Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Soumitra Chatterjee

দেখা হতেই জড়িয়ে ধরলাম

ওঁর সঙ্গে আমার বছর কয়েক আগে কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখা হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমন্ত্রণ করেছিলেন। অনেক গল্প হয়েছিল সে দিন।

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

ওয়াহিদা রহমান
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২০ ১৫:০৪
Share: Save:

ঠিক চার দশক পরে আবার আমাদের ছবির সেটে দেখা হল ‘ফিফটিন পার্ক অ্যাভিনিউ’ করতে গিয়ে। অপর্ণার (সেন) কাছ থেকে আগেই জেনে গিয়েছিলাম, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থাকছেন। ফলে আলাদা আনন্দ হচ্ছিল। দেখা হতেই ছুটে গিয়ে দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। ইউনিটের বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা তো অবাক! ভাবখানা, হচ্ছেটা কী! হাসতে হাসতে বলি, ‘‘তোমাদের জন্মের অনেক আগে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি যে!’’

ওঁর সঙ্গে আমার বছর কয়েক আগে কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখা হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমন্ত্রণ করেছিলেন। অনেক গল্প হয়েছিল সে দিন। একটু ক্লান্ত লাগছিল যেন চিরতরুণ সৌমিত্রকে। বুড়োদের যা হয়, পরস্পরের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিলাম। ‘রে’-কে নিয়ে স্মৃতিচারণ হল। সেই শেষ। আর কখনও দেখা হবে না, এটা মেনে নিতে পারছি না যেন।

আজ মন ফিরে যাচ্ছে ষাটের দশকের গোড়ায়। আমি মুম্বইয়ের ঘরানা থেকে এসেছি সেই প্রথম বাংলায় কাজ করতে। তার উপরে‌ সত্যজিৎ রে-র ছবিতে। বেশ নার্ভাস এবং জড়ভরত অবস্থা। আজও ভুলতে পারি না, সৌমিত্র হাসিঠাট্টা করে পরিস্থিতি সহজ করে দিয়েছিলেন। কয়েক দিনের মধ্যেই মানিয়ে নিয়েছিলাম আদ্যন্ত বাঙালি ইউনিটের সঙ্গে। কখনও মনে হয়নি নিজের কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে আছি। এক জন জেন্টলম্যান বলতে যা বোঝায় সৌমিত্র ছিলেন তাই। অসম্ভব ভদ্রতাবোধ কিন্তু সেই সঙ্গে উষ্ণ ও আন্তরিক। ওঁর কাজেরও আমি ভক্ত। খুবই নিচু স্বরের অভিনয় করতেন। অযথা উচ্চকিত নন। সৌভাগ্যবশত সেই সময় বাংলায় যে ধরনের ছবি হচ্ছিল, ভাল ভাল পরিচালকদের, সেখানে উনি সহজাত অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অতিনাটকীয় কিছু করতে হয়নি। অভিযানছবিতে মনে পড়ে রবি ঘোষের কথা, যিনিও আজ আমাদের মধ্যে নেই। রবির সঙ্গে অবশ্য আমার বন্ধুত্ব জমেনি। কারণ, হিন্দিতে উনি একদমই সড়গড় ছিলেন না আর আমি বাংলায়।

বহু স্মৃতি আজ ভিড় করছে। কত গল্প খুনসুটির কথা সে সব। ‘অভিযান’ ছবিতে আমায় নেওয়ার কথা উনি আর ‘রে’ আলোচনা করছেন, একটি ঘরে বসে, রাতের বেলা। হঠাৎ ওঁরা দেখেন সেই ঘরের দেওয়ালের কাচে আমার মুখ! দু’জনেই নাকি বেদম চমকে উঠেছিলেন। ভেবেছিলেন ভৌতিক কাণ্ড। পরে বোঝা যায় রহস্যটা কী। তখন কলকাতার গলিতে পর্দা খাটিয়ে প্রজেক্টর-এ ছবি দেখানো হত। আমার ছবি পর্দায় পড়ে তার প্রতিবিম্ব জানালার কাচে এসে পড়েছিল। ঘটনাচক্রে, তাঁরা তখন আমায় নিয়েই আলোচনা করছিলেন। সৌমিত্র এই ঘটনাটা পরে আমায় অভিনয় করে দেখিয়েছিলেন। আমি হেসেই খুন। এই সব আনন্দের দিনগুলোই আজ মনে করতে চাই।

অনুলিখন অগ্নি রায়

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy