‘‘কাজ করার ইচ্ছেটাই আসল। যোগ্য মনে করেছেন বলেই দিদি আমাদের উপরে ভরসা রেখেছেন। নায়িকা মানেই শখের রাজনীতি করতে এসেছে, এই ভুলটা অন্তত ভেঙেছে। মানুষ বুঝবেন, আমরা তাঁদের পাশে আছি।’’ সায়ন্তিকা এখনও মনে করেন, মানুষের জন্য কাজ করতে চাইলে রাজনীতিতে আসা জরুরি নয়। এই কোভিড পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ যে ভাবে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেই দৃষ্টান্তের কথা উল্লেখ করলেন। ‘‘গত বছর লকডাউনের সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে মিলে আমি খাবার বিলি করেছি। তখন তো রাজনীতির ধারে পাশেও ছিলাম না। ইচ্ছে থাকলেই কাজ করা যায়। তবে হ্যাঁ, রাজনীতি কিছু বাড়তি সুবিধে দেয়। এই মঞ্চটা আমার কাছে আছে বলেই কলকাতায় বসে বাঁকুড়ার মানুষের জন্য সব ব্যবস্থা করতে পারলাম,’’ বক্তব্য সায়ন্তিকার। ফের কবে পর্দার সামনে তাঁকে দেখা যাবে তা নির্ভর করছে, ভাল চিত্রনাট্যের উপরে। এখন জনসেবার পাশাপাশি জিম, মিউজ়িক আর পোষ্য— এই নিয়েই সময় কাটছে রাজনীতির আঙিনার এই নতুন শিক্ষার্থীর।

অন্য বিষয়গুলি:

Sayantika Banerjee West Bengal Assembly Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy