Advertisement
০৭ নভেম্বর ২০২৪
Swastika Mukherjee

‘১০ বছর হয়ে গেল মা চলে গিয়েছেন, এখনও পারছি না’, স্মৃতি হাতড়ে কাকে বিদায় জানালেন স্বস্তিকা?

মধ্যবিত্ত বাঙালি শুধু প্রিয়জনদের আঁকড়ে ধরে বাঁচে না। তাঁদের ব্যবহার করা ছোট ছোট জিনিসের সঙ্গেও আবেগ মিলেমিশে যায়।

Swastika Mukherjee pens a heartfelt note as she has to bid a goodbye to her old micro oven

ভারাক্রান্ত মন নিয়ে স্মৃতিতে ডুব দিলেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:১৬
Share: Save:

সোজা কথা সোজা ভাবে বলা স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের অভ্যাস। অন্যায় দেখলে সরাসরি প্রতিবাদ করেন তিনি। আবার মনখারাপের কথাও খোলাখুলি বলতে রাখঢাক করেন না। মধ্যবিত্ত বাঙালি শুধু প্রিয়জনদের আঁকড়ে ধরে বাঁচে না। তাঁদের ব্যবহার করা ছোট ছোট জিনিসের সঙ্গেও আবেগ মিলেমিশে যায়। বাড়ির কোণে রাখা জড়বস্তুও যেন মধ্যবিত্ত পরিবারে প্রাণ পায়। তাই তাকে বিদায় জানানোর সময়েও ভার হয় মন। এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে স্বস্তিকারও।

স্বস্তিকা তাঁর বাড়ির পুরনো মাইক্রোঅভেনের কথা লিখেছেন। তবে সেই লেখা পড়ে অনুরাগীদের ধারণা, যেন কোনও প্রিয়জনের জন্য আবেগ উজাড় করেছেন অভিনেত্রী। তিনি লেখেন, “একটা বৈদ্যুতিন যন্ত্রের প্রতি যে এতটা ভালবাসা লেগে আছে, একটা যন্ত্র খারাপ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে যে মনখারাপের এমন একটা সংযোগ আছে, তাতে যে গলা বন্ধ হয়ে কান্না উঠে আসতে পারে তা আগে জানা ছিল না।”

একটা যন্ত্রের প্রতি কি এতটা টান থাকতে পারে? এই মনখারাপকে হয়তো মানুষ অসুখের তকমা দেবে, মনে করেছেন স্বস্তিকা। তাই অভিনেত্রীর স্বীকারোক্তি, মনখারাপের অসুখ তাঁর আছে। সব কিছুর জন্য প্রবল ভাবে অনুভূতি থাকা বেশ যন্ত্রণার।

ভারাক্রান্ত মন নিয়ে স্বস্তিকা লেখেন, “আমার বাড়ির মাইক্রোঅভেনটার আয়ু শেষ হল। ওর বয়স আমার মেয়ের চেয়েও বেশি। বাড়িতে বিয়ের ম্যারাপ বাঁধা হলে যেমন অনেক নতুন জিনিস কেনা হয়, ১৯৯৮ সালে ও নতুন হয়ে আমাদের কাছে এল। তার পর জীবন চলিয়া যায় নদীর স্রোতের প্রায়।”

মাইক্রোঅভেন নির্মাতা সেই সংস্থাটিই উঠে গিয়েছে। অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে স্বস্তিকার জীবনেও। তিনি লিখেছেন, “কোম্পানি উঠে গেল। সম্পর্ক চুকে গেল। আমি মা হলাম। মাকে হারালাম। বাড়িতে সাদা কাপড় জড়ানো শ্রাদ্ধের ম্যারাপ বাঁধা হল। জীবনের কত শত ঝড়ঝাপটা পেরোলাম। নাম হল। কত মানুষ, কত কিছু এলো গেল। মাইক্রোঅভেনটা রয়ে গেল।”

মাইক্রোঅভেন নিয়ে স্বস্তিকা লেখেন, “গত এক বছরে ও নানা ভাবে জানান দিয়েছে, ওর চলে যাওয়ার সময় আসন্ন। তা-ও আমি সব কিছু দিয়ে চেষ্টা করেছি ওকে আটকে রাখার। বার বার ভেবেছি, আহা রে, মা কত উৎসাহ নিয়ে ওকে বাড়ি এনেছিল। কত রকম নতুন পদ্ধতিতে রান্না করে খাওয়াত। চার বেলা আর ঘামতে ঘামতে গ্যাসে খাবার গরম করতে হবে না। এই নিয়ে মা যতটা উৎফুল্ল ছিল, কোথাও যেন এই মেশিনটা মায়ের সব অনুভূতিকে নিজের মধ্যে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছে।”

১৯৯৮ সাল থেকে স্বস্তিকার পরিবারের সদস্য।

১৯৯৮ সাল থেকে স্বস্তিকার পরিবারের সদস্য। ছবি: ফেসবুক

মেয়ে অন্বেষার জন্মের আগের স্মৃতিও উঠে এসেছে স্বস্তিকার লেখায়। তাঁর কথায়, “মানি তখনও আমার পেটে। তার পর সন্তান হল। সে বাড়ি এল। বড় হল। মানির ছোটবেলাটাও যেন ওর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। রাতের বেলা খিটখিট করতে করতে বাবার খাবার গরম করাটাও ওর কাছেই আটকে আছে। কত স্মৃতি-বিস্মৃতি। ভাবতে বসলে ভাবার অন্ত নাই। জীবনের ২৬টা বছরের সাক্ষী এই মাইক্রোঅভেন।”

পুরনো মাইক্রোঅভেনের জায়গায় ইতিমধ্যেই নতুন যন্ত্র জায়গা করে নিয়েছে। তাই নিয়ে চোখে জলও এসেছে স্বস্তিকার। ও আর ডাইনিং রুমের পাশের টেবিলটায় থাকবে না, অন্য কেউ, নতুন কেউ এসে ওর জায়গাটা নিয়ে নেবে ভেবে চোখে জল এল। মাসির কথা মতো ওকে নামিয়ে মাটিতে রাখলাম। নতুনের জায়গা করতে, ২-৩ দিন ধরে ওই ভাবেই মাটিতে বসে ও যাওয়ার অপেক্ষা করছিল। বাড়ির ভিতর নড়ছিচড়ছি আর ভাবছি। তবু তো আছে।”

পুরনো জিনিসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আপনজনের স্পর্শ। তাই স্বস্তিকা লেখেন, “মা-বাবা চলে যাওয়ার পর অনেক শুভানুধ্যায়ী বলেছিলেন, অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকার চেয়ে চলে যাওয়াই ভাল। ঈশ্বরের অনেক কৃপা, বেশি যন্ত্রণা পেতে হয়নি, চলে গিয়েছে। এ রকম মৃত্যু ভাগ্যের কথা। মাকে নিয়ে চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, ‘‘উনি থাকলে কিন্তু নিষ্ক্রিয়-স্থবির হয়ে পড়ে থাকবেন। এর চেয়ে না থাকাই ভাল।’’’

অন্য বিষয়গুলি:

Swastika Mukherjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE