Advertisement
E-Paper

আমার আর ঋতুর মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে, তাই সমীকরণ এত মজবুত: শর্মিলা ঠাকুর

“সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ছবিতে উত্তমকুমার তো অবশ্যই দারুণ, নিজেকেও ভাল লেগেছে”, ছবি ঘিরে এখনও এতটাই স্মৃতিমেদুর শর্মিলা।

ছবি: সংগৃহীত।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৫ ০৯:০২
Share
Save

প্রশ্ন: কিছু দিন আগে বড় পর্দায় সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ছবির পুনর্মুক্তি হল। আপনি গিয়েছিলেন দেখতে?

শর্মিলা: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে গিয়েছিলাম। বড় পর্দার একটা অন্য রকম অনুভূতি আছে। ৬০ বছরের পুরনো একটা ছবি। উত্তমকুমার তো অবশ্যই দারুণ, নিজেকেও ভাল লেগেছে। সুমিতা সান্যাল একটা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সুব্রত মিত্র ও বংশীবাবুর কাজ কী যে ভাল লাগল বলে বোঝাতে পারব না।

প্রশ্ন: চোদ্দো বছর পরে বাংলা ছবিতে অভিনয়…

শর্মিলা: একেবারেই তাই। বাংলা ভাষায় অভিনয় করে খুব আনন্দ পেয়েছি। বাংলা আমার মাতৃভাষা। নিজের ভাষায় কাজ করার একটা আলাদা আনন্দ আছে। যেটা হিন্দি বা ইংরেজি ছবির ক্ষেত্রে নেই। তাই আমার কাছে এই ছবির আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। আমি অনেক দিন ধরেই একটা বাংলা ছবি করতে চাইছিলাম।

প্রশ্ন: আপনার শেষ বাংলা ছবি ‘অন্তহীন’। অনেক দিন পরে ‘পুরাতন’ ছবিতে অভিনয় করলেন। রাজি হলেন কেন?

শর্মিলা: প্রথম কারণ ঋতুপর্ণা। ও বলেছিল, “তোমার জন্য একটা ভাল চরিত্র ভেবেছি।” আমিও দেখলাম সত্যিই চরিত্রটা অনবদ্য। অভিনেত্রীর পাশাপাশি প্রযোজক হিসাবেও দারুণ ঋতুপর্ণা। সুমনের ‘বসু পরিবার’, ‘কাদম্বরী’ দেখেছি। ওর কাজ ভাল লাগে আমার। ওর সঙ্গে কাজ করতে পেরে ভাল লাগল। ছবিটা করার পর মনে হচ্ছে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অভিনয়। এ বার দর্শকের তা মনে হবে কি না বলতে পারছি না। সর্বোপরি চিত্রনাট্য খুব ভাল লেগেছিল আমার।

প্রশ্ন: মা-মেয়ের সম্পর্ক নিয়েই এই ছবি। ছবিতে ঋতুপর্ণা আপনার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কাজ করে কেমন লাগল?

শর্মিলা: খুব ভাল লেগেছে। অনেক কঠিন দৃশ্যে অভিনয় করেছি আমরা। সেটে সময় মতো সব পেয়ে যেতাম। প্রযোজক হিসাবে ও তুখোড়। শুটিং স্পট একটু দূরে ছিল। কলকাতার রাস্তাঘাট দেখতে দেখতে সেখানে যাওয়ার অভিজ্ঞতা। সকালের কলকাতার পথঘাট পেরিয়ে ওই গঙ্গার ধারের গাছজড়ানো বাড়ির সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দেখা, সব মিলিয়ে খুব আরামের অনুভূতি। ঔপনিবেশিক বাড়ি, সুন্দর ফরাসি জানালা। চরিত্রটা যেমন তাতে কাজটা যদিও শক্ত ছিল, কিন্তু এই সময়ে এসেও সেটা করে আনন্দ পেয়েছি। আর ঋতু অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরো বিষয়টা চমৎকার সামাল দিয়েছে। অভিযোগের কোনও জায়গাই নেই।

ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: ‘পুরাতন’ ছবির সেটে এমন কোনও ঘটনা যা মনে দাগ কেটেছে?

শর্মিলা: আমি যেখানে থাকতাম, সেখান থেকে শুটিং ফ্লোর প্রায় দু’ঘণ্টার রাস্তা। যখন সেটে পৌঁছতাম সেই দু’ঘণ্টার যাত্রা সফল হয়ে যেত। এত সুন্দর জায়গা। গঙ্গার ঘাট, গঙ্গার হাওয়া বইছে, খুব পুরনো বাড়ি, বাড়ির দেওয়ালের গা বেয়ে শিকড় জড়িয়ে রয়েছে, বারান্দা পর্যন্ত চলে গিয়েছে। কী দারুণ লোকেশন! ওই সব দেখে মনটা একেবারে ভাল হয়ে যেত। টিমের সকলে খুব ভাল। কথা বলতাম আমরা, মজা করে কাজ করতাম। রাত্রে ভীষণ মশা, কিন্তু সব মিলিয়ে আমরা দারুণ উপভোগ করেছি।

প্রশ্ন: সদ্য আশি বছরের জন্মদিন পার করলেন। এই বয়সেও এত মাধুর্য, লাবণ্য ধরে রাখেন কী ভাবে?

শর্মিলা: সে তো আপনারা বলেন। পরিমিত আহার, একটু শরীরচর্চা আর ইতিবাচক মনোভাব। খারাপ চিন্তাভাবনা যত কম করা যায় ততই ভাল।

প্রশ্ন: আপনার যে কোনও সাক্ষাৎকারে এটা স্পষ্ট, আপনি সব বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকেন…

শর্মিলা: সে তো একটু থাকতেই হয়। না হলে কথা বলার মতো কোনও বিষয় থাকে না।

প্রশ্ন: এখন দিন কী ভাবে কাটে?

শর্মিলা: ভালই। আমার অনেক বন্ধুবান্ধব রয়েছে। একাধিক বিষয়ে আগ্রহ আমার। ছবি দেখতে ভালবাসি। দিল্লি শহরে থাকতে থাকতে অনেক সেমিনার, প্রদর্শনী, সঙ্গীতানুষ্ঠান প্রায়শই কিছু না কিছু হয়। আমি এগুলো ভীষণ ভালবাসি। এখানে ব্রিটেন, কানাডা-সহ নানা দেশের দূতাবাস রয়েছে। সে সব দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ হয়, নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। মোটামুটি দিনগুলো ভালই কেটে যায়।

প্রশ্ন: স্মৃতিভ্রংশ বৃদ্ধদের মধ্যে আকছার দেখা যায়। বিষয়টি আপনাকে ভাবায়?

শর্মিলা: ভেবে কোনও লাভ নেই। নিজেকে ব্যস্ত রাখা উচিত। তরুণদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা উচিত। নিজের পরিসর বাড়ানো উচিত। কোনও পছন্দের বিষয় নিয়ে একটু পড়াশোনা করা উচিত। কিন্তু স্মৃতিভ্রংশ অনেক সময় জিনগত কারণেও হয়ে থাকে। তবে এখন অনেক কিছু করা যায়। ভয়ের উদ্রেক হওয়াটা স্বাভাবিক তবে বিভিন্ন বিষয়ের মাধ্যমে কিছুটা ঠেকিয়ে রাখা যায় বোধহয়, আমি ঠিক জানি না।

প্রশ্ন: ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত সহ-অভিনেতা, কিছু বলবেন তাঁকে নিয়ে?

শর্মিলা: ইন্দ্রনীল সেটে একটা সক্রিয় ভাব নিয়ে আসে। খোলা মন আর একটু অবাঙালি ভাব আছে ওর মধ্যে। অন্য রকম। ওর হাঁটাচলা, কথা বলার ভঙ্গিমা, সব মিলিয়ে একটা ঝকঝকে ব্যাপার আছে। আমার খুব ভাল লেগেছে।

প্রশ্ন: এখনকার বাংলা ছবি দেখা হয়? আপনার সময়ের বাংলা ছবি ও বর্তমান বাংলা ছবির মধ্যে ফারাক কতটা?

শর্মিলা: সে সময় খুব ভাল ভাল পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি। তপন সিনহা, অজয় কর। এখন ছবির বিষয়বস্তুর অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। অন্য ধরনের ছবি হচ্ছে। অনেক বেশি আধুনিক। ‘ময়ূরাক্ষী’ ছবিটাও তো স্মৃতিভ্রংশ নিয়ে। ভাল ভাল বাংলা ছবি দেখছি।

প্রশ্ন: কলকাতাকে মিস্‌ করেন?

শর্মিলা: কলকাতা আমার খুবই প্রিয় শহর। খুব ভাল লাগে আসতে। এখানকার রাস্তাঘাট, খাবারদাবার, ভিড়ভাট্টা, সব কিছুই ভাল লাগে আমার। কলকাতায় আমি অনেক দিন থেকেছি। আমার এক বান্ধবী রয়েছেন এখানে, তাঁর বাড়িতেই উঠি।

প্রশ্ন: আরও বাংলা ছবি করবেন?

শর্মিলা: আমি জানি না। এই ছবিটা করে খুব আনন্দ পেয়েছি। সে রকম দারুণ ছবি যদি আসে, শরীর সঙ্গ দিলে নিশ্চয় করব।

প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে ঋতুপর্ণার অনেক ক্ষেত্রেই মিল রয়েছে। শুধুই ছবি সংক্রান্ত নয়, অন্য পেশার জীবনসঙ্গীর ক্ষেত্রেও। আপনিই কি তাঁর অনুপ্রেরণা?

শর্মিলা: আমার তা মনে হয় না। ঋতুপর্ণা স্ব-অনুপ্রাণিত। ওর পরিবার ওর কাছে অনুপ্রেরণা হতে পারে। তবে হ্যাঁ, ওর আর আমার মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। তাই আমাদের সমীকরণ এত মজবুত। আমি ওকে পছন্দ করি। ওর সঙ্গে কাজ করতে পেরেও ভাল লেগেছে। তবে ও যদি আমার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়, সেটা আমার কাছে রোমাঞ্চকর।

প্রশ্ন: পরিচালক সুমন ও প্রযোজক ঋতুপর্ণাকে দশে কত দেবেন?

শর্মিলা: সাড়ে দশ। এত ঠান্ডা ও মশার মধ্যে তাদের কোনও অভিযোগ ছিল না। মনোযোগ দিয়ে কাজ করেছে। সুমনের কোনও অহংবোধ নেই। ওর সমালোচনা করলে তা বোঝার চেষ্টা করে। ঋতু খুব পেশাদার মানুষ। আমি কেন, সেটে সকলেই ওর প্রশংসা করছিল। ও সবটা দেখেশুনে রেখেছিল বলে নিয়মানুবর্তিতা ছিল সেটে। তবে প্রযোজকের বাইরেও ও সহ-অভিনেত্রী হিসাবে দুর্দান্ত।

প্রশ্ন: মুম্বইয়ে ‘পুরাতন’ দেখে আপনার পরিবারের সবাই কী বললেন?

শর্মিলা: সাবা, সোহা, সইফ সকলের পছন্দ হয়েছে।

প্রশ্ন: খ্যাতনামী পরিবার, প্রত্যেকেই গুণী মানুষ। সকলকে একসঙ্গে রেখেছেন কী ভাবে?

শর্মিলা: ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে। কারওর বিষয়ে যেচে গিয়ে আমি মতামত দিই না। সইফকে কিছু বললে ও শুনবেই বা কেন? করিনা আমার পরিবারের বৌ। ও আমার কাছে, আমাদের পরিবারে এসেছে। সেই সম্মান দিয়েছি। আমিও আমার শাশুড়ির কাছে সেই সম্মান পেয়েছি। বাচ্চারা তাদের সময়মতো আমার কাছে আসে। সময় কাটায়। এটাই তো পাওয়া।

প্রশ্ন: মুম্বইয়ে দেখেছিলাম সইফ ‘পুরাতন’ দেখেছিল মাটিতে বসে…

শর্মিলা: ওরা ওই ভাবেই বড় হয়েছে। আমার জন্য যে ভালবাসা আছে ওদের মনে সেটাই আমার সারা জীবনের সঞ্চয়।

Sharmila Tagore Celebrity Interview Rituparna Sengupta

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}