‘‘আমার আর মা নন্দিনী পালের কাছে তাপস পাল জীবিত, বর্তমান।’’
২৯ সেপ্টেম্বর আমার বাবা তাপস পালের জন্মদিন। সবাই বলছেন, বেঁচে থাকলে আজ ৬৩-তে পা দিতেন বাবা। আমার আর মা নন্দিনী পালের কাছে তাপস পাল জীবিত, বর্তমান। বাবাকে ‘অতীত’ ভাবতে খুব কষ্ট হয়। তাই আমি বলব, আজ বাবার ৬৩তম জন্মদিন। গত রাতে বাবাকে উদ্দেশ্য করে আমি আর মা ক্রিম কেক কেটেছি। এই ধরনের কেক বাবার খুব পছন্দের। সে কথা জানার পর থেকে আমার এক বন্ধু প্রীতিকা প্রতি বছর নিজে এই কেক বানিয়ে পাঠায়। সেটা পরে কাটব। জন্মদিনে বাবাকে মনে করে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (আমার বুম্বাকাকু), ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত সহ অনেকেই ইনস্টাগ্রামে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বুম্বাকাকু বাড়িতে ফুলের তোড়াও পাঠিয়েছেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমায় বার্তা পাঠিয়েছেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। এ ছাড়াও সাধারণ মানুষেরা তো আছেনই। আমি জানি, বাবা কোথাও বসে সব দেখছেন।
আমার বাবা খেতে আর খাওয়াতে খুব ভালবাসতেন। জন্মদিনেও কাজে ব্যস্ত থাকতেন। তাই আলাদা করে বিশাল কিছু না হলেও ভাল-মন্দ রান্না মা নিজের হাতে রাঁধতেন। ডাল, ভাজা, পোস্ত, মাছের পদ বাবার খুব প্রিয় ছিল। সে সব হত। গত বছর থেকে বাবার সেই খাওয়ানোর ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়েই আমি আর মা রান্না করে সামান্য কিছু অসহায় মানুষদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি। বাক্সে থাকছে খিচুড়ি, ডিমের তরকারি, মিষ্টি, নরম পানীয়।
আজ যেন বেশি করে বাবার অভাব অনুভব করছি। এ দিন হয়তো অনেকেই তাঁর ‘দাদার কীর্তি’, ‘সাহেব’, ‘ভালবাসা ভালবাসা’, ‘আপন আমার আপন’, ‘পারাবত প্রিয়া’, ‘গুরুদক্ষিণা’ দেখবেন। আমি দেখব না। বাবার ছবি যখন মুক্তি পেত, তখনই দেখতাম না! গল্পগুলো শুনতাম। আসলে, বাবা বরাবর একটু দুঃখী মানুষের চরিত্রে অভিনয় করতেন। যা খুব মনখারাপ করে দিত। তাই ছবি মুক্তি পেলে দেখতে যেতাম না। আর এখন নতুন করে দেখার প্রশ্নই নেই। তা হলে আরও মনখারাপ হয়ে যাবে। বাবাকে কি শেষ পর্যন্ত আমায় ওঁর ছবি দেখে মনে করতে হবে?
সবার প্রিয় অভিনেতা আমার কাছে শুধুই বাবা। সেই বাবা স্কুলের শিক্ষক-অভিভাবক বৈঠকে আসতেন। ক্রীড়া-প্রতিযোগিতায় তাঁকে দেখা যেত। দরকারে দিয়ে আসা-নিয়ে আসাও করেছেন। অন্যরা বাবাকে অনেক সময় ফোনে পাননি। আমার ফোন তিন বার বাজার আগেই ধরে নিতেন বাবা। তাই বাবা আমার কাছে তারকা নন, খুব কাছের বন্ধু। সেই বন্ধুকে অনেক দিন না দেখতে পেলে মন তো খারাপ হবেই।
বাবা চলে যাওয়ার পরে আমি কলকাতায়, মায়ের কাছে থাকি। অনেকেই জানতে চান বা চেয়েছেন, শেষের দিকে অভিনেতা তাপস পালের উপর কি বিধায়ক তাপস পাল ছায়া ফেলেছিল? নইলে কেন এত বিতর্কিত, রূঢ় বক্তব্য তাঁর মুখ থেকে শোনা গিয়েছিল? আজ আমি বলব, সবাই বাবার বলা বিতর্কিত কথাগুলোই শুনেছেন। কী কারণে বাবা ওই মন্তব্যগুলি করেছিলেন, কেউ জানতে চেয়েছেন? কেউ জানার চেষ্টাই করেননি। জানানোও হয়নি। শুধুই তাঁর বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। বাবা যা বলেছিলেন, তাকে মা বা আমি একটুও সমর্থন করি না। বাবাও পরে নিজের ভুল বুঝে ক্ষমা চেয়েছেন। এত দিন পরে বাবার হয়ে কোনও সাফাই গাইতেও চাইছি না। শুধু এটুকুই বলব, বাবাকে প্রচুর খারাপ মন্তব্য শুনতে হত। আমাদের নিয়ে নোংরা কথাও বলা হয়েছিল। সে সব শুনতে শুনতে রক্ত-মাংসে গড়া তাপস পালের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। রই ফলাফল এই ধরনের বিতর্কিত কথা। সেটা বুঝতে পেরেই আমি আর মা বাবার পাশ থেকে কখনও সরিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy