এক সময়ে পাঁপড় বিক্রি করতেন রাস্তার ঠেলাগাড়িতে। এখন তিনিই কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে যান। রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নেন। তাঁর ‘সুপার থার্টি’ বলিউডের দৌলতে এখন সকলেরই চেনা। কিন্তু আনন্দ কুমার যখন দুঃস্থ ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তাঁর কোচিং সেন্টার খুলেছিলেন, ঠিক কোন ভাবনা কাজ করেছিল? কলকাতায় ‘সুপার থার্টি’র প্রচারে এসে আনন্দ বললেন, ‘‘আমার বাবা পটনায় পোস্টাল ডিপার্টমেন্টে কাজ করতেন। খুব কম মাইনের চাকরি ছিল। কেমব্রিজে অ্যাডমিশন পেলেও টাকা না থাকায় যেতে পারিনি। একটা সময়ে মনে হয়েছিল, এ রকম দুঃস্থ ছাত্র তো কত রয়েছে। তাদের কোনও ভাবে সাহায্য করতে পারি না? তখনই সুপার থার্টির ভাবনা আসে।’’ বিনা পারিশ্রমিকে গরিব ছাত্রদের জয়েন্ট এনট্রান্সের জন্য তৈরি করতে শুরু করেন ২০০২ সাল থেকে।
নিজের চেয়েও তাঁর বাবার কথা বেশি বলেন আনন্দ। বাবা যখন পটনা থেকে কলকাতায় আসতেন, মিষ্টি দই নিয়ে ফিরতেন। লালবাজার থেকে তবলা কিনে নিয়ে যেতেন আনন্দের জন্য। ‘‘আনন্দবাজার পত্রিকাও নিয়ে যেতেন। বাংলা লিখতে-পড়তে জানতেন উনি,’’ বললেন আনন্দ। কলকাতার সঙ্গে বাবার মতোই তাঁরও যোগাযোগ একটা থেকেই গিয়েছে, ‘‘কেমব্রিজে যেতে না পারার পরবর্তী সময়টায় আমাকে খুব সাহায্য করেছিলেন এই শহরেরই দু’জন মানুষ। এখনও ওঁদের সঙ্গে দেখা করতে এখানে প্রায়ই চলে আসি।’’
তাঁর সেন্টার সুপার থার্টির এখন যা নামডাক, তাতে রাজনৈতিক চাপ আসে না? উত্তর এল, ‘‘রাজনৈতিক প্রেশার সরাসরি নয়। মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য নিয়ে সমস্যায় থাকি। গত সতেরো বছর ধরে এডুকেশনাল মাফিয়া আমাদের পিছনে পড়ে রয়েছে। বায়োপিক আসছে বলে আমার ভাইকে ট্রাকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলারও চেষ্টা হয়েছিল। আমাদের এক ভলান্টারি কর্মীকে জেলে ঢোকানো হয়েছিল। শেষে নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় ডিজিপির হস্তক্ষেপে সে ছাড়া পায়। আসলে রাজনৈতিক নেতারা কখনওই চান না, গরিবের ছেলেমেয়েরা একটা ভাল জায়গায় দাঁড়াক।’’
আনন্দ কুমার।
ক’দিন আগে অভিযোগ এসেছিল আনন্দ নাকি অন্যান্য সেন্টার থেকে বাচ্চাদের নিয়ে এসে নিজের কোচিং সেন্টার ভরানোর চেষ্টা করেন। মৃদু হেসে গণিতজ্ঞ বললেন, ‘‘আমার ইমেজকে ড্যামেজ করতে অনেক চেষ্টাই চলেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মানিনি।’’
‘সুপার থার্টি’র পরিচালক বিকাশ বহেলের নাম হ্যাশট্যাগ মিটু-র সঙ্গে জুড়ে যাওয়া নিয়ে বিব্রত ছিলেন বলে জানালেন আনন্দ। ‘‘বিকাশ কিন্তু খুব পরিশ্রমী মানুষ। ওঁর নাম মিটু-তে জড়ানোয় আমি কনফিউজ়ড হয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু ক্লিনচিট বেরোনোর পরে বুঝেছিলাম আমার বাবা ঠিকই বলতেন, পরিশ্রমী মানুষ কখনও খারাপ হয় না!’’ হেসে বললেন আনন্দ।
আনন্দের ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy