এনসিবি-র দফতরে পূজা।
শনিবার মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থার (এনসিবি)-র দফতরে পৌঁছলেন শাহরুখ খানের ম্যানেজার পূজা দাদলানি। সকাল সকাল কেন হঠাৎ তিনি সেখানে গেলেন, তা যদিও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। তবে সূত্রের খবর, শাহরুখ পুত্রের অতীত চিকিৎসার নথি, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার নথি যাচাই করার জন্যই পূজাকে তলব করা হয়েছে। পূজা শুধু শাহরুখের দীর্ঘ দিনের সহায়ক নন, আরিয়ানেরও ঘনিষ্ঠ। পূজার আগে শাহরুখের গাড়িচালকদের মধ্যে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সূত্রের খবর, আরিয়ানের ঘনিষ্ঠ কোনও ব্যক্তি তাঁকে মাদক সরবরাবহ করতেন কি না, তারই অনুসন্ধান করছেন গোয়েন্দারা। সেই সূত্রে পূজা বা শহরুখের গাড়িচালকে জিজ্ঞাসাবাদ।
গত বৃহস্পতিবার ছেলে আরিয়ানের সঙ্গে দেখা করতে আর্থার রোড জেলে পৌঁছেছিলেন শাহরুখ। সেখানে মিনিট পনেরো ছিলেন তিনি। শাহরুখ জেল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁর বাড়িতে পৌছয় এনসিবি-র আধিকারিকরা। প্রথমে মনে করা হয়েছিল কিং খানের বাড়িতে তল্লাশি চালাবেন তাঁরা। কিন্তু এনসিবি-র তরফে জানানো নয়, তল্লাশি নয়, কিছু নথিপত্রে সই করানোর জন্যই 'মন্নত'-এ গিয়েছিলেন তাঁরা।
গত শুক্রবার মুখ বন্ধ করা একটি ফাইল নিয়ে এনসিবি-র দফতরে দেখা গিয়েছিল শাহরুখের দেহরক্ষীকে। এক দিনের মাথায় ফের তাঁর ছায়াসঙ্গী পূজার আবির্ভাব সেখানে। কেন এই ঘনঘন যাতায়াত? তার উত্তর এখনও অজানা।
আদালতে ইতিমধ্যেই আরিযান দাবি করেছেন, তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। তিনি বলেছেন, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের ভুল ব্যাখ্যা করছে এনসিবি। বিশেষ আদালতে একাধিক বার তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ায় বুধবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন আরিয়ান। ২৬ অক্টোবর তাঁর জামিনের শুনানি। প্রমোদতরীর পার্টিতে তাঁর কাছ থেকে কোনও মাদক পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন আরিয়ান। এখনও পর্যন্ত মাদক-কাণ্ডে মোট ২০ জনকে গ্রেফতার করেছেন এনসিবি। শাহরুখ-পুত্রের দাবি, ধৃতদের মধ্যে আরবাজ শেঠ মার্চেন্ট ছাড়া আর কারও সঙ্গেই তাঁর পরিচয় নেই। যে কথোপকথনের উপর ভিত্তি করে এনসিবি তদন্ত এগোচ্ছে, তার সঙ্গে কোনও ধরনের ষড়যন্ত্রের যোগসূত্র নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে, বারবার শাহরুখ খানের দেহরক্ষী বা তাঁর ম্যানেজারকে কেন তলব করছে এনসিবি? তা হলে কি এই মামলায় আরিয়ানের সঙ্গে শাহরুখের পরিবার বা পরিচিতদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে তারা?
একটি মহল থেকে এমনও বলা হচ্ছে যে শাহরুখ যেহেতু কেন্দ্রের শাসকদলের ‘একনিষ্ঠ সমর্থক’ নন, তাই তাঁকে নিশানা করা হচ্ছে। সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি আরিয়ানের নাম না করে অভিযোগ করেন, মুসলিম হওয়ার কারণেই কেন্দ্রীয় সংস্থা (এনসিবি) ’২৩ বছরের একটি ছেলের’ বিরুদ্ধে সক্রিয়। আরিয়ানের ঘটনার সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরিতে কৃষক খুনের প্রসঙ্গও টানেন পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)-র সভানেত্রী। সরাসরি কারও নাম না করে তিনি দাবি করেন, ওই ঘটনার মূল অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে আশিসকে আড়াল করা চেষ্টা করছে মোদী সরকার। টুইটারে মেহবুবা লেখেন, ‘চার জন কৃষককে খুনের দায়ে অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলেকে ছেড়ে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি ২৩ বছরের এক যুবকের পিছনে পড়েছে। কারণটা সহজ, তাঁর পদবি খান। বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্কের বিকৃত ইচ্ছাপূরণের জন্য মুসলিমদের নিশানা করা হচ্ছে।’ প্রসঙ্গত, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীও আরিয়ানের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বহরমপুরে দলীয় কর্মসূচিতে তিনি বলেছিলেন, ‘‘শাহরুখ খানের পরিবারের বিরুদ্ধে অন্যায় হচ্ছে, আরিয়ানকে মিথ্যে ভাবে ফাঁসানো হয়েছে।’’
শাহরুখকে নিয়ে বলিউডের একাংশের মুখেও শোনা গিয়েছে এমন সুর। বাদশার পাশে দাঁড়িয়েছেন সঙ্গীত পরিচালক বিশাল দাদলানি, শত্রুঘ্ন সিন্হার মতো বর্ষীয়ান অভিনেতা। বিশালের অভিযোগ ছিল, গৌতম আদানির সংস্থার মুন্দ্রা বন্দরে ৩ হাজার কেজি মাদক উদ্ধারের কাহিনি ধামাচাপা দিতেই শাহরুখের ছেলেকে নিয়ে টানাটানি।
প্রমোদতরীতে মাদক-কাণ্ডে শাহরুখের ছেলে আরিয়ানের ধরা পড়ার পর নেটমাধ্যমে ঘুরছিল একটি টুইট। যার মর্মার্থ, শাহরুখের সঙ্গে যাঁরা যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে কত জন আজ তাঁর পাশে আছেন? এই টুইটকে রিটুইট করে সঙ্গীত পরিচালক লেখেন, ‘যদি সঙ্গীত পরিচালকদের কথা বলেন, আমি আছি। শাহরুখ এবং তাঁর পরিবারকে বলির পাঁঠা করা হয়েছে। আদানিদের বন্দরে ৩ হাজার কেজি তালিবানি-মাদকের থেকে নজর ঘোরাতে তাঁদের সহজ নিশানা তৈরি করা হয়েছে। বিজেপি নেতার ছেলের হাতে কৃষকদের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরাতেও যে এই মামলা লম্বা হচ্ছে, তা পরিষ্কার।’
বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেওয়া শত্রুঘ্ন সম্প্রতি দাবি করেছেন, খ্যাতনামী শাহরুখের ছেলে বলেই আরিয়ানকে ‘নিশানা’ করা হচ্ছে। তাঁর আক্ষেপ, শাহরুখের এই কঠিন সময়ে বলিউডের সহকর্মীরা তাঁর পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন না। তিনি বলেছিলেন, “কেউ এগিয়ে আসছে না। সবাই ভাবছে এটা শাহরুখের সমস্যা। ও বুঝে নিক। ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই ভিতু।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy