Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Sandhya Mukhopadhyay

Sandhya Mukherjee: জুতো খুলে প্রণাম নিতেন

কোনও অনুষ্ঠানের শেষে খাওয়া-দাওয়া হলেই বলতেন, ‘‘আমি এত খেতে পারব না।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সৌমিত্র রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:০৭
Share: Save:

তখনও গানবাজনা ততটা সিরিয়াসলি নিইনি। ১৯৮৩-৮৪ সালে সুপর্ণকান্তি ঘোষের সুরে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় রেকর্ডিং করছেন এইচএমভি-তে। একটু ওয়েস্টার্ন প্যাটার্নের গান, ড্রামসে আমি। রেকর্ডিং শেষ হতেই আমাকে ডেকে বললেন, ‘‘বাহ রে খোকা, খুব সুন্দর বাজিয়েছিস। তোর নাম কী?’’ আলাপের সেই শুরু। তার পরে কবে যে আমার ‘সন্ধ্যাপিসি’ হয়ে উঠেছেন! কোথাও দেখা হলেই বলতেন, ‘‘নতুন কিছু লিখলি? সুর করলি? আমাকে শোনা।’’ সব সময়ে উৎসাহ দিতেন। মাঝে মাঝেই মজা করে বলতেন, ‘‘আমাকে একটু বাজাতে শেখাবি?’’ আশির দশকে ওঁর লেক গার্ডেনসের বাড়িতে গিয়ে গান তোলানো, হইহই করে রিহার্সালের দিনগুলো ভোলার নয়। বাড়িতে গেলেই নিজের হাতে চা বানাতেন। নিজেই পরিবেশন করে খাওয়াতেন। খুব যত্ন করতে পারতেন আসলে, ঠিক মায়ের মতো।

শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে শেখার তো শেষ নেই। আমি রেওয়াজে ততটা মন দিই না শুনে বলেছিলেন, ‘‘তোর গলাটা মিষ্টি কিন্তু রেওয়াজ করিস না। যখনই পারবি গুনগুন করবি। যখনই মনে হবে বেসুরো হচ্ছে, আর একবার রিপিট করবি। ওটাই রেওয়াজ।’’ ওঁর এই শিক্ষা পরবর্তী জীবনে খুব কাজে লেগেছে। আমার গলায় ইংরেজি গান শুনতে পছন্দ করতেন। ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’ ছবির টাইটেল সং গাওয়ার পরে একবার রাজ্য সঙ্গীত অ্যাকাডেমিতে হঠাৎ দেখা ওঁর সঙ্গে। নামীদামি শিল্পীদের মাঝেই আমার গাল ধরে আদর করে বললেন, ‘‘ওই গানটা একবার শোনা।’’ শেষে আর্কাইভ রুমে গিয়ে শুনিয়েছিলাম সেই গান। পরের দিকে আমিও আবদার করতাম, ‘‘তোমাকেও কিন্তু শোনাতে হবে।’’ সে আবদার রাখতে একবার একটা অপূর্ব সুন্দর ব্যালাড শুনিয়েছিলেন আমাদের। ওঁর গলায় অমন ইংরেজি গান শুনে এতই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে, ফোনের রেকর্ডিংও অন করতে ভুলে গিয়েছিলাম।

কোনও অনুষ্ঠানের শেষে খাওয়া-দাওয়া হলেই বলতেন, ‘‘আমি এত খেতে পারব না। সৌমিত্র তুই খেয়ে নে...’’ বলেই ফিশ ফ্রাইটা আমার প্লেটে তুলে দিতেন। নিজে হয়তো শুধু একটু মিষ্টি খেতেন। শিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন, তার একটা নজির কখনও ভুলতে পারি না। ওঁর সঙ্গে যখন যেখানেই দেখা হোক, প্রথমেই প্রণাম করতাম। আর তখনই উনি পা থেকে জুতো জোড়া খুলে রেখে বলতেন, ‘‘দাঁড়া দাঁড়া... জুতোতে হাত দিবি না।’’ ওঁর কাছ থেকে পাওয়া এই শিক্ষা সারা জীবন মনে রাখার মতো। এখনও জনসমক্ষে কাউকে প্রণাম করতে গেলে প্রথমেই এই কথাটা মনে পড়ে যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Sandhya Mukhopadhyay Soumitra Roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy