সৌমিত্রের সঙ্গে শিবপ্রসাদ।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে দেখে অনেকেই অনেক কিছু শিখেছেন। শিখেছি আমিও। যে শেখা আমার যাপনের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছে। বেঁচে থাকতে শিখিয়েছেন তিনি। কাজের মধ্যে দিয়ে মৃত্যুর পরেও যে বেঁচে থাকা যায়, সেই পাঠ এই মানুষটার থেকেই পাওয়া। তাই তাঁকে নিয়ে কিছু ভাবতে বা লিখতে বসলে তাঁর কাজের কথাই বারবার মনে পড়ে যায়।
এখনও স্পষ্ট মনে আছে— ‘পোস্ত’র শ্যুটের সময়ে সৌমিত্র বাবুর স্ত্রী অসম্ভব অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি। ভেবেছিলাম, কাজের দিন পিছিয়ে দেব। কিন্তু কিছু মনস্থির করার আগেই সৌমিত্র বাবু নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিলেন— ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে ছবির শ্যুট বন্ধ করতে তিনি নারাজ। অগত্যা নির্ধারিত দিনেই শুরু হয়েছিল কাজ। ঘড়ির কাঁটা ধরে পৌঁছে যেতেন সেটে। ইন্ডাস্ট্রিতে এত বছর কাটিয়েও এক জন অভিনেতার কাজের প্রতি এই আগ্রহ, নিয়মানুবর্তিতা খুব বেশি চোখে পড়ে না। ওঁকে দেখতাম। আর অবাক হতাম। বুঝতে পারতাম ক্রমশ অদ্ভুত এক মুগ্ধতা আমায় কাবু করে ফেলছে। তাঁর জীবন ঘিরে শুধু কাজ। কখনও মঞ্চ, কখনও ছবি। স্ত্রীর অসুস্থতা নিয়েও কখনও কোনও কথা বলতেন না। শুধু এক দিন জানিয়েছিলেন, দীর্ঘ অসুস্থতার পর ম্যাডাম (দীপা চট্টোপাধ্যায়) প্রথম উঠে বসেছেন। তাই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে দুপুরে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করতে চান। সে দিন যেন নতুন করে আবিষ্কার করেছিলাম ব্যক্তি সৌমিত্রকে।
দাদু-নাতির ভালবাসার গল্প নিয়ে ‘পোস্ত’ বানিয়েছিলাম। ঘটনাচক্রে সেই ছবির মুক্তির আগেই দুর্ঘটনায় সৌমিত্রবাবুর নাতির প্রাণসংশয়ের পরিস্থিতি। এক প্রকার ধরেই নেওয়া হয়েছিল, প্রচারে সৌমিত্র বাবুকে পাওয়া যাবে না। সে ভাবেই সব কিছু পরিকল্পনা করছিলাম আমরা। কিন্তু আচমকাই এক দিন ফোন করলেন তিনি। ছবির প্রচার কবে, কী ভাবে হচ্ছে, জানতে চাইলেন সব। বললেন, কথা মতোই উপস্থিত থাকবেন। কাজের প্রতি কোন পর্যায়ে ভালবাসা থাকলে এমন হওয়া যায়! নতুন করে ভেবেছিলাম সে দিন। আমার মনে হয় সৌমিত্রবাবুই পশ্চিমবঙ্গের ব্যস্ততম তারকা ছিলেন।
এমন একজন মানুষকে তাই কাজের মাধ্যমেই উদ্যাপন করতে চাই। সোমবারই হয়তো ‘বেলাশুরু’র মুক্তির দিন ঘোষণা করব। স্বাতীদি (স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত) আর সৌমিত্র বাবুকে কথা দিয়েছিলাম, ওঁদের এই ছবি সকলের কাছে পৌঁছে দেব। আজ সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের পথে প্রথম পদক্ষেপ।
আমার মতে, এই ছবিতেই জীবনের সেরা অভিনয় করেছেন সৌমিত্রবাবু। বড় পর্দায় আরও এক বার মানুষ ফিরে পাবেন তাঁকে। তিনি আছেন। থেকে যাবেন বেলাশেষেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy