আক্ষরিক অনুবাদ করলে ফাউদার ইংরেজি অর্থ হয় কেওস। বিশৃঙ্খলা। যে বিশৃঙ্খলা ইজ়রায়েল আর প্যালেস্তাইনের ভাগ্যের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। ইজ়রায়েলি ওয়েব সিরিজ় ‘ফাউদা’র প্রথম সিজ়ন এসেছিল ২০১৫ সালে, দ্বিতীয় ২০১৭তে। ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স কেমন ভাবে প্যালেস্তাইনি জেহাদিদের নিকেশ করে তা নিয়েই এই ক্রাইম ড্রামা। বলা বাহুল্য পুরোটাই দেখানো হয়েছে ইজ়রায়েলের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। তা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক কালের সেরা এসপিয়োনাজ-ক্রাইম ড্রামার মধ্যে ‘ফাউদা’র নাম থাকবে। প্রথম দুটো সিজ়নে রীতিমতো গায়ে কাঁটা দেয়। তৃতীয় সিজ়ন কিন্তু সেই উচ্চতায় পৌঁছতে পারেনি।
ইজ়রায়েল না প্যালেস্তাইন, পৃথিবীর মানচিত্রে কারা থাকবে? এই অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের শুরু থাকলেও শেষ নেই। প্রজন্মের পর প্রজন্ম শত্রুতা বয়ে বেড়ায়। প্রাণ যায় সাধারণ মানুষের। রাজনীতির আঙিনায় এ তো হতেই পারে। সবটাই বৃহত্তর স্বার্থে। ‘ফাউদা’য় রাজনীতির কূটকচালি কম। দর্শককে থ্রিলারের স্বাদ দিতে গিয়ে এ দিকটায় না ঢোকাটা এক অর্থে সিরিজ়টির দুর্বলতা। কিন্তু প্রথম দু’টি সিজ়ন এতটাই মুনশিয়ানার সঙ্গে পরিবেশন করা হয়েছিল যে, দুর্বলতাটি ততটা স্পষ্ট হয়নি। দর্শক অজান্তেই ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের অফিসার দোরোন, স্টিভ, স্যাগি, অভিহাই, নুরিতদের র্যাপিড অ্যাকশনে শামিল হয়ে গিয়েছিল।
প্রথম দুটো সিজ়ন একটা কাহিনির সূত্র ধরেই এগোয়। তৃতীয় সিজ়নের প্লট আলাদা। এ বারের লড়াই ছিল একেবারে হামাসের অন্দরে ঢুকে। হামাস হল প্যালেস্তানিয়ান সুন্নি ইসলামিক মিলিটারি অর্গানাইজ়েশন। ইহুদিরা গোটা ইজ়রায়েলে যতই দাপট দেখাক ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এবং গাজ়া স্ট্রিপ তাঁদের বুকেও কাঁপন ধরায়। বিশেষত গাজ়া স্ট্রিপ। ২০১৪ সালের ইজ়রায়েল-গাজ়া কনফ্লিক্ট দুই জাতির সম্পর্ক আরও তিক্ত করেছিল। তিনজন ইহুদি টিনএজারকে কিডন্যাপ করে গাজ়া নিয়ে যাওয়া এবং তাদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চাপানউতোর আরও বাড়ে। সেই ঘটনা অবলম্বনে তৃতীয় সিজ়নের প্লট।
ফাউদা
(ওয়েব সিরিজ়: সিজ়ন থ্রি)
ক্রিয়েটর: লিয়র রাজ়,
আভি এসকারফ
অভিনয়: লিয়র রাজ়, ইতজ়িক কোহেন, বোয়াজ় কনফর্টি
৬.৫/১০
১২টি এপিসোডের এই সিরিজ় জমে উঠতে থাকে ষষ্ঠ এপিসোডের শেষ থেকে। তার পর বাকি পর্বগুলো একেবারে ঝোড়ো ইনিংস খেলেছেন পরিচালক রোতেম শামির। কিন্তু প্রথম ছ’টা পর্ব মনে করিয়ে দেয় আগের দুটো সিজ়ন কতটা জমাটি ছিল। ইঁদুর-বেড়ালের খেলা একটা সময়ে ক্লান্তি ধরায়। সে কারণেই আনুষঙ্গিক প্লটের প্রয়োজন। কাহিনির প্রতিটি চরিত্রের ব্যক্তিগত দিকটা এই সিরিজ়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শত্রুকে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া দুঁদে অফিসারেরা নিজেদের গৃহকোণটাই যেন গুছিয়ে উঠতে পারে না। ভাঙা সম্পর্ক সামলাতে সামলাতে আবার নতুন সম্পর্ক এসে ধাক্কা মারে। ব্যক্তিগত বোঝাপড়া এই সিজ়নেরও ইউএসপি।
আরও পড়ুন: ছবির পশরা বরুণের
ব্যক্তিগত জীবনে ধ্বস্ত দোরোন প্রশিক্ষকের ছদ্মবেশে হাজির হয় হেব্রনের এক বক্সিং ক্লাবে। যেটি হামাসের অন্যতম চাঁইয়ের বাবার ক্লাব। আন্ডারকভার এজেন্টদের জ্বালা অনেক। ব্যক্তিগত ভাবে মিশতে হবে অথচ আবেগতাড়িত হতে পারবে না। ছাত্র বশারের প্রতি দোরোনের স্নেহ তৈরি করে দেয় নতুন জটিলতা। তার হামাসের অন্দরে পৌঁছনোর খেলার ঘুঁটি হতে হয় বশারকে। মহম্মদ আলি হতে চাওয়ার স্বপ্ন দেখা আপাত নিষ্পাপ তরুণটির পরিণতি দশর্ককে ধাক্কা দেবে। সিজ়নের শেষ ছ’টি পর্বে তুমুল উত্তেজনা। গাজ়াতে ঢুকে হামাসের মাথা আবু মহম্মদকে কব্জা, কিডন্যাপ হওয়া দুটি ছেলেমেয়ে আর বশারের ট্র্যাজেডি... দর্শক দম ফেলার ফুরসত পান না।
‘ফাউদা’র সবচেয়ে বড় সার্থকতা, এখানে হলিউড থ্রিলারের মতো অযথা চাকচিক্য নেই। চরিত্রগুলো জীবন্ত। নিখুঁত মেকিংয়ের জন্য অপরেশনগুলো গাঁজাখুরি মনে হয় না। ‘ফাউদা’র অন্যতম ক্রিয়েটর এবং সিরিজ়ের প্রটাগনিস্ট লিয়র রাজ় (দোরোন) এর অনেকটাই কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন।
‘ফাউদা’ শুধু প্যালেস্তাইন-ইজ়রায়েলের সম্পর্কের দিকটাই তুলে ধরে। সিরিয়া বা অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়া বা ইজ়রায়েলের স্পাই অর্গানাইজ়েশন মোসাদের অংশ এখানে অনুপস্থিত। পরবর্তী সিজ়নের জন্য অন্যান্য প্লটগুলোও ভাবতে পারেন নির্মাতারা। এই সিজ়নের আর একটা দুর্বল দিক হল, এর ইংরেজি অডিয়োটি ভয়ানক। বিন্যাসের ফাঁকগুলোই ‘ফাউদা’কে হ্যাটট্রিক করতে দিল না।
আরও পড়ুন: সরব বলিউড
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy