একটি মৃত্যু যেন মৌচাকে ঢিল ছুড়েছে। নিজেদের বঞ্চনা নিয়ে একের পর তারকা যেমন মুখ খুলছেন, তেমনই কিছু জনের মৌরসিপাট্টা টলে গিয়েছে। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুতে প্রশ্নের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে সলমন খান, কর্ণ জোহর, আদিত্য চোপড়ার মতো প্রভাবশালীদের। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তারকাদের সোশ্যাল মিডিয়ার ভক্ত তালিকাতেও। গত কয়েক দিনে কর্ণ জোহর, আলিয়া ভট্ট, সলমন খানের ভক্তসংখ্যা কমেছে চোখে পড়ার মতো। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার্স দিয়ে অনেক কিছুরই বিচার হয়। জনপ্রিয়তা থেকে ব্র্যান্ড ভ্যালু। সে ক্ষেত্রে এই ধরনের নেতিবাচক জনমত যে তারকার ইমেজের পক্ষে ক্ষতিকারক, তা বলাই বাহুল্য।
ইনস্টাগ্রামে ১৪ জুন পর্যন্ত কর্ণের ফলোয়ার্স ছিল ১১.৭ মিলিয়নের মতো। ১৮ তারিখের মধ্যে সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে ১০.৮ মিলিয়ন। গত পাঁচ দিনে আলিয়া হারিয়েছেন দু’লক্ষেরও বেশি ফলোয়ার। সুশান্তের মৃত্যুর পরোক্ষ কারণ হিসেবে কর্ণ, সলমন, আদিত্য, সঞ্জয় লীলা ভন্সালীকে দায়ী করছে ইন্ডাস্ট্রির একাংশ। বলা হচ্ছে, মূলত এঁদের কারণেই সুশান্তের হাত থেকে পরপর ছবি বেরিয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াও এই তর্কে ইন্ধন জুগিয়েছে। এর জেরে পটনা কোর্টে মামলাও দায়ের করা হয়েছে বলিউডের আট প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। তার মধ্যে একতা কপূরেরও নাম রয়েছে, যিনি সুশান্তকে লঞ্চ করেছিলেন। তবে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছেন কর্ণ। সেই সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে আলিয়া ভট্টর নামও। ‘কফি উইথ কর্ণ’-এ আলিয়া ও কর্ণ একবার ‘কে সুশান্ত?’ বলে হাসাহাসি করেছিলেন। সেই ফুটেজ এখন ভাইরাল। তার সঙ্গেই শুরু হয়ে গিয়েছে #বয়কট কর্ণ জোহর বা #বয়কট স্টার কিডস মুভি। পটনায় এ দিন কর্ণের কুশপুত্তলিকাও পোড়ানো হয়েছে। অন্য দিকে কর্ণও সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অ্যাক্টিভিটি কমিয়ে দিতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে। টুইটারে তিনি যাঁদের ফলো করতেন, সেই সংখ্যায় কাটছাঁট করেছেন কর্ণ। নরেন্দ্র মোদী, শাহরুখ খান, অক্ষয়কুমার-সহ মোট আটজনকে টুইটারে এখন ফলো করছেন পরিচালক।
ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ার্স কমেছে সোনম কপূরেরও। ‘‘কারও মৃত্যুর কারণ হিসেবে তাঁর প্রেমিকা, প্রাক্তন প্রেমিকা, পরিবার, সহকর্মীদের দোষারোপ করাটা ন্যক্কারজনক,’’ সুশান্তের মৃত্যুর পরে সোনমের টুইট। সেই টুইটের নীচেই বয়ে যায় নেতিবাচক মন্তব্যের বন্যা। একজন ‘কফি উইথ কর্ণ’-এর একটি ফুটেজ পোস্ট করেছেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে, কর্ণ প্রশ্ন করছেন সোনমকে ‘‘সুশান্ত সিংহ রাজপুত, হট অর নট?’’ তাতে সোনমের মুখভঙ্গি বলে দিচ্ছে, তিনি কী মনোভাব পোষণ করেন। অনিল কপূরের মেয়ে হওয়ার সুবাদে সোনম কাজ পেয়েছেন, তাঁর হিটের চেয়ে ফ্লপের সংখ্যা বেশি, অভিনেত্রীর অভিনয় দক্ষতাকে কটাক্ষ— এমন হাজারো মন্তব্য আছড়ে পড়েছে সোনমের সেই পোস্টের প্রতিক্রিয়ায়। ইনস্টাগ্রামে নায়িকার ভক্ত সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজারের মতো কমে গিয়েছে এই ক’দিনে। এই পরিসংখ্যান কিন্তু কর্ণ, আলিয়া বা সোনমের কপালে ভাঁজ ফেলার জন্য যথেষ্ট। এই হ্যাশট্যাগ আন্দোলন হয়তো কিছু দিন পরে স্তিমিত হয়ে যাবে। কিন্তু এর জেরে কোনও ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্ট হাতছাড়া হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।
আরও পড়ুন: অন্য রূপে ফিরছে শবর
এ ক’দিনে সলমন খানের ৮৬ হাজার ভক্তসংখ্যা কমেছে ইনস্টাগ্রামে। সুশান্তের মৃত্যুর পরে টুইটারে ‘ইউ উইল বি মিসড’ লিখেছিলেন সলমন। কিন্তু চলতে থাকা এই বিতর্ক নিয়ে মুখ খোলেননি তিনি। ‘দবং’-এর পরিচালক অভিনব সিংহ কাশ্যপ তাঁর বিরুদ্ধে গুচ্ছের অভিযোগ আনলেও, সলমন চুপ। তবে তিনি অন্য ভাবে ইমেজ মেরামতের কাজ শুরু করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ফেডারেশন অব ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনে এমপ্লয়িজ় থেকে সলমন খানকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘সোলো লিডের অনেক ছবি রিলিজ করেনি’
করোনাভাইরাসের জেরে বন্ধ থাকা ইন্ডাস্ট্রির টেকনিশিয়ানদের পাশে কী ভাবে সলমন দাঁড়িয়েছেন, তা ব্যাখ্যা করে ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে অভিনেতাকে। হঠাৎ এত দিন পরে এই চিঠির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বাকি যাঁরা টেকনিশিয়ানদের সাহায্য করেছেন, তাঁদেরই বা কেন ধন্যবাদ জানানো হল না, সে প্রশ্নও উঠেছে।
ভক্তসংখ্যা বাড়া-কমা হয়তো চলতে থাকবে। সুশান্তের মৃত্যু যে প্রশ্নগুলো তুলে দিয়ে গেল, বলিউডের প্রভাবশালী গোষ্ঠী তার মোকাবিলায় কী স্ট্র্যাটেজি নেয়, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy