Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
KK

Singer Rupankar Bagchi: প্রশ্ন নিলেন না, শুধু ছাপা বিবৃতি! ‘ভুল’ নয়, ‘মুহূর্তের অসতর্কতা’, ব্যাখ্যা দিলেন রূপঙ্কর

শুক্রবার ভোর হতেই বাগচি দম্পতি ঠিক করেছিলেন, বাছাই-করা সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলবেন তাঁরা। মুখ খুললেন বটে, বললেন না। পড়লেন।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২২ ১৯:৩৪
Share: Save:

তিন রাত ঘুম নেই রূপঙ্কর এবং চৈতালি বাগচির। শুক্রবার ভোরেই তাঁরা ঠিক করেছিলেন, ‘কেকে বিতর্ক’ নিয়ে বাছাই-করা সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলবেন তাঁরা। কিন্তু বেলা গড়াতে মন বদল করেন গায়ক এবং তাঁর স্ত্রী। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, বিকেল ৫টায় প্রেস ক্লাবে ‘সাংবাদিক সম্মেলন’ করে সমস্ত সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন। সেই মতো সমস্ত সংবাদমাধ্যমকেই তাঁরা সাংবাদিক সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানান।

কিন্তু বাস্তবে কোনও ‘সাংবাদিক সম্মেলন’ হল না। হল ‘বিবৃতি পাঠ’। অধিকাংশ সাংবাদিক সম্মেলনেই এমন বিবৃতি পাঠ হয়ে থাকে। কিন্তু তার পরে সংবাদমাধ্যমের থেকে প্রশ্নও নেওয়া হয়। যেমন রূপঙ্করও নেবেন বলে ভাবা গিয়েছিল। বস্তুত, তাঁকে বহু প্রশ্ন করারও ছিল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল, যে কেক প্রস্তুতকারক সংস্থার হয়ে রূপঙ্কর বিজ্ঞাপনী জিঙ্গল গেয়েছেন, তারা কি গায়কের সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিল করবে? নেটমাধ্যমে তারা তেমন ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই দিয়েছে।

কিন্তু রূপঙ্কর কোনও প্রশ্ন নেননি। বাংলায় লেখা বিবৃতিটি পাঠ করে তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েন। তাঁর দিকে প্রশ্ন ধেয়ে এসেছিল বটে। কিন্তু করজোড়ে রূপঙ্কর জানিয়ে দেন, তিনি কোনও প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন না। পরে কোথাও, অন্য কোনও দিনে প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন। যে বিবৃতিটি রূপঙ্কর পাঠ করেছেন, তার তলায় তাঁর সই রয়েছে। সেখানে রূপঙ্কর কেকে-র মৃত্যুর জন্য গায়কের মুম্বইবাসী পরিবারের কাছে নিঃশর্তে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। বিবৃতির প্রথমেই লেখা হয়েছে, ‘প্রথমেই প্রয়াত কেকে-র পরিবারের কাছে নিঃশর্ত দুঃখপ্রকাশ করছি।আমার যে ভিডিয়োটি গত ক’দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়া ও তার বাইরে এত বিরামহীন উত্তেজনার উপাদান হয়েছে, এখানে পৌঁছনোর আগে সেটি আমি ফেসবুক থেকে ডিলিট করলাম। পরলোকগত গায়কের পরিবারের কারও সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। কিন্তু আপনাদের মাধ্যমে মুম্বইবাসী তাঁদের আবার জানাচ্ছি যে, আমি আন্তরিক দুঃখিত। কেকে আজ যেখানেই থাকুন, ঈশ্বর যেন ওঁকে শান্তিতে রাখেন।’

বিকেল ৫টা থেকেই সাংবাদিকদের ভিড় উপচে পড়েছিল প্রেস ক্লাবে। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কিছু দেরিতে ‘সাংবাদিক সম্মেলন’ শুরু করেন রূপঙ্কর-চৈতালি। শিল্পীর চোখেমুখে রাত জাগার স্পষ্ট ছাপ। মাইক্রোফোনের সামনে তিনি ধীরে-ধীরে, উপযুক্ত বিরতি দিয়ে পড়লেন তাঁর বিবৃতি। কিন্তু সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। চৈতালি সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে বিতরণ করলেন বিবৃতির প্রতিলিপি। অনুরোধ করলেন, “এখন কোনও প্রশ্ন করবেন না।”

প্রসঙ্গত, রূপঙ্করের নাতিদীর্ঘ বিবৃতিতে তিনি কোথাও তাঁর ফেসবুকে কেকে-কে নিয়ে বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাননি। ওই বক্তব্য ‘ভুল’ ছিল, এমনও বলেননি। রূপঙ্করের বিবৃতিতে ছিল মূলত তাঁর সঙ্গীতজীবনে ‘নজিরবিহীন বিভীষিকা’র কথা। সেখানে বলা হয়েছে, ‘আমার সঙ্গীতজীবনে এই রকম বিভীষিকার মুখোমুখি হতে হবে ভাবিনি। যেখানে ওড়িশায় বসে-করা একটা ভিডিয়ো পোস্ট এমন পরিস্থিতি তৈরি করবে, যা আমার গোটা পরিবারকে ঠেলে দেবে চরম আতঙ্ক, দুর্ভাবনা এবং মানসিক নিপীড়নের মধ্যে। যেখানে আমার বাড়ির বাইরে নিরাপত্তা রক্ষায় পাহারা দেবে টালা থানার পুলিশ। নিয়ত হুমকি এসেই যাবে আমার স্ত্রীর ফোনে। গায়ক হিসেবে দেশেবিদেশে এত লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। তাদের আবেগ অনুভব করেছি এত বছর ধরে ধারাবাহিক ভাবে। স্বীকৃতি পেয়েছি নানা স্তরে। মুহূর্তের অসতর্কতা যে এমন গনগনে এবং মারমুখী আবেগ বয়ে আনবে কে জানত? এত ঘৃণা, এত আক্রোশ, এত বিরুদ্ধতা…কিন্তু অনেকটাই তৈরি হল আমার বক্তব্য আমি ঠিকমতো গুছিয়ে বলতে না পারায়।’

রূপঙ্কর জানিয়েছেন, গায়ক হিসেবে তাঁর ব্যক্তিগত কোনও হতাশা নেই। কিন্তু বাঙালি গায়ক হিসেবে সমষ্টিগত বিপন্নতা রয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, কেকে-র মতো ভারতবিখ্যাত নামটা নিছক ‘প্রতীক’ ছিল।

রূপঙ্করের বিবৃতি বলছে, ‘প্রয়াত কেকে সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত কোনও বিদ্বেষ নেই। থাকার প্রশ্নও ওঠে না। আমি শুধু ওঁর কনসার্ট নিয়ে তৈরি-হওয়া উন্মাদনা লক্ষ করে বলতে চেয়েছিলাম, বাঙালি গায়কদের জন্যও আপনারা একই রকম দরদ দেখান। ব্যক্তিগত ভাবে ঈশ্বরের আশীর্বাদে এবং আপনাদের শুভেচ্ছায় গায়ক হিসেবে আমার ব্যক্তিগত কোনও হতাশা নেই। কিন্তু বাঙালি গায়ক হিসেবে সমষ্টিগত বিপন্নতা রয়েছে। ইদানিং আরও বেশি করে বারবার মনে হয়, দক্ষিণ বা পশ্চিম ভারত যে ভাবে তার শিল্পীদের স্বার্থরক্ষার্থে ঝাঁপিয়ে পড়ে, আমরা যেন সেটা করতে দ্বিধাগ্রস্ত। শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীত সবেতেই প্রাদেশিক পারফর্মার যেন কঠিন খাদের ধারে এক অস্তিত্বের সঙ্কটে দাঁড়িয়ে। তাই আমি একার কথা বলতে চাইনি। একটা সমষ্টির কথা বলতে চেয়েছিলাম।’

ঘটনাচক্রে, রূপঙ্কর তাঁর ‘বিতর্কিত’ ভিডিয়োয় কিছু সমকালীন গায়ক-গায়িকার নাম করেছিলেন। তাঁদের কয়েকজন পরে জানিয়েছেন, রূপঙ্করের ওই বক্তব্যের সঙ্গে তাঁরা ‘সহমত’ নন। সেই প্রসঙ্গও রূপঙ্করের বিবৃতিতে এসেছে। তিনি জানিয়েছেন, ‘একইসঙ্গে তাই আরও কিছু সমযোদ্ধার নাম করেছিলাম। যাদের ট্যালেন্ট আমার মতে জাতীয় পর্যায়ের। পরে মনে হয়েছে, নামগুলো বলার আগে জিজ্ঞাসা করে নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আবার বলি, একক ভাবে ইস্যুটা দেখিনি। কেকে-র মতো ভারবিখ্যাত নামটা নিছক প্রতীক ছিল। নিছক উপলক্ষ্য। লক্ষ্য কখনও তিনি ছিলেন না। থাকার প্রশ্নও নেই।…কে জানত চরম দুর্ভাগ্য কেকে-র জন্য এই ভাবে ওঁত পেতে রয়েছে। একজন প্রথিতযশা শিল্পী কলকাতার মঞ্চে গাইতে এসে এ ভাবে প্রাণ হারালেন, সেটা খুব হৃদয়বিদারক।’

এর পরেই লিখিত ভাবেই রূপঙ্কর জানান, ‘আমি আজ আপনাদের কারও সঙ্গে আলাদা করে কথা বলছি না। পরে নিশ্চয়ই বলব। কিন্তু আজ সেই দিন নয়। আপনাদের কাছে মার্জনা চাইছি আগাম।’

এর পরেই হাতজোড় করে রূপঙ্কর-চৈতালি প্রেস ক্লাব ছেড়ে বেরিয়ে যান। ততক্ষণে প্রেস ক্লাব জেনে গিয়েছে ‘সাংবাদিক সম্মেলন’ ভোকাট্টা!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy