(বাঁ দিকে) স্নেহাশিস চক্রবর্তী। স্বরূপ বিশ্বাস (ডান দিকে)। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
অপমানিত প্রযোজক-পরিচালক স্নেহাশিস চক্রবর্তী। তাঁর জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘গীতা এলএলবি’-র হিন্দি সংস্করণের শুটিং শুরু হয়েছিল সোমবার। অর্ধেক শুটিংয়ের পরে আচমকা বন্ধ কাজ। স্নেহাশিসের অভিযোগ, দুপুরের খাওয়া শেষ হতেই কোনও কিছু না জানিয়ে শুটিং ফ্লোর ছেড়ে চলে যান কলাকুশলীরা।
বিষয়টি জানতে টলিউড ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি জানিয়েছেন, যে চ্যানেলের হয়ে স্নেহাশিস শুটিং শুরু করেছিলেন তাদের কিছু নিয়মবিধি মানার নির্দেশ দিয়েছিল ফেডারেশন। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনও মতামত জানাননি। সদুত্তর না পাওয়া পর্যন্ত নতুন ধারাবাহিকের শুটিং বন্ধ থাকবে। নিয়মিত ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে অবশ্য এই নির্দেশ জারি হচ্ছে না।
প্রতি সপ্তাহে স্নেহাশিসের ধারাবাহিক ‘গীতা এলএলবি’ রেটিং চার্টের প্রথম দশে থাকে। সেই ধারাবাহিকের হিন্দি সংস্করণ হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই খুশি প্রযোজক-পরিচালক। এই ধারাবাহিক দিয়ে হিন্দি বলয়ে পা রাখতে চলেছেন বাংলার ছোট পর্দার অভিনেত্রী শ্রীতমা দে। বাংলা ছোট পর্দার দুনিয়া থেকে থাকছেন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, মেঘনা হালদার, অসীম চৌধুরী-সহ অনেকেই। মুম্বই থেকে যোগ দেবেন সতেরো জন অভিনেতা। এই ধারাবাহিকের হাত ধরে ছোট পর্দায় দেখা মিলবে শকুন্তলা বড়ুয়ার।
আনন্দবাজার অনলাইনকে স্নেহাশিস বলেন, “কাজে যাতে কোনও খুঁত না থাকে, সে জন্য তিন মাস ধরে সবাইকে নিয়ে মহড়া দিয়েছি। কাজ শুরুর আগে মুম্বইয়ে শুটিং করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন জাতীয় স্তরের চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। আমি বলেছিলাম, কলকাতায় থেকেও বড় মাপের কাজ সম্ভব। আমি করে দেখিয়ে দেব। এই ঘটনায় মুম্বইয়ের কাছে মুখ পুড়ল।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, কলকাতার চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে কিছুই জানাননি। ফলে, আমতলার একটি প্রথম সারির রিসর্টে সকাল থেকে জোরকদমে একপ্রস্ত শুটিংও সারেন। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার বিরতি দেন। সেই পর্ব মিটতেই গুটি গুটি পায়ে সকলে সেট ছেড়ে চলে যান। স্নেহাশিস প্রত্যেককে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, কেন শুটিং বন্ধ করে দেওয়া হল। তাঁর দাবি, “কেউ সদুত্তর দিতে পারেননি। সকলে চুপচাপ চলে গেলেন। আমি বোকার মতো চুপচাপ দেখলাম।” তাঁর আফসোস, মুম্বই চ্যানেল কর্তৃপক্ষের কথা শুনলে তাঁকে এই দিন দেখতে হত না। তাঁর তো মাথা হেঁট হলই। সম্প্রচারের দিন ঠিক হয়ে গিয়েছে। শহরের নানা জায়গায় শুটিং করবেন বলে অগ্রিম দিয়ে রেখেছেন। এ বার তিনি কী জবাব দেবেন?
কী কারণে বন্ধ হয়ে গেল স্নেহাশিসের শুটিং? আনন্দবাজার অনলাইন প্রশ্ন রাখতেই স্বরূপের বক্তব্য, “ইদানীং সকল চ্যানেল পুরনো-নতুন ধারাবাহিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখিয়ে দিচ্ছে। এতে তারা লাভবান হলেও মার খাচ্ছে টেলিপাড়া। সেটা বন্ধ করার নির্দেশ জানিয়ে ফেডারেশন বাংলা চ্যানেলগুলোকে চিঠি দিয়েছিল। অন্যান্য চ্যানেল ফেডারেশনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে। ব্যতিক্রম স্নেহাশিস যে চ্যানেলের হয়ে কাজ করছে সেটি।” স্বরূপ জানিয়েছেন, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ নতুন হিন্দি ধারাবাহিকটি ওটিটিতে দেখাবেন না— লিখিত ভাবে জানালেই তিনি রাতারাতি শুটিং শুরুর অনুমতি দেবেন। তিনি আরও বললেন, “স্নেহাশিসদার মতো সজ্জন ব্যক্তি দুটো নেই। তিনি সম্ভবত চ্যানেলের প্রতি ফেডারেশনের এই নির্দেশের কথা জানেন না। আমি কয়েক বার তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। ব্যস্ততার কারণে সেটাও সম্ভব হয়নি।” তাঁর মতে, প্রযোজক-পরিচালকও যদি তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসেন তাতেও তিনি রাজি।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব স্নেহাশিসও পাল্টা যুক্তি দেখিয়েছেন। তাঁর দাবি, স্বরূপও যদি কোনও ভাবে বিষয়টি সম্পর্কে তাঁকে সজাগ করতেন তা হলে এত বড় অঘটন ঘটত না। তিনি চ্যানেলের সঙ্গে ফেডারেশনের কথাবার্তার বিন্দুবিসর্গ জানেন না। শুটিং বন্ধের পর থেকে কারণ জানতে চেয়ে নাগাড়ে মু্ম্বই থেকে ফোন আসছে। অনেক কটাক্ষও শুনতে হচ্ছে তাঁকে। এ বার কি মুম্বই গিয়ে ধারাবাহিকের শুটিং করবেন? বিরক্ত প্রযোজক-পরিচালকের বক্তব্য, “এ সব ভাবার মতো মানসিকতা নেই এই মুহূর্তে। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে এত দিন সৎ ভাবে কাজ করার ফল পেলাম। এ বার বাংলায় কাজ করতেই ভয় পাচ্ছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy