সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
কয়েক মাস আগের কথা। দিনটা ছিল ৩ সেপ্টেম্বর। কন্যা পৌলমীর জন্মদিনে পরিবারের অন্তরঙ্গ পরিসরের কয়েক জনকে নিয়ে সন্ধ্যায় ফুরফুরে মেজাজে বসেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তখনও শরীরে অসুখের অভিঘাত নেই। সৌমিত্র হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘‘সামনের জানুয়ারিতে আমার জন্মদিনের দু’-তিন দিন আগেই আমি ঠিক কলকাতা থেকে কেটে পড়ব। লোকজনের এত আদিখ্যেতা আর ভাল লাগে না।’’
‘বাবা!’ কন্যা পৌলমী ওরফে মিতিলের তীক্ষ্ণ বকুনিতে ইচ্ছেটুকু তখনকার মতো চাপা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাঙালির গর্বের অভিনেতার ‘কেটে পড়া’র ইচ্ছেটা এ ভাবে ফলতে পারে, তখনও কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। আর একটি সমাপতন হল, মেয়ের জন্মদিনে যে দিন এ সব বলছেন সৌমিত্র, সে দিন আবার বাঙালির মহানায়ক উত্তমকুমারেরও জন্মদিন! আবেগ ভরা মাতামাতি ছেড়ে পালানোর ইচ্ছেটা সে দিনই ব্যক্ত করেছিলেন সৌমিত্র।
আজ, মঙ্গলবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ৮৬ বছর পূর্ণ হওয়ার জন্মদিন। তার প্রাক্কালে, সোমবার এ সব মনে পড়ছিল তাঁর পারিবারিক সুহৃদ তথা ‘মুখোমুখি’ নাট্যদলের সম্পাদক বিলু দত্তের। তাঁর কথায়, ‘‘পুজো থেকে আসন্ন জন্মদিন— সব কিছু নিয়েই কত পরিকল্পনা ছিল স্যরের (সৌমিত্র)! তবে মাতামাতি এড়াতে চাইলেও তিনি কখনওই জীবন থেকে বিমুখ হওয়ার কথা ভাবেননি।’’ মৃত্যুর পরে সৌমিত্রের প্রথম জন্মদিনে তিনি স্বভাবতই আছেন, বাঙালির হৃদয় জুড়ে। আনন্দপুরে ইমামি আর্ট ভবনে চলছে তাঁর আঁকা ছবি থেকে শুরু করে সব সিনেমার পোস্টার ও ব্যবহার্য সামগ্রী নিয়ে প্রদর্শনী। সেই সঙ্গে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর। তবে ‘মুখোমুখি’ দলে সৌমিত্র-কন্যা পৌলমীর নির্দেশনায় বাবার নাটক ‘ফেরা’র শো বাতিল করতে হয়েছে। ২০১৯-এর ডিসেম্বরে এই নাটকের ১০০তম শোয়ে অভিনয় করেছিলেন প্রবীণ অভিনেতা।
পরিবারের প্রাণপুরুষ চলে যাওয়ার পরে আসা এই জন্মদিনে পরিজনেরা খানিক ছন্নছাড়া। কারণ, সৌমিত্র-কন্যা পৌলমী কোভিডগ্রস্ত। ফোনে কথা বলার অবস্থায় নেই। তবে তিনি ফেসবুকে জানিয়েছেন, সোম ও মঙ্গলবারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রদবদলের কথা। রবিবার ছিল পৌলমীর পুত্র, অভিনেতা রণদীপ বসুর জন্মদিন। দুর্ঘটনার পরে রণদীপ এখন আগের থেকে সুস্থ। তবে পুরোপুরি সারতে সময় লাগবে। পৌলমীর ফেসবুকের ওয়াল উপচে পড়ছে শুভ কামনায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ফাউন্ডেশন গড়ার কাজও অনেক দূর এগিয়েছে। গল্ফগ্রিনে নির্দিষ্ট জায়গায় কাজ শুরুর কথা বিশিষ্ট সদস্যদের তত্ত্বাবধানে। দুঃসময় কাটিয়ে সৌমিত্র-সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বয়ে নিয়ে যেতে তাঁরা বদ্ধপরিকর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy