Sona Mohapatra's first ventures in music industry started with advertising dgtl
bollywood
ইঞ্জিনিয়ারিং, এমবিএ-এর পরেও চাকরি ছেড়ে গানে, ফুৎকারে ট্রোলিং উড়িয়ে দেন স্বল্পবাসে স্বচ্ছন্দ সোনা
উত্তরে সোনা পাল্টা টুইট করেন, ‘‘“আপনি দয়া করে সেক্স রিহ্যাবে যান। আপনার সন্তানদের বলুন আপনার পরিবারের জন্য টাকা উপার্জন করতে।’’ এই বিতর্কের জের সোনাকে পোহাতে হয়েছিল পরবর্তী সময়েও।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ ১০:৩৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৪
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরে সম্পূর্ম করেছিলেন এমবিএ কোর্সও। কিন্তু লোভনীয় বেতনের চাকুরের জীবন ছেড়ে বেছে নিয়েছেন গায়িকার জীবন। তবে গানের তুলনায় জীবন ঘিরে নানা বিতর্কেই বেশি শিরোনামে থাকেন সোনা মহাপাত্র।
০২২৪
অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তমে সোনার জন্ম ১৯৭৬ সালের ১৭ জুন। তাঁর বাবা দিলীপ মহাপাত্র ছিলেন ভারতীয় নৌবাহিনীর আধিকারিক। মা, নয়নতারা গৃহবধূ। সোনার বোন প্রতীচিও পেশায় গায়িকা। তাঁর আর এক বোনের নাম মধুমিতা। বাবার কাজের সূত্রে মা নয়নতারার সঙ্গে সোনারা তিন বোন দেশে এবং বিদেশের বিভিন্ন শহরে দীর্ঘ দিন কাটিয়েছেন।
০৩২৪
আদতে সোনার পরিবার ছিলেন কটকের বাসিন্দা। বাবার কাজের সূত্রে কোচি, পুণে, হায়দরাবাদ-সহ দেশের বিভিন্ন শহর এবং দেশের বাইরে নাইজেরিয়ায় অনেক দিন ছিলেন সোনা। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট থেকেই তাঁর আগ্রহ ছিল গানবাজনায়।
০৪২৪
ভুবনেশ্বরের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের পরে কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন ইনস্ট্রুমেন্টেশন অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্সে। এরপর পুণের নামী প্রতিষ্ঠান সিমবায়োসিস সেন্টার ফর ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এইচআরডি থেকে সম্পূর্ণ করেন এমবিএ।
০৫২৪
পড়াশোনা শেষ করে ব্র্যান্ড ম্যানেজার হিসেবে সোনা যোগ দেন ম্যারিকো সংস্থায়। তবে চাকরিজীবন বেশি দিন ভাল লাগল না। গায়িকার পেশায় পা রাখলেন সোনা। প্রথমে সুযোগ এল বিজ্ঞাপনে জিঙ্গল গাইবার। বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনে সোনার জিঙ্গল জনপ্রিয় হয়।
০৬২৪
প্রথম থেকেই সোনার ঝোঁক ছিল ফিউশন মিউজিকে। তাঁর কণ্ঠে রিদম অ্যান্ড ব্লুজ, ফ্ল্যামেঙ্কো, হিন্দুস্তানি, বাউল এবং রোমানি (জিপসি) সঙ্গীতের যুগলবন্দি জনপ্রিয় হয়েছিল শ্রোতাদের মধ্যে।
০৭২৪
সিনেমায় প্লেব্যাকের প্রথম সুযোগ পান ২০০৬ সালে। ‘ফ্যামিলি’-তে ‘লোরি’ গানটি গেয়েছিলেন তিনি। এর পর ‘জাম্বো’, ‘আগে সে রাইট’, ‘আই হেট লভ স্টোরিজ’ ছবিতে প্লে ব্যাক করেুন সোনা।
০৮২৪
তবে প্রচারের আলোয় আসতে তাঁকে সাহায্য করে ‘ডেলহি বেলি’ ছবির ‘বেরাদরি রাজা’ গানটি। পরে এর রিমিক্স-ও মুক্তি পেয়েছিল। এর পরেও আমিরের সঙ্গে কাজ করেছেন সোনা। ‘তলাশ’ ছবিতে তাঁর ‘জিয়া লগে না’ গানটি অনেক দিন শ্রোতাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে ছিল।
০৯২৪
আমিরের শো ‘সত্যমেব জয়তে’-এর থিম সং ‘মুঝে ক্যয়া বেচেগা রুপাইয়া’ এবং ‘ঘর ইয়াদ আয়া হ্যায় মুঝে’-ও গেয়েছিলেন সোনা। এই দু’টি গান ইউটিউবে এখনও সুপারহিট। কেরিয়ারের পথে এর পর সোনা প্লেব্যাক, সিঙ্গল-এর পাশাপাশি নিজের ব্যান্ডও খুলেছেন।
১০২৪
এর পর ‘ফুকরে’, ‘বজাতে রহো’, ‘পুরানি জিন্স’, ‘খুবসুরত’, ‘হান্টার’, ‘রমন রাঘব ২.০’-সহ বেশ কিছু ছবিতে প্লেব্যাক করেন সোনা। প্রথম থেকেই সোনা খুব বেশি ছবিতে গান করেননি। ২০১৬ সালে ‘রমন রাঘব ২.০’-এর পরে গত ৪ বছরে কোনও ছবিতে প্লেব্যাক করেননি তিনি। সম্প্রতি ওয়েবসিরিজে গান গেয়েছেন সোনা।
১১২৪
বিনোদন দুনিয়ায় পা রাখার আগেই সোনার সঙ্গে পরিচয় হয় সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক রাম সম্পতের। তাঁদের আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন পরিচালক রাম মাধবানি। ৩ বছর প্রেমপর্বের পরে বিয়ে করেন রাম এবং সোনা।
১২২৪
এই দম্পতি একসঙ্গে অনেক গান করেছেন। নিজস্ব মিউজিক প্রোডাকশন হাউসের অংশীদার তাঁরা। একটি স্টুডিয়োও চালান তাঁরা।
১৩২৪
জনপ্রিয়তা ও খ্যাতির পাশাপাশি বিতর্কও হাত ধরে এসেছে সোনার জীবনে। সেরকমই এক বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল সলমনের একটি মন্তব্য। ২০১৬ সালে সলমন বলেছিলেন যে 'সুলতান' ছবির শ্যুটিঙে এত পরিশ্রম হয়েছে যে তাঁর নিজেকে একজন ধর্ষিতার মতো বিধ্বস্ত মনে হচ্ছে।
১৪২৪
সলমনের এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন সোনা। এর জেরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়। তাঁকে ‘সতী সাবিত্রী’ বলেও বিদ্রুপ করেন এক সলমন ভক্ত। সোনা এর পাল্টা প্রতিবাদ করেন। অনুরাগীদের এ হেন আচরণে সলমনের নীরবতাও পীড়িত করেছিল সোনাকে।
১৫২৪
পরে বম্বে আইআইটি-র বিরুদ্ধে ‘সেক্সিস্ট’ হওয়ার অভিযোগ তোলেন সোনা। ফেসবুকে খোলা চিঠি লেখেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, মুড ইন্ডিগো কালচারাল ফেস্ট কর্তৃপক্ষ গত তিন বছর ধরে অনুষ্ঠানের জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু একজন মহিলা পারফর্মারের একক অনুষ্ঠানে তাঁরা রাজি হননি। কোনও পুরুষ সঙ্গীকে সঙ্গে আনার কথা তাঁকে বলা হয়।
১৬২৪
সোনার সব অভিযোগ অস্বীকার করে টিম মুড ইন্ডিগো। তাঁদের মিডিয়া ম্যানেজার কেতকী কাকাডের দাবি করেন, তাঁরা সোনা মহাপাত্রকে বার্ষিক অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু উনি যে টাকা চেয়েছিলেন তা তাঁদের বাজেটের বাইরে ছিল। উনি মহিলা শিল্পীর একক অনুষ্ঠান না করানো নিয়ে যে অভিযোগ করেছিলেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যে বলে দাবি করেন কেতকী।
১৭২৪
২০১৮ সালে সুরকার-গীতিকার অনু মালিকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন সোনা। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন মহিলা সঙ্গীতশিল্পী অনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। এই সব অভিযোগের কারণেই অনুকে ‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এর বিচারকের পদ থেকে ছেঁটে ফেলা হয়। কিন্তু ঠিক এক বছর পরেই আবার তাঁকে সেই পদে পুনর্বহাল করা হলে সোনা প্রতিবাদ জানান।
১৮২৪
প্রথম দিকে সব অভিযোগের উত্তরে চুপ করে থাকলেও টুইটারে আত্মপক্ষ সমর্থন করে একটি পোস্ট দেন অনু। লেখেন, ‘‘এক বছর ধরে এই সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ চুপ করে শুনে যাচ্ছিলাম। এখন মনে হচ্ছে চুপ করে ছিলাম বলেই লোকে যা ইচ্ছে তাই ভেবে নিয়েছে। দুই কন্যার বাবা আমি। আমি কোনও দিন স্বপ্নেও এ রকম ঘৃণ্য কাজ করতে পারব না।”
১৯২৪
উত্তরে সোনা পাল্টা টুইট করেন, ‘‘“আপনি দয়া করে সেক্স রিহ্যাবে যান। আপনার সন্তানদের বলুন আপনার পরিবারের জন্য টাকা উপার্জন করতে।’’ এই বিতর্কের জের সোনাকে পোহাতে হয়েছিল পরবর্তী সময়েও।
২০২৪
২০১৯ সালের শেষে মোনোকিনিতে নিজের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন সোনা। এর জেরে চূড়ান্ত ট্রোল করা হয় তাঁকে। ছবি পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই সোনার সেই পোস্টে কেউ লেখেন, ‘জামা পরে নিন, নয়ত অনু মালিক চলে আসবে’। কেউ বা আবার লেখেন, ‘#মিটু নিয়ে সোচ্চার হও আবার নিজেই স্বল্প পোশাক পরে ঘুরে বেড়াও!’ তির্যক মন্তব্য উড়ে আসে সোনার শরীরের আকার, গঠন নিয়েও।
২১২৪
ট্রোলিংয়ের উত্তরে মোনোকিনিতে নিজের আরও এক গুচ্ছ ছবি শেয়ার করেন সোনা। কুমন্তব্যকারীদের সপাটে জবাব দিয়ে বলেন, তাঁদের কথায় তাঁর কিচ্ছু যায় আসে না। ঠিক যেমন কিচ্ছু যায় আসে না তাঁর ভুঁড়ি নিয়েও।
২২২৪
সুশান্ত সিংহ রাজপুত মৃত্যু পরবর্তী সময়ে বলিউডে স্বজনপোষণ প্রসঙ্গে পূজা ভট্টের সঙ্গেও বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন সোনা। পূজা দাবি করেন, মহেশ ভট্ট কোনও দিন স্বজনপোষণ সমর্থন করেননি।
২৩২৪
পূজাকে তোপ দেগে সোনা পাল্টা জবাব দেন, ‘‘এটাই বলিউডের আসল চেহারা। এখানে হয় তুমুল শোষণ করা হয়। নয় তো শোষিত হন সবাই মুখ বুজে। কিন্তু কেউ মনে রাখেন না, যে দিন থেকে আপস শুরু হয় সেদিন থেকে অপমৃত্যু হয় সঙ্গীতের।’’ কার্যত সোনু নিগমের ‘মিউজিক মাফিয়া’ অভিযোগকেই সমর্থন করেন তিনি।
২৪২৪
অন্য প্রসঙ্গেও বলিউডের স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সোনা। তাঁর দাবি, ‘ফুকরে’ ছবিতে তাঁর কণ্ঠে ‘অম্বরসরিয়া’ তুমুল জনপ্রিয় হয়। কিন্তু তা নাকি প্রথমে ফারহান আখতার (ছবির প্রযোজক) এবং জাভেদ আখতারের পছন্দ হয়নি। সে কারণেই কোনও পুরস্কারের জন্য তিনি মনোনয়ন পাননি বলে আক্ষেপ সোনার। স্পষ্টবাদী এই গায়িকার অভিযোগ, ফিল্ম এবং মিউজিক মাফিয়ারাই একসঙ্গে পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে চালান।