Surekha Sikri is veteran actress of bollywood dgtl
Bollywood
Surekha Sikri: নাসিরুদ্দিনের প্রাক্তন শ্যালিকা, চিকিৎসার অর্থও ছিল না সুরেখার
অভিনয়জীবনের প্রথম দেড় দশক সুরেখা শুধুমাত্র থিয়েটারে অভিনয় করেছিলেন। দিল্লির মঞ্চ জগতে তিনি ছিলেন উল্লেখযোগ্য নাম।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২০ ১২:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২২
কলেজজীবনে ভালবাসতেন লেখালেখি করতে। ইচ্ছে ছিল পরে সাংবাদিক হবেন। কিন্তু জীবন তাঁর জন্য ভেবে রেখেছিল অন্য কিছু। ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলটের মেয়ে সুরেখা সীকরী হয়ে গেলেন বলিউডের তিন বার জাতীয় পুরস্কারজয়ী অভিনেত্রী।
০২২২
অবিভক্ত ভারতের দিল্লিতে ১৯৪৫ সালের ১৯ এপ্রিল জন্ম সুরেখার। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ার পরে তিনি ভর্তি হন ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায়। ভর্তির সুযোগ আসে আচমকাই।
০৩২২
সুরেখার সৎ বোন ছিলেন মানারা। তাঁর শখ ছিল অভিনেত্রী হওয়ার। তিনি নিজের জন্য এনএসডি-র ফর্ম এনেছিলেন। কিন্তু পরে মত পরিবর্তন করে তিনি ডাক্তারি পড়েন। মায়ের কথায় বাড়িতে পড়ে থাকা সেই ফর্ম ভর্তি করে আবেদন করেছিলেন সুরেখা।
০৪২২
তার পর পাল্টে গিয়েছিল তাঁর জীবনের গতিপথ। দিল্লি থেকে মুম্বই আসার আগে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছিলেন এনএসডি-র হয়ে। এনএসডি তাঁকে অভিনয় ও নাটকের খুঁটিনাটি এবং কাজের প্রতি শ্রদ্ধা শিখিয়েছিল হাতে ধরে। পরে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন সুরেখা।
০৫২২
প্রসঙ্গত সুরেখার বোন মানারা ছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহের প্রথম পক্ষের স্ত্রী। পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বয়সে ১৪ বছরের বড়, পেশায় চিকিৎসক মানারাকে বিয়ে করেছিলেন সদ্য কুড়ির কোঠায় পা রাখা নাসিরুদ্দিন। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরে দু’জনেই আবার বিয়ে করেন।
০৬২২
নাসিরুদ্দিন এবং প্রয়াত মানারার একমাত্র মেয়ে হীবাও এক জন অভিনেত্রী। তিনি থাকেন নাসিরুদ্দিন ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী রত্না ও দুই সৎ ভাইয়ের সঙ্গে। সুরেখার সঙ্গেও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল তাঁর দিদির মেয়ের হীবার।
০৭২২
অভিনয় জীবনের প্রথম দেড় দশক সুরেখা শুধুমাত্র থিয়েটারে অভিনয় করেছিলেন। দিল্লির মঞ্চ জগতে তিনি ছিলেন উল্লেখযোগ্য নাম। সে সময় বহু নাটকে তিনি কাজ করেছিলেন ওম পুরী, রঘুবীর যাদব এমনকি, নাসিরুদ্দিন শাহের সঙ্গেও।
০৮২২
অর্থ এবং বৃহত্তর পরিচিতির জন্য সুরেখা পরে পা রেখেছিলেন সিনেমা জগতে। ১৯৭৮-এ মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কিস্সা কুর্সী কা’ ছবিতে প্রথম দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
০৯২২
গোবিন্দ নিহালনির ছবি ‘তমস’-এ অভিনয়ের জন্য সুরেখা শ্রেষ্ঠ সহঅভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন।
১০২২
১৯৯৪ সালে শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘মাম্মো’-র জন্যেও জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন সুরেখা।
১১২২
তৃতীয় জাতীয় পুরস্কার আসে ২০১৮ সালের ছবি ‘বধাই হো’-র সুবাদে। কোনওদিন নায়িকা হিসেবে অভিনয় না করলেও চরিত্রাভিনয়কে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন অন্য স্তরে।
১২২২
‘পরিণতি’, ‘নজর’, ‘সরদারী বেগম’, ‘সরফরোশ’, ‘দিল্লগি’, ‘জুবেইদা’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’, ‘রেনকোট’, ‘তুম সা নহিঁ দেখা’, ‘জো বোলে সো নিহাল’ এবং ‘দেব ডি’ তাঁর কেরিয়ারের উল্লেখযোগ্য ছবি।
১৩২২
মূল বাণিজ্যিক এবং সমান্তরাল, দুই ধরনের ছবিতে যে সব কুশীলব জনপ্রিয় হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে সুরেখা ছিলেন অন্যতম।
১৪২২
ছোট পর্দাতেও সুনামের সঙ্গে কাজ করেছিলেন সুরেখা। ‘বালিকা বধূ’ সিরিয়ালে তাঁর অভিনীত ‘দাদীসা’ চরিত্রটি তো ভারতীয় বিনোদনের দুনিয়ায় আইকনিক। দাদীসার শৈশবের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সুরেখার বোনঝি হীবা।
১৫২২
২০১৯-এ মহাবালেশ্বরে শুটিংয়ের সময় ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। বেশ কয়েক মাস শয্যাশায়ী অবস্থায় অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন সুরেখা।
১৬২২
কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। সুস্থ হয়ে সই করেছিলেন পরবর্তী ছবি, জোয়া আখতারের ‘গোস্ট স্টোরিজ’-এ।
১৭২২
তারপর করোনা আবহে ৬৫ ঊর্ধ্ব অভিনেতাদের কাজে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল মহারাষ্ট্র সরকার। এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি সুরেখা।
১৮২২
সরকারের কাছে প্রবীণ অভিনেত্রীর প্রশ্ন ছিল, যদি প্রৌঢ় নেতারা কাজ করতে পারেন, তবে অভিনেতাদের বেলায় নিষেধাজ্ঞা কেন?
১৯২২
এর পরেই খবর ছড়িয়ে পড়েছিল, অর্থাভাবে অনুগ্রহ চাইছেন সুরেখা। স্পষ্ট ভাষায় তাঁদের প্রত্যুত্তরও দেন সুরেখা। বলেন, তিনি ভিক্ষা বা অনুগ্রহ চাননি। বরং, কাজ চেয়েছেন।
২০২২
সংবাদমাধ্যমে সুরেখা স্বীকার করেছিলেন চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটাতে তাঁর অর্থ প্রয়োজন। কিন্তু তিনি অনুগ্রহ বা সাহায্য হিসেবে সেই অর্থ চান না। সসম্মানে অভিনয় করে তাঁর পারিশ্রমিক চান। জানিয়েছিলেন, সত্তরোর্ধ্ব অভিনেত্রী। বিনীতভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন অর্থসাহায্যও।
২১২২
সুরেখার স্বামী হেমন্ত রেগে প্রয়াত হয়েছেন ২০০৯-এ। ২০২১-এ ১৬ জুলাই সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তাঁরও। তাঁদের একমাত্র ছেলে রাহুল একজন শিল্পী।
২২২২
বাইরে থেকে আপাত কঠিন, ভিতরে কোমল ভাবমূর্তি দিয়ে দীর্ঘ চার দশক দর্শকদের মুগ্ধ করে গিয়েছেন সুরেখা। তিনি নিছক অভিনেত্রী ছিলেন না। তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান ছিলেন।