শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
বৈশাখের তপ্ত দুপুর। শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়ের দক্ষিণ কলকাতার বিলাসবহুল বাড়িতে পৌঁছে গেল আনন্দবাজার অনলাইন। পোষ্যরা ঘোরাঘুরি করছে ইতিউতি। কয়েক মিনিট পরে শোয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন অভিনেত্রী। আলগা ভাবে শরীর এলিয়ে দিলেন সোফায়। ঠান্ডা পানীয়ে চুমুক দিয়ে বললেন, “আরে! কেমন আছ?”
প্রশ্ন: ছোটবেলা থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন। বর্তমানে কোনও বদল চোখে পড়ছে?
শ্রাবন্তী: নায়িকা হিসেবে আমার প্রথম ছবি ‘চ্যাম্পিয়ন’। তার পরে পাঁচ বছর বিরতি নিয়েছিলাম। আমাদের সেই সময়টায় রিলস ছিল না। দু’তিনটে টেলিভিশন চ্যানেলে আমাদের গান সম্প্রচার করা হত। এখন আমরা নিজেরাই সমাজমাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে ছবি, রিলস দিই। লোকে বড় বেশি জেনে যাচ্ছেন আমাদের বিষয়ে। প্রজন্মের সঙ্গে সঙ্গে কাজ করার ধরন পাল্টাচ্ছে। আগে বড় সংখ্যায় বাণিজ্যিক ছবি হত। বিদেশে গিয়ে শুটিং করা হত। একটা ছবি শেষ হওয়ার পরে আমরা আলোচনা করতাম, পরের ছবির জন্য কোন দেশে যাওয়া হচ্ছে? এখন এগুলো খুব মিস করি। যদিও এই মুহূর্তে অনেকেই সেগুলো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। দেখা যাক, কী হয়!
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে শ্রাবন্তী কখনও ঈর্ষার মুখোমুখি হয়েছেন?
শ্রাবন্তী: আমি এ সবের মধ্যে ঢুকতেই চাই না। হিংসা, বিদ্বেষ করে কী করব? ভাগ্যে যা আছে, সেটাই হবে। আমি অন্যকে নিয়ে হিংসা করব কেন? তাঁরা তাঁদের মতো করে এগোচ্ছেন। ভাগ্যে না থাকলে তাঁরাও এই জায়গায় পৌঁছতে পারতেন না। মেধার জোরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রত্যেকে। যাঁরা আমাকে ভালবাসেন, তাঁদের আশীর্বাদ সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি আমি। আর আমাকে কেউ হিংসে করছে কি না, সেটা আমি বুঝতে পারি না।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রির প্রতি কোনও ক্ষোভ রয়েছে?
শ্রাবন্তী: একটা ক্ষোভ আছে। আমাকে একটু অন্য ধরনের চরিত্র দিলে ভাল হত। এত বছর পরে এখন আমাকে অন্য ধরনের চরিত্রে ভাবা হচ্ছে। আরও অন্য ধরনের চরিত্রে কাজ করতে চাইছিলাম আমি। আমার পরিচালকদের উদ্দেশে বলব, আমাকে একটু এক্সপ্লোর করুন।
প্রশ্ন: অন্য ধরনের চরিত্রে কাজ করতে গিয়ে নায়িকার ইমেজ মুছে যাওয়ার আশঙ্কা হয়?
শ্রাবন্তী: আমার সেটা মনে হয় না। ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম থেকেই নায়িকা হয়ে আসিনি আমি। পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছি। ধারাবাহিকে কাজ করেছি। আমার অভিনয়সত্তা সঙ্গে থাকলে আমি ঠিক এগিয়ে যেতে পারব। অভিনয়ের প্রতি প্রেম থাকলে যে কোনও চরিত্রে অভিনয় করতে পারব। ডি-গ্ল্যাম লুকেও কাজ করতে অসুবিধা নেই।
প্রশ্ন: ছবির জন্য পরিচালকের সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ রাখতে হয়?
শ্রাবন্তী: শুধু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নয়। সব ইন্ডাস্ট্রিতেই এটা আছে। যে কোনও কর্পোরেট সেক্টরেই দেখা যায়। তবে আমার সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। ৯ বছর বয়স থেকে অভিনয় করছি। সকলের সঙ্গে আমার মোটামুটি ভালই সম্পর্ক। তবে যে ‘সুসম্পর্ক’-এর কথা বলা হচ্ছে, আমি সেই পন্থা নিইনি কখনও। বাকিদের ব্যাপারে জানি না। যাঁরা করেন, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। তাঁরা হয়তো নিজেরা সেই জায়গাটা নিয়ে ভেবেছেন। আমি এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।
প্রশ্ন: এই কারণে মেধাসম্পন্ন মানুষ সুযোগ পাচ্ছেন না?
শ্রাবন্তী: যাঁদের মেধা আছে, তাঁরা ঠিকই সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি, দর্শকের ভালবাসা পাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: ছেলে ঝিনুককে অভিনেতা হিসেবে দেখতে চান?
শ্রাবন্তী: না, আপাতত সে রকম কিছু নেই। ওর যেটা ইচ্ছা হবে, সেটা করবে। আমি কোনও চাপ দিই না। ও এখন অনেকটাই ছোট। দেখা যাক। আমাদের বয়সের ফারাক খুব কম। মা-ছেলের সম্পর্কের থেকেও বন্ধুত্বের সম্পর্ক বেশি। শাসন করে আমাকে।
প্রশ্ন: দর্শকের সমালোচনা সামলান কী ভাবে?
শ্রাবন্তী: সত্যি কথা বলতে, খারাপ লাগে। মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি। যথেষ্ট লড়াই করে এই জায়গায় এসেছি। লোকে আমার স্ট্রাগলের কথা না ভেবে সমালোচনা করতে শুরু করে। সবাই তো আমার বাড়ি এসে দেখতে যাচ্ছে না, জীবনে আমাকে কতটা ভুগতে হয়েছে।
প্রশ্ন: একুশের নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরে প্রার্থী হয়েছিলেন। রাজনীতির ময়দানে ফিরতে ইচ্ছা করে না?
শ্রাবন্তী: রাজনীতির জন্য আমি হয়তো উপযুক্ত নই। আমি অন্তত তাই মনে করি। আমি নিজেকে রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখতেও চাই না। একটা সময় চেষ্টা করেছিলাম, হয়নি। এখন মন দিয়ে শুধু অভিনয় করে যেতে চাই। সামনে আমার এত ভাল ভাল ছবি রয়েছে! সেগুলোতে আমার মনোযোগ দেওয়া উচিত।
প্রশ্ন: জীতু কমলের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জনে সিলমোহর পড়বে?
শ্রাবন্তী: আমি নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছি নামটা শুনে। আরও অনেকের নাম জুড়ে দেওয়া হয় আমার সঙ্গে। লোকে অনেক কিছুই ভাবে। আমি তো জানি সত্যিটা কী! প্রেম, ভালবাসা, সবই অভিনয়কে ঘিরে। আমি এখন সিঙ্গল।
প্রশ্ন: শুটিংয়ের বাইরে অবসর যাপন করেন কী ভাবে?
শ্রাবন্তী: আমি ভীষণ ঘরকুনো। শুটিং না থাকলে পোষ্যদের সঙ্গে, ছেলের সঙ্গে বাড়িতে সময় কাটাই। ছুটি পেলে মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে যাই। তাঁদের বয়স হয়েছে। এই সময়টায় তাঁদের পাশে সন্তানদের থাকা উচিত। দিদিদের সঙ্গে সময় কাটাই। পুরোপুরি সংসারী মানুষ আমি।
প্রশ্ন: সম্প্রতি ইন্ডাস্ট্রিতে ‘বিয়ে বিতর্ক’-এর রেশ নিয়ে কী মত?
শ্রাবন্তী: তাঁরা ভাল থাকলেই ভাল। এ কী! তাঁদের জীবন, তাঁরা বুঝবেন। আমরা পরিচিত মুখ বলে আমাদের সহজে আক্রমণ করা হয়। কোটি কোটি মানুষ কত কী করছে, সব কিছুই কি প্রকাশ্যে আসে? আমরা শিল্পী বলে আমাদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে মানুষের চর্চা করতে ভাল লাগে।
প্রশ্ন: রাখী গুলজ়ারের থেকে কী শিখলেন?
শ্রাবন্তী: রাখী গুলজ়ার দারুণ। একেবারে ‘সুইচ অন সুইচ অফ’। এই হাসছেন, মজা করছেন, কিন্তু ‘অ্যাকশন’ বলার পরেই আমূল পরিবর্তন। চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান। আমি এটা ওঁর থেকে শিখেছি। আর এখনও এত সুন্দরী!
প্রশ্ন: ‘দেবী চৌধুরানী’ ছবিতে অ্যাকশনের দৃশ্যে অভিনয়, অভিজ্ঞতা কেমন?
শ্রাবন্তী: আমি অ্যাকশন দৃশ্য ভালবাসি। নিজে অ্যাকশন করতেও পছন্দ করি। সব সময় অভিনেতারা কেন করবে? আমরা অভিনেত্রীরাও একটু করি। তরোয়াল নিয়ে কত কী করতে হয়েছে! বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবী চৌধুরানী’। এর আগে মহানায়িকা সুচিত্রা সেন অভিনয় করেছেন। যদিও ওঁর সঙ্গে নিজের তুলনা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না। আমি আমার মতো করেছি। অন্য দিকে শিবুদা, নন্দিতাদির সঙ্গে প্রথম কাজ, ‘আমার বস’। একদম ঘরোয়া পরিবেশ। মনে হচ্ছিল, চেনা লোকজনের সঙ্গেই কাজ করছি। তার পরে ‘রবীন্দ্র কাব্য রহস্য’ রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy