গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
চলতি নির্বাচনকে মাথায় রেখে শুরু হয়েছে আনন্দবাজার অনলাইনের বিশেষ বিভাগ ‘ভোটের দিব্যি’। নির্বাচন নিয়ে তাঁদের মনোভাব ব্যক্ত করছেন আপনাদের পরিচিত মুখেরা। এ বারে ভোট নিয়ে লিখলেন সঙ্গীতশিল্পী রূপঙ্কর বাগচি।
এই মুহূর্তে নির্বাচনী আবহাওয়া চারদিকে। ছেলেবেলায় আমার কাছে তখন ভোট মানেই ছিল ছুটির দিন। আমি উত্তর কলকাতার দেশবন্ধু পার্কের সামনে থাকতাম। রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রীটের সামনের পুরো রাস্তা জুড়ে ক্রিকেট খেলতাম। পুরো রাস্তা ফাঁকা থাকত। ভোট দিতে যেতেন বাবা-মা। কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল না। আমার অঞ্চলে সব সময় আমি কংগ্রেসকেই জিততে দেখেছি, সিপিএম আর কংগ্রেসের মধ্যে কংগ্রেসেরই আধিপত্য ছিল। অজিত পাঁজা ছিলেন আমাদের সাংসদ আর বিধায়ক ছিলেন সাধন পাণ্ডে। কিন্তু তা নিয়ে আমাদের বয়সিদের তেমন ভাবনা ছিল না। আমার বা আমার বন্ধুদের মন থাকত ক্রিকেট টুর্নামেন্টের দিকে। প্রথম বার ভোট দিয়েছিলাম যখন, তখন কলেজে আমি। রাজনৈতিক সচেতনতা হয়েছে। বরাবরই আমার বই পড়ার অভ্যাস, সেই থেকেই সচেতনতা তৈরি হয়। তাই ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রেও আমি স্বাধীন ছিলাম। প্রথম যে বার ভোট দিই, দেশবন্ধু পার্কের ভিতরে ছিল নির্বাচনকেন্দ্র। খুব ভোর ভোর পৌঁছে গিয়েছিলাম। আর আমার মা-বাবা কোনও দিনই আমায় কিছু নিয়ে জোর করেননি। বাবা ছিলেন কট্টর সিপিএম। আমার মা কখনও মুখ ফুটে বলেননি, কিন্তু আমার মনে হত। বাবা যদিও কমিউনিজ়মে বিশ্বাসী ছিলেন না সেই ভাবে। যে হেতু বাবা শিক্ষক ছিলেন আর সিপিএম ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষকদের বেতন অনেকটা বাড়ে, তাই তিনি সুবিধা পেয়েছিলেন বলেই সিপিএমের সমর্থক ছিলেন। অন্তত সেই সময় যেটুকু বুঝেছিলাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বয়স বেড়েছে, সঙ্গে রাজনীতি সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে, ধারণাও বদলেছে। কলেজে ওঠার পরও কোনও রাজনীতি করিনি। শুধু কিছু ছোট রাজনৈতিক দল ছিল, যাঁদের সদস্যেরা মিছিল লম্বা করার জন্য আমাদের ডেকে নিয়ে যেতেন। আমি এবং আমার কিছু বন্ধু শর্ত রাখতাম, কফি হাউসের শিঙাড়া আর ইনফিউশন খাওয়ার টাকা দিলে কলেজ স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলে হাঁটতাম। ফেরার সময় বাসভাড়াটাও ওঁরাই দিতেন।
তবে আমি রাজনীতিতে আসার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি কোনও দিন। রাজনীতি করতে যে পরিশ্রম করতে হয় বলে আমার ধারণা, সেই খাটনি খাটার ক্ষমতা আমার নেই। ছবির জগতের অনেকেই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু তাঁদের দেখে আমার মনে হয়েছে, এটা অত্যন্ত বড় দায়িত্ব, বোঝাও বটে। যাঁরা সমাজের বা মানুষের জন্য কাজ করতে ভালবাসেন অথবা রাজনীতি করতে ভালবাসেন, তাঁদের অবশ্যই রাজনীতি করা উচিত। আমারও মানুষের জন্য কাজ করতে ভাল লাগে। কিন্তু সেটা যদি আমার ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করে, তখন সেই কাজ করতে আমি সক্ষম হব বলে আমার মনে হয় না। আর রাজনীতির মধ্যেকার যে কূটনীতি, তা নিয়ে এখনও সম্যক ধারণা গড়ে ওঠেনি। আমার চোখে, রাজনীতিবিদদের অত্যন্ত শিক্ষিত হওয়া উচিত। রাজনীতি সম্পর্কে যাঁদের জ্ঞান থাকবে অঢেল। তাঁরা অত্যন্ত সহনশীল মানুষ হবেন, খাটিয়ে মানুষ হবেন। এবং তাঁরা নিজেদের অঞ্চলের মানুষের কথা সারা ক্ষণ ভাববেন এবং উন্নতি করার চেষ্টা করবেন। এবং অবশ্যই সকলের কাছে স্বচ্ছ থাকবেন।
আমার কাছে কখনও আলাদা করে রাজনীতি করার প্রস্তাব আসেনি। এলেও না বলতাম। আমার স্ত্রী এবং আমার মেয়েও আমায় রাজনীতির আঙিনায় দেখতে খুব একটা পছন্দ করবেন না বলেই আমার মনে হয়। তবে যদি কখনও সুযোগ আসে বা ক্ষমতা হয়, আমি তিনটি জিনিস করতে চাইব। পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের স্বাস্থ্যবিভাগকে অনেক বেশি সচেতন করার চেষ্টা করব, মানুষ যাতে সহজ ভাবে সেখানে পৌঁছতে পারেন তার চেষ্টা করব। বিশেষ করে, সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নতি চাইব। শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি চাইব, বর্তমানে সরকারি স্কুলের অবস্থা খুব ভাল নয়। চাইব, এমন ব্যবস্থা হোক, যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা সরকারি স্কুলে এসে পড়াশোনা করে। তৃতীয়ত, চেষ্টা করব, বেকারত্ব যেন না থাকে। ভাল চাকরি করতে বা কেরিয়ার গড়তে যাতে বিদেশ যাওয়ার কথা ভাবতে না হয় ছাত্র-ছাত্রীদের।
এই মুহূর্তে অনেক বদল আনা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের ভাবা উচিত। আর যে হেতু এটি কৃষিনির্ভর দেশ, তাই সে দিকেও আরও একটু বেশি নজর দেওয়া উচিত। নিজের ইন্ডাস্ট্রি নিয়েও কিছু ভাবনা রয়েছে। রাজ্য সরকারের কাছেও আর্জি, খেলোয়াড়দের যেমন কোটায় চাকরি হয়, তেমন আমাদের সহযোদ্ধা, মিউজিশিয়ানসদেরও যেন জীবিকার সংস্থান থাকে। জানি না সম্ভব কি না, তবু যদি সম্ভব হয়, অনেক পরিবার নিশ্চিন্তে থাকবে বলেই মনে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy