Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Soumitra Chatterjee

মাথার উপর থেকে বিশাল ছাতাটা হঠাৎ করে সরে গেল

ছেলেবেলায় আমাকে পাত্তাই দিতেন না। আস্তে আস্তে যত বড় হলাম, দেখলাম আমি ওঁর বন্ধুস্থানীয় হয়ে উঠছি।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অপর্ণা সেন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২০ ১৬:৩৯
Share: Save:

আমার প্রথম ছবির প্রথম নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

ছেলেবেলায় আমাকে পাত্তাই দিতেন না। আস্তে আস্তে যত বড় হলাম, দেখলাম আমি ওঁর বন্ধুস্থানীয় হয়ে উঠছি। আগে তো 'সৌমিত্রকাকা' বলতাম। তার পরে আপনা থেকেই 'কাকা' থেকে বন্ধু হয়ে উঠলেন। ভীষণ রুচিশীল, সাহিত্যচর্চা করা একজন মানুষ। শ্যুটিঙের মাঝে তাই অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলা যেত। ওঁর ছেলে যেমন এক সময় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়েছিল, ঠিক তেমনই আমার বোন। এই নিয়ে আমরা কত আলোচনা করেছি! এখন ওঁর ছেলে অবশ্য ঠিক হয়ে গেছে।

প্রসঙ্গত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর তাঁর স্ত্রী আমাদের পারিবারিক বন্ধু হয়ে গিয়েছিলেন। মা-বাবার সঙ্গে ওঁর অনেক কালের যোগাযোগ। ছেলেবেলায় কিন্ত আমাকে পাত্তাই দিতেন না। আস্তে আস্তে যত বড় হলাম, এক সঙ্গে কাজ হল। জুটি তৈরি হল। আমরা অবশ্য কেউ জুটি নিয়ে ভাবতাম না। তবে যখন পরিচালনা করতে এলাম উনি মজা করে বললেন, "যাহ্‌! এ তো বড় পরিচালক হয়ে গেল। আমাদের একসঙ্গে কাজ কি করে হবে?"

থেকে থেকেই মজা করে বলতেন, "বড় পরিচালক, তোমার ছবিতে কবে কাজ করব?" আমার ছবি 'পারমিতার একদিন'-এ কাজ হল।

অমূল্য-মৃণ্ময়ী জুটি আবার ফিরেছিল সুমন ঘোষের 'বসু পরিবার'-এর হাত ধরে

কত বছর কেটে গেল। কত বার সেটে আমি জীবনানন্দ বলছি, তো উনি রবীন্দ্রনাথ বলছেন। শ্যুটের মধ্যেই কত অন্য ধারার চর্চা হত।

সত্যজিৎ রায়ের 'সমাপ্তি' ছবির এ বার ৫৯ বছর। এতগুলো বছর পরে অমূল্য-মৃণ্ময়ী জুটি আবার ফিরেছিল সুমন ঘোষের 'বসু পরিবার'-এর হাত ধরে। এর পরে আমরা করেছি ‘বহমান’।


মনে পড়ছে আমার, এই ছবির জন্য আমরা অক্সফোর্ড বইয়ের দোকানে শ্যুট করছি। একটি বই দেখিয়ে জানতে চেয়েছিলাম, "এই বইটি তুমি পড়েছ?" বললেন, "না পড়া হয়নি।" আমি বললাম, "একটু দাঁড়াও।"

<

আমাদের মধ্যে সাহিত্য, সিনেমা নিয়ে অনেক কথা হত

আমি চট করে গিয়ে তার পর নীচ থেকে বইটা কিনে আনি। ওঁকে হাতে দেওয়ার পর ভীষণ অপ্রস্তুত। বলে উঠলেন, "না, না, এ কী! এ সব কী করছ?" কিন্তু ভিতরে ভিতরে ভীষণ খুশি হয়েছিলেন, এটাও বুঝতে পারছিলাম। পরে সুমন ঘোষকে বলেছিলেন, "এই মেয়েটা পড়াশোনা করে। ভাল লাগে। এই তো আমাকে বই কিনে দিল।" আমাদের মধ্যে সাহিত্য, সিনেমা নিয়ে অনেক কথা হত। এখন সেই সব স্মৃতিই ফিরে ফিরে আসছে।

আমি আর পারছি না। এ সময় কথা বলা যায় না। কষ্ট হচ্ছে। আসলে শোনার পরে কিছুতেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছিল না। খুব আশা করেছিলাম, উনি যুদ্ধে জিতে ফিরবেন। মানিককাকা অনেক বছর আগেই চলে গিয়েছেন। তার পর একে একে চলে গেলেন আমার মা-বাবা, মৃণালকাকা। এবার সৌমিত্র-ও। কাকে যেন বলছিলাম, আমার চেনা জগৎটা আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। মাথার উপর থেকে বিশাল ছাতাটা হঠাৎ করে সরে গেল।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy