কৃষ্ণকলি
গল্পের শুরু
অচলাবস্থা কাটিয়ে মেগা সিরিয়ালের শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল ১০ জুন। সেই মতো স্টুডিয়ো স্যানিটাইজ় করা হয়, শিল্পীরাও কল টাইম পেয়ে যান। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধেয় আর্টিস্ট ফোরাম জানায়, করোনার কারণে যে বিমার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল গত বৈঠকে, সেই সংক্রান্ত কাগজ হাতে না পেলে শিল্পীরা যেন শুটিংয়ে না যান। প্রযোজকেরা পাল্টা জানান, করোনার পরিস্থিতিতে তাঁরা আর শুটই চালু করবেন না। শুরু হয়ে যায় টানাপড়েন। ফলে বুধবার কোনও শুটিং হয়নি।
ফ্ল্যাশব্যাক
গত ৪ জুনের বৈঠকে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে স্থির হয়, শুটিং করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনও শিল্পীর মৃত্যু হলে এককালীন ২৫ লক্ষ টাকার বিমার ব্যবস্থা করা হবে। যার ৫০ শতাংশ দেবে চ্যানেল, প্রযোজনা সংস্থা দেবে ৪০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ আর্টিস্ট ফোরাম।
ক্রাইসিসের সূত্রপাত
আর্টিস্ট ফোরামের বক্তব্য ছিল, শিল্পীদের বিমার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই তাঁরা কাজ শুরু করবেন। বিমার কাগজ ফোরাম চেয়ে পাঠায় প্রোডিউসার্স গিল্ডের কাছে। প্রত্যুত্তরে চ্যানেল ও প্রযোজকরা মৌখিক আশ্বাসের উপরে ভরসা রাখতে বলে। তাদের বক্তব্য, বিমার প্রক্রিয়া মিটতে সময় লাগবে। তত দিন শুটিং চলুক। এ দিকে ফোরামের যুক্তি, বিমা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগে কোনও শিল্পী করোনাভাইরাসের কারণে মারা গেলে, তাঁর কী হবে? তিনি কি বিমার আওতায় পড়বেন? সেই সময়টুকুর জন্য আলাদা করে ২৫ লক্ষ টাকার বন্ডের দাবি জানায় ফোরাম। যা প্রযোজক ও চ্যানেল সরাসরি নাকচ করে দেয়। তাদের বক্তব্য, অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিতে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই করছেন। আর শুটিং সেট থেকেই কারও করোনা হচ্ছে, এমন নিশ্চয়তাও তো নেই। তা সত্ত্বেও এখানে অন্তত বিমার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে, সেটাই বা কম কী?
‘ভিলেন’ কে?
এই বিবাদে রাতারাতি ভিলেন হয়ে যায় আর্টিস্ট ফোরাম। বাংলা ইন্ডাস্ট্রি যে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিল, শুধুমাত্র ফোরামের ‘ইচ্ছাকৃত’ আপত্তির কারণে শুটিং শুরু করা গেল না, এমন মন্তব্য ভরে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর্টিস্ট ফোরামের সিদ্ধান্ত ঘিরে শিল্পীদের মধ্যেও মতপার্থক্য দেখা দেয়। আর্টিস্ট ফোরামের অফিসে অনেক শিল্পী বিক্ষোভও দেখান।
আরও পড়ুন: গানে-কবিতায় লোপামুদ্রা-শ্রীজাত-সুজয়প্রসাদের 'ঋতু' স্মরণ
খেলা ঘুরে গেল
মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত আর্টিস্ট ফোরামকে ভিলেন দর্শানো হচ্ছিল। বুধবার ফোরামের তরফে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, শুটিং শুরুর আগে সমস্ত চ্যানেল ও প্রযোজকদের কাছে আর্টিস্ট ফোরাম শিল্পীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিত করতেই কয়েকটি নৈতিক দাবি জানিয়েছিল। ফোরামের কোনও আর্থিক মুনাফা না থাকা সত্ত্বেও তারা শিল্পীদের হয়ে জীবনবিমার ১০ শতাংশ প্রিমিয়ামের দায়িত্ব তুলে নিয়েছিল। কারণ একমাত্র শিল্পীরাই মাস্ক ও সুরক্ষাকবচ ছাড়া ফ্লোরে থাকবেন। আর্টিস্ট ফোরাম শিল্পীদের সুরক্ষাবিধি নিশ্চিত করেই শুটিং শুরু করতে চাইছে। তারা শুটিং বন্ধ রাখতে চায়নি। শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়-সহ বেশ কিছু সিনিয়র শিল্পীরা ফোরামের দাবিকে সমর্থনও করেন।
খুচরো চমক
চাপানউতোর চলাকালীন বুধবার দুপুরে রটে যায়, অত্যধিক চাপে আর্টিস্ট ফোরামের কার্যকরী সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী পদত্যাগ করেছেন। জানা যায়, শুটিংয়ে জিনিসপত্র সাপ্লাইয়ের লোকজনও সুরক্ষার কারণে শুটিং বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরে অবশ্য শঙ্কর জানিয়ে দেন তিনি পদত্যাগের কথা ভাবছেন না।
যবনিকা পতন
বুধবার সারাদিন পরপর বৈঠক চলে। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে আর্টিস্ট ফোরাম, টেকনিশিয়ান, প্রযোজক এবং চ্যানেল কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় বৈঠক করে। সিদ্ধান্ত, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে শুটিং।
বৈঠক শেষে ঠিক হয়, বিমার কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগে কোনও শিল্পী করোনায় মারা গেলে, এককালীন টাকা দেওয়া হবে, যা যৌথ উদ্যোগে (চ্যানেল, প্রোডিউসার্স গিল্ড, আর্টিস্ট ফোরাম) টাকা তুলে রাখা হবে। কিন্তু ওই টাকার পরিমাণ স্থির হয়নি। সূত্রের খবর, ফোরামের ২৫ লক্ষ টাকার বন্ডের দাবি মানা হয়নি। তবে শুটিং বিধির যে নির্দেশিকা তৈরি হয়েছিল, অবশেষে তাতে চ্যানেলের প্রতিনিধি, প্রযোজক, আর্টিস্ট ফোরাম, ফেডারেশন-সহ সব পক্ষই স্বাক্ষর করেছে।
ইন্ডাস্ট্রিতে একটি নাটকের সমাপ্তি ঘটলে নতুন শুরু হয়। নির্দেশিকা অনুসারে শুটিং করতে হলে প্রযোজককে আগের তুলনায় অনেক বেশি খরচের বোঝা টানতে হবে। এ দিকে চ্যানেলের তরফে এপিসোডের খরচ বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই। তাই প্রযোজকদের অন্যত্র কাটছাঁট করতে হবে। বেশ কিছু প্রযোজনা সংস্থা তাঁদের শিল্পীদের ইতিমধ্যেই পারিশ্রমিক কমিয়ে দেওয়ার ‘অনুরোধ’ করেছে। এর জেরে ফের কোনও জটিলতা তৈরি হলে, তা আশ্চর্যের নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy