‘এখানে আকাশ নীল’-কে ঘিরে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। নিজস্ব চিত্র।
‘‘এতোগুলো মানুষ ‘ইয়ান’-কে ভালবেসে শরীর থেকে রক্ত দিতেও প্রস্তুত। নিজেদের হাত ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। ‘ডিপ্রেসড’ হয়ে যাচ্ছে, সুইসাইড করছে... তার কি কোনো মূল্য নেই!! আমাদের চাওয়া পাওয়ার কোনো মূল্য নেই!!’’
এ রকম এক নয়। একাধিক পোস্টে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। চোখে পড়বে আরও মারাত্মক সব প্রতিক্রিয়া। সবটাই স্টার জলসার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘এখানে আকাশ নীল’-কে ঘিরে। যখনই দর্শক মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছে যে তাদের সাধের ‘ইয়ান’-কে তারা আর দেখতে পাবে না, সে দিন থেকে প্রতিবাদের ঢেউ চ্যানেলের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে।
চলতি মাসের গোড়াতেই কেক কেটে ধারাবাহিকের আড়াইশো পর্ব উদযাপন করেছিল টিম। শুরু হয়েছিল ‘হিয়ান’ কনটেস্ট। তখনও কেউ ভাবেনি, শেষের সে দিন সত্যিই এত ভয়ঙ্কর!
আরও পড়ুন: ডেটিং অ্যাপে নুসরতের ছবি দিয়ে বন্ধুত্বের ডাক! তদন্তে লালবাজার
কেন বন্ধ হচ্ছে এত জনপ্রিয় একটি ধারাবাহিক? চ্যানেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ ব্যাপারে কিছু জানাননি। দর্শকদের অনুযোগ, ‘‘যে জুটিকে নিয়ে দু’দিন হয়েছে আপনারা এত ‘কনটেস্ট’ করে ফেললেন। এ রকম পপুলার জুটি জলসা আর একটাও বানাতে পেরেছে!! অথচ সেই জুটিকেই শেষ করে দিচ্ছেন!! এখানে আকাশ নীল বন্ধ করে দিচ্ছেন!!! দয়া করে এই কাজটি করবেন না।। একটিমাত্র চরিত্রকে দর্শকদের চাপে সরাতে বাধ্য হয়েছেন বলে দর্শকদের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন।’’
কেন এমন প্রতিক্রিয়া? বহু ধারাবাহিকই তো এ ভাবে বন্ধ হয়? এরই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মনস্তাত্ত্বিক অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমেই সাধুবাদ জানিয়েছেন ‘এখানে আকাশ নীল’-এর নির্মাতাদের। তিনি বলছেন, আজকের দিনে বাংলা সিরিয়াল নিয়ে যেখানে নানা বিরূপ মন্তব্য সেখানে নির্দিষ্ট একটি ধারাবাহিকের জন্য এত তীব্র দর্শক প্রতিক্রিয়া ঘুরিয়ে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের দক্ষতাকেই সামনে আনছে। দর্শকমনে ছাপ ফেলে যাওয়ার বিষয়টি অনুত্তমাও মেনে নিয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি দায়ী করেছেন বর্তমানের অসহিষ্ণু মনোভাবকেও। অনুত্তমার দাবি, এখনকার প্রায় প্রতিটি মানুষ কোনও কিছুর অভাব মেনে নিতে রাজি নন। সব কিছুতেই ‘হ্যাঁ’ শুনতে চান তাঁরা। আর সেটা ‘না’ বা ‘নেই’ হলেই এ ভাবে ফুঁসে ওঠেন।
কোনও বাংলা সিরিয়ালকে ঘিরে এমন উন্মাদনা কার্যত বিরল। নিজস্ব চিত্র।
এরই পাশাপাশি, দর্শকের ‘টার্গেট’ নতুন ধারাবাহিক ‘ওগো নিরুপমা’ এবং ‘ঝিনুক’ প্রমিতা চক্রবর্তীও।
স্যোশাল পেজ বলছে, নতুন ধারাবাহিকের প্রোমো, পোস্টার প্রকাশ্যে আসতেই দর্শকদের রাগ, ‘‘যে সিরিয়ালগুলোর ওপর অনেক আগেই আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছি, কই সেগুলো শেষ করার কথা তো একবারও ভাবেননি!’’
আরও পড়ুন: ‘বিচ্ছেদের পরেও আমার সম্মানের জন্য রুখে দাঁড়িয়েছিলে’, অনুরাগের পাশে এ বার কল্কিও
‘ঝিনুক’-এর বিরুদ্ধে তাঁদের হুমকি, ‘‘আমাদের কাছে সবটা পরিষ্কার। আপনাদের ঘরের মেয়েকে বাদ দিতে হল বলে দর্শকের উপর প্রতিশোধ নিলেন। ছি ছি, কি নোংরা মানসিকতা আপনাদের!! দর্শকের অনুভূতি নিয়ে খেলার ফল আপনারা খুব তাড়াতাড়ি পাবেন!! অপেক্ষা করুন আর দেখুন...’’
এক জন আরও একধাপ এগিয়ে, ‘‘ঝিনুক চরিত্রটাকে বাদ দিতে বলায় আপনারা শেষ করে দিচ্ছেন। আপনাদের কাছে চরিত্রই প্রাধান্য। আমরা দর্শকেরা আপনাদের কাছে কিছু না। ঠিক আছে। ঝিনুক সেন আরও তো সিরিয়াল করবে তখন তো ওকে বয়কট করব।...’’ এর আগেও দর্শকের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল প্রমিতাকে। ‘হিয়া’ সাময়িক সরে যেতেই।
কোনও বাংলা সিরিয়ালকে ঘিরে এমন উন্মাদনা কার্যত বিরল। শুধুমাত্র উজান-হিয়ার জন্য এত পাগলামি? নাকি এর পিছনে রয়েছে আরও গভীর কোনও মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্ব? মনোবিদ রিমা মুখোপাধ্যায়ের মতে, অনেক ধারাবাহিক তার গল্প, স্থান, কাল বা পাত্রের জন্য দর্শকমনে দাগ কেটে যায়। একসময় সেগুলো যখন শেষের মুখে তখন দর্শক এতটাই অ্যাডিক্টেড যে তাকে না দেখে থাকার কথা ভাবতেই পারে না। তার থেকেও এই প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। অতিমারির আবহে বেশির ভাগ মানুষ ঘরে বসে। তাঁদের মধ্যে একটি অংশ হয়তো নির্দিষ্ট ধারাবাহিকটি দেখতেন। ফুরিয়ে যাওয়া মানেই অভাব বোধ চারিয়ে যাওয়া। তার থেকেও এত তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে দর্শক মহলে। আত্মহত্যার হুমকি? সেটিও নিছক ধারাবাহিকের অমোঘ আকর্ষণ থেকেই? রিমার বিশ্লেষণ, অনেকেই বাড়িতে ছোটবেলায় এই ধরনের হুমকি, ধমক দিয়ে অনেক কিছু আদায় করেছেন। সেই অভ্যাস আজও রয়ে গিয়েছে তাঁদের। কিন্তু মা-বাবা যা মানবেন তা কি বাইরের লোক মেনে নেন?
যাঁদের নিয়ে এত কাণ্ড সেই ‘হিয়া’, ‘উজান’ কী বলছেন? এই বিষয়ে আনন্দবাজার ডিজিটালকে অনামিকা জানিয়েছিলেন, সব কিছু সময়মতো শেষ না হলে আকর্ষণ হারায়। ঠিক সময়েই শেষ হচ্ছে ধারাবাহিক। ‘হিয়া’র কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়েছিল, দর্শক মহলের সমালোচনায় অসন্তুষ্ট হয়েই নাকি চ্যানেল কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ? উত্তরে তিনি সাবধানী, এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। সব উত্তর চ্যানেল কর্তৃপক্ষের কাছে। রাতারাতি ক্ষোভ যখন বেড়ে দ্বিগুণ তখনই অনামিকা ফোনে অধরা!
খবর ছড়াতেই মুখে কুলুপ ‘উজান’ শন বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। সাড়া মেলেনি পরিচালক সীমান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘ঝিনুক’ প্রমিতা চক্রবর্তীরও।
অথচ, তাঁর উপস্থিতি নিয়ে এর আগে একই ভাবে দর্শকেরা যখন খারাপ মন্তব্য করেছিলেন তখন তিনিই সবার মুখ বন্ধ করতে ‘আইনি সাহায্য’ নেওয়ার কথা বলেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy