গ্রাফিক- তিয়াসা দাস।
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর পর দেশ উত্তাল। এখন ঢেকে রাখা, চেপে রাখার সময় নয়। সত্যিকে মানুষের সামনে তুলে ধরার সময়। আর্টের সঙ্গে নোংরামি চলছে এখন। কারা নোংরামি করছে?
সলমন খান। সিক্স প্যাক করেছে ও, কিন্তু এই সিক্স প্যাক আর দশটা দেহরক্ষী নিয়ে দাঁড়ালেও মানুষ ওকে ছাড়বে না। কেন ছাড়বে? আমি মানুষের হয়েই কথা বলব। এই সব বিনোদন দুনিয়ার মানুষের মুখোশগুলো এ বার খুলে দেওয়া উচিত। আমি তো আমার জন্য কথা বলছি না... মানুষের কথা বলছি।
সলমন খানকে যদি ধরি, রাস্তার উপরে তিনটে খুনের অভিযোগ। জঙ্গলে হরিণ মারার অভিযোগ। একের পর এক লোক পেটানো। এখন আবার মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে ক্ষমতা দেখাচ্ছে! কেন? বচ্চন সাব কি কোনও দিন বলেছেন, একে গাওয়াও, ওকে নিয়ো না? নাকি উত্তমকুমার বলতেন, তাঁর ছবিতে অমুককে দিয়েই রেকর্ড করাতে হবে? আর এখন যে যাকে পারছে ‘সুযোগ’ করে দিচ্ছে গান গাওয়ার। আরে, গানের লোক না হয়ে গানের সুযোগ করে দিতে পার তুমি? আবার নিজেও গেয়ে উঠছ! কোনও কিছুর মাথামুন্ডুই নেই।
এই যে রিয়্যালিটি শোয়ে যাচ্ছে সব টেরিফিক সিঙ্গার। কী ভাল গায় সব! অথচ কী ভবিষ্যৎ ওদের? এর থেকে সিভিল সার্ভিস বা অন্য প্রতিযোগিতার তো একটা মূল্য আছে, ভবিষ্যৎ আছে। রিয়্যালিটি শোয়ে কী আছে? ৫০০টা চ্যানেলে ট্যালেন্ট শো, ২০টা ধরলে দশ হাজার গায়ক গাইছে। চ্যানেল টি আরপি বাড়াচ্ছে। আর যাঁরা বিচারক তাঁরা তো চাকরি করেন! চাকরি রাখতে বাচ্চাগুলোকে ভাল ভাল কথা বলছে! কী লাভ? এরকম কিন্তু হয়েছে, একজন গায়ককে রিয়্যালিটি শো থেকে তাড়ানো হয়েছে কিন্তু পরবর্তীকালে সে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।
আর্টের সঙ্গে নোংরামি চলছে এখন। কারা নোংরামি করছে?
এত কথা শুনছি এখন—‘নেপোটিজম’। এটা খারাপ না! ট্যালেন্টেড বাবার ছেলে তো হতেই পারে সেই গুণের অধিকারী। আর গানের জগতে সেটা বেশি হয়েছে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ, এসডি-র ছেলে আরডি। কিন্তু হেমন্তের ছেলে তো হেমন্ত হয়নি। সলিল চৌধুরীর মেয়ে সলিল চৌধুরী হয়নি। মান্না দে-র মেয়ে মান্না দে হয়নি। খুব কম এরকম হয়। বচ্চনের ছেলে বচ্চন হয়নি। আশাজির ছেলেমেয়ে কেউ আশাজি হয়নি। যার মধ্যে ট্যালেন্ট আছে সে বেরিয়ে আসবে। এখানে স্বজনপোষণ কাজ করে না।
খারাপ লাগে ভাবতে, লিখতে, ফিল্ম এখন আর আর্ট নেই। পুরো ব্যবসা হয়ে গিয়েছে। যে মানুষের কাছে ক্ষমতা আছে সে দেখবে সামনের মানুষটাকে কেমন করে দমিয়ে রাখা যায়। সে ভাববে ও ছবি রিলিজ করতে এলে একশোটা হলের মধ্যে যেন একটা হলে ওর ছবি দেখা যায়। মেরে দাও ওকে, ওর ছবিকে! এগুলো বিজনেস গেম।
আর সুশান্ত সিংহ এই ক্ষমতার খেলায় বলিউডের কাছে থ্রেট হয়ে গিয়েছিল। সুশান্ত তো আয়ুষ্মান খুরানা নয়। আয়ুষ্মান পাশের বাড়ির ছেলে, বোকা বোকা, কমেডি চরিত্রে চলবে। ওর গ্ল্যামার হবে না। অন্য দিকে ইরফান, নওয়াজ এরা কারও থ্রেট হবে না। এরা হচ্ছে আগেকার উৎপল দত্ত, নাসিরুদ্দিন শাহ। এরা গ্ল্যামার হিরো বা রকস্টার নয়। সুশান্ত সোজাসুজি চ্যালেঞ্জ করতে পারত সলমন, শাহরুখ খানকে। সুশান্তের গ্ল্যামার, হিরোইজম রণবীর কপূর, রণবীর সিংহের কাছেও থ্রেট ছিল। সুশান্ত স্টার মেটিরিয়াল, শুধু অভিনেতা নয়। ওকে বাঁচতে দেওয়া হল না। সুপারস্টারদের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা রাখত ও। যেমন বিবেক ওবেরয়। ওকে ইন্ডাস্ট্রির তরফ থেকে প্রচুর থ্রেট নিতে হয়েছে। ঐশ্বর্যা যার কোলে বসে যায় সে তো প্রথম থেকেই ইন্ডাস্ট্রির স্ক্রিনিং-এ! বিবেক কত বড় স্টার ছিল যে সলমনকে ছেড়ে ঐশ্বর্যা ওর কাছে চলে গেল! ব্যস! সেই বিবেককেই শেষ করে দিল ইন্ডাস্ট্রি। ফতোয়া জারি হল! কেরিয়ার গেল। এমনও বলা হল, কোনও নায়িকা যেন ওর সঙ্গে কাজ না করে। ও ছবিতে থাকলে বলা হল ডিস্ট্রিবিউটররা যেন ওর ছবি না কেনে। কে করাবে ওকে দিয়ে ছবি? কী দোষ ছিল ওর? গায়কদের ক্ষেত্রেও তাই তাকে গান গাইয়ে, তার সামনেই পাকিস্তানি সিঙ্গারকে দিয়ে ডাব করানো হচ্ছে। কী অপমান! নায়িকাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। একজন বয়ফ্রেন্ড, আর একজন বর, আর একজন আবার প্রোডিউসার! কী করবে তারা?
বিবেক কত বড় স্টার ছিল যে সলমনকে ছেড়ে ঐশ্বর্যা ওর কাছে চলে গেল! ব্যস! সেই বিবেককেই শেষ করে দিল ইন্ডাস্ট্রি
এদের নিয়ে কথা বলতেও ইচ্ছে করে না আমার। কিন্তু মানুষ কতটা চেনে মহেশ ভট্টকে?তাঁর কাজকর্মকে? প্রশ্ন করুক মানুষ। চিনুক।
আমি বরাবর পাকিস্তানি সিঙ্গারদের নিয়ে কথা বলেছি। নাম নিইনি, তাতে ওদের প্রচার হবে। তবে নিজেদের ইন্ডাস্ট্রিতে যা হচ্ছে…আজ লিখতে বাধ্য হলাম।
সলমন খান, কর্ণ জোহর, মহেশ ভট্ট এ বার সাবধান হোন। আসুন তাঁরা এ বার সামনে, মাটিতে মানুষ তাঁদের ছেড়ে দেবে না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy