Advertisement
২১ অক্টোবর ২০২৪
New Bengali Mega

রাঢ়ের ভাষা শুনলেই ‘বাহা’র কথা উঠছে, শুটের ফাঁকে ‘রাঙামতি’র দাবি আনন্দবাজার অনলাইনে

স্টার জলসার নতুন ধারাবাহিক ‘রাঙামতি তীরন্দাজ’। আনন্দবাজার অনলাইন তারই সেটে হাজির। বৈঠকখানা থেকে রান্নাঘর হয়ে রূপটানের ঘর। চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে কী ফাঁস হল?

Image Of Rangamoti Tirandaj Set Visit

ধারাবাহিক ‘রাঙামতি তীরন্দাজ’-এ মনীষা মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:০১
Share: Save:

শুক্রবার আগুন লেগেছিল স্টুডিয়ো ১৩-য়! একটি ঘরের ভিতরে আগুনের শিখা জ্বলছে। বাইরে ভিড়। প্রত্যেকে আগুন নেভাতে ব্যস্ত। এক যুবক আগুন উপেক্ষা করে ঘরের ভিতরে ঢুকতে মরিয়া। কারণ, তাঁর প্রিয়জন যে তখনও অগ্নিজালে আটকে। তাঁকে বাধা দিচ্ছেন উপস্থিত বাকিরা। কিন্তু তাঁদের কথা শুনলে তো!

ধারাবাহিক ‘রাঙামতির তীরন্দাজ’-এর শুটিং।

ধারাবাহিক ‘রাঙামতির তীরন্দাজ’-এর শুটিং। ছবি: নিজস্ব।

আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে খবর ছিল, ওই স্টুডিয়োয় স্টার জলসার নতুন ধারাবাহিক ‘রাঙামতি তীরন্দাজ’-এর শুটিং চলছে। তারই সেট-সফরে উপস্থিত হয়ে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের মুখোমুখি। বিশদ জানতে একটু এগোতেই সব পরিষ্কার। ধারাবাহিকেরই একটি দৃশ্যের শুটিং চলছে। চিত্রনাট্য অনুযায়ী নায়ক ‘একলব্য’-এর বাড়িতে আগুন লেগেছে। তার প্রেমিকা তখনও অকুস্থল থেকে বেরোতে পারেনি। তাই নিজের জীবন পণ করে তাকে উদ্ধারে ব্যস্ত সে। বাড়ির বাকিরা তাকে আটকাতে ব্যস্ত...

শট শেষ হতেই পায়ে পায়ে সেটের বাইরে। বাইরে তখন শরতের আকাশে রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি। স্টুডিয়োর ভিতরের ভিজে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কিছু দূরে রূপটান ঘরে। আগুন লাগার দৃশ্যে ধারাবাহিকের বাকিরা থাকলেও দেখা গেল না নায়কের মা চান্দ্রেয়ী ঘোষকে। কোথায় তিনি? প্রথম ঘরের দরজায় ঘা দিতেই খুলে গেল সেটি। ভিতরে চেয়ারের উপরে পা তুলে হাসিমুখে বসে অভিনেত্রী। পরনে ঘিয়ে জমিনে নীল পাড়ের তাঁতের শাড়ি। চুলে বিনুনি, চোখে চশমা। হাসিমুখে চান্দ্রেয়ী বললেন, “আমি এখন স্কুলের দিদিমণি!”

স্কুলের দিদিমণি চান্দ্রেয়ী ঘোষ।

স্কুলের দিদিমণি চান্দ্রেয়ী ঘোষ।

পর্দায় তিন সন্তান! বাস্তবে কবে?

চান্দ্রেয়ী ঘোষ ইদানীং একের পর এক মায়ের চরিত্রে! ব্যাপার কী? প্রশ্ন করতেই হেসে বললেন, “পর পর খলনায়িকা হয়েছি যখন, তখনও শুনতে হয়েছে, কেন একই চরিত্রে?” একটু থেমে জানালেন, বেশ অন্য ধরনের চরিত্র। ইতিবাচক, স্কুলশিক্ষিকা। যা আগে করেননি তিনি। ধারাবাহিকে ঘর সামলান স্বামী। তিনি বাইরে ব্যস্ত। আর পরোপকারী। ‘রাঙামতি’র মতো তিরন্দাজ তো তাঁর হাত ধরেই উন্নতির শিখর ছোঁবে। “সব মিলিয়ে বেশ লাগল, রাজি হয়ে গেলাম”, বললেন চান্দ্রেয়ী। বলতে বলতেই কালো কফিতে চুমুক। ধারাবাহিকে তাঁর তিন সন্তান। কিন্তু মুঠোমাপের কোমর যে বয়সের সঙ্গে শত্রুতা করছে! ফের অট্টহাসি অভিনেত্রীর। হাসি থামতে জবাব এল, “মন থেকে একটা কথা বিশ্বাস করি, অভিনয়ে এলে শরীরের যত্ন নিতে হয়। সেই চেষ্টাটাই করি মাত্র।”

সঙ্গে সঙ্গে কথা ঘুরিয়ে দিলেন। ছদ্মকোপে পাল্টা প্রশ্ন, ছিপছিপে না হলে মুর্শিদাবাদের গ্রাম্য রাস্তায় শুটিংয়ে সাইকেলে চাপা সম্ভব হত? তার উপরে তিনি ‘গেম টিচার’।

পর্দায় চরিত্র বদল হচ্ছে। তাল মিলিয়ে অভিনয়ের ধারাও। কেবল একটি জিনিসের বদল নেই। চান্দ্রেয়ী ঘোষ কিছুতেই সাতপাকে বাঁধা পড়েন না! তিনটে ছেড়ে একটি সন্তানও যদি হত...! কথা ফুরোনোর আগেই চেয়ারের উপরে পা তুলে বসে দুলে দুলে হাসি। চান্দ্রেয়ী বললেন, “এই বেশ ভাল আছি। নিজের মনে আছি। মন দিয়ে কাজ করছি। ছুটি পেলেই বেড়াতে চলে যাচ্ছি। এত দিন যখন হয়নি, তখন আর বিয়ে করব বলে মনে হয় না।” এ-ও যোগ করলেন, বিয়ে না করলেও তিনি ঘোর সংসারী। বাড়ির সব কাজ, ঘরগোছানো, রান্না নিজেই করেন।

তত ক্ষণে একপ্রস্ত শুটিং শেষ। সকলে দুপুরের খাবারের ছুটি পেয়েছেন। বড় বড় ডেকচি থেকে ধোঁয়া ওঠা ভাত, ডাল, ভাজি, সবজি, মাছ-মাংস থালায় সাজিয়ে রূপসজ্জার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। ব্যতিক্রম ধারাবাহিকের নায়িকা মনীষা মণ্ডল ওরফে ‘রাঙামতি’। তিনি ভাতের থালায় হাত না দিয়ে মোবাইলে উপুড়! আনন্দবাজার অনলাইন পায়ে পায়ে তাঁর কাছে...

মনীষার মুখে মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের আদল?

মনীষার মুখে মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের আদল? নিজস্ব চিত্র।

রাঢ়ের ভাষা বললেই লোকে ‘বাহা’র তুলনা টানে!

‘রাঙামতি’ ধনুক ছেড়ে মোবাইলে মশগুল? প্রশ্ন তুলতেই গামছা শাড়ি পরা নবাগতা মুখ তুলে তাকালেন। ঠোঁটে ঝকঝকে হাসি। পাকা রাঢ় বাংলার উচ্চারণে বললেন, “মোর খাবারটো আনতে হবেক লাই?” নায়িকা ফিগার সচেতন। তিনি ভাত নয়, স্যুপ খাবেন।

মুখোমুখি বসে খুঁটিয়ে দেখতেই আবিষ্কার। মনীষার মুখে যে মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের আদল! কেউ বলেছেন? বাংলা-বলিউডের সাড়া জাগানো নায়িকার মতোই গজ দাঁতের ঝিলিক তুলে জবাব দিলেন, “ধারাবাহিকে যোগ দেওয়ার পর অনেকের কাছেই শুনেছি। আমার এই শ্বদন্তের জন্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।” মুর্শিদাবাদের মেয়েটির ছোট থেকেই স্বপ্ন, অভিনয়ে আসবেন। মা-বাবা শিক্ষকতা করেন। মফস্সলে পড়া শেষ হতেই তড়িঘড়ি নিজের এলাকার বাইরে বেরিয়ে আসেন। “এমএ পড়া তো ছুতো! আসলে অভিনয় করব, নিজেকে প্রমাণ করব বলেই কলকাতায় আসা”, নিজেই ফাঁস করে দিলেন। জানালেন, কল্যাণীতে এসে পড়াশোনার সঙ্গে নাট্যাভিনয় শুরু করেন। যাতে কেউ না বলেন, তাঁর দ্বারা অভিনয় হবে না। এ ভাবেই নাটক, টুকটাক মডেলি‌ং করতে করতে প্রযোজক সুশান্ত দাসের নতুন ধারাবাহিকের অডিশনে ডাক।

জুটিতে নীলাঙ্কুর-মনীষা।

জুটিতে নীলাঙ্কুর-মনীষা। নিজস্ব চিত্র।

মফস্সলের মেয়ে অভিনয়ে নেমেছে। পাড়ার লোকের মতামত কী? মনীষা জানিয়েছেন, ওঁকে নিয়ে পাড়ার প্রত্যেকের গর্বের শেষ নেই। নতুন অভিনেত্রীকে নিয়ে সেটে কী চলছে? লাজুক হাসি ঠোঁটে মেখে বললেন, “নীলাঙ্কুরদা খুব ভাল। শট বুঝিয়ে দেয়। চান্দ্রেয়ীদি যেন বাস্তবেও মা। আমার শিক্ষিকা মা যে ভাবে শাসন করেন, তিনিও তাই-ই।”

কেবল একটাই সমস্যা। তাঁর বলা রাঢ়ের বুলি দর্শকদের খুব চেনা! ধারাবাহিক ‘ইষ্টি কুটুম’-এর দৌলতে। ‘রাঙামতি’র কথায়, “ওই ভাষা বললেই ‘বাহা’র তুলনা শুনতে হচ্ছে! বাধ্য হয়ে ভেবেছিলাম, ধারাবাহিকটা কি আর এক বার দেখব?” মায়ের পরামর্শ তাঁকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। মা তাঁকে বুদ্ধি দিয়েছেন, কারও নকল না করে নিজের মতো অভিনয় করতে। আপাতত সেটিই করছেন তিনি।

চিত্রনাট্যে মনোযোগী ‘একলব্য’ নীলাঙ্কুর মুখোপাধ্যায়।

চিত্রনাট্যে মনোযোগী ‘একলব্য’ নীলাঙ্কুর মুখোপাধ্যায়।

নিশ্চিত উপার্জন করব বলেই ছোট পর্দায়

নতুন ধারাবাহিকের নায়ক ‘একলব্য’ ওরফে নীলাঙ্কুর মুখোপাধ্যায়। এর আগে তিনি ধারাবাহিক ‘রামকৃষ্ণা’র নায়ক ‘রাম’। পুজোপাঠে বিশ্বাসী। চরিত্রের খাতিরে ১০ কেজি ওজন বাড়িয়েছিলেন। এ বার তিনি বিমানচালক। নিজেকে বদলাতে হাতে পেয়েছিলেন মাত্র দু’মাস। এত কম সময়ে নিজেকে কতটা ঘষামাজা করা সম্ভব হল? নীলাঙ্কুরের কথায়, “আট কিলো ওজন এর মধ্যেই কমিয়েছি। বিমানচালকের ধারালো ভাব আনতে আরও ওজন কমানোর চেষ্টা করছি। বিমানবন্দরে বসে খুঁটিয়ে পাইলটদের দেখেছি। সে সব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।” দাবি, এত দ্রুত কোনও চরিত্র নিজের মধ্যে আনা সম্ভব নয়। মেগায় কাজ করতে করতে অভিনেতারা অনেক কিছু শিখে যান।

কিন্তু মেগার সময়সীমা যে দ্রুত কমছে! একের পর এক ধারাবাহিক যথন তখন বন্ধ। নীলাঙ্কুরের পাল্টা যুক্তি, “কোনও ধারাবাহিক ব্যর্থ হতেই পারে। কিন্তু মন দিয়ে অভিনয় করলে কোনও দিন ব্যর্থ হব না। ভাল অভিনেতা কোনও দিন ব্যর্থ হন না।” এই উপলব্ধির কারণেই তিনি বড় পর্দার হাতছানি আপাতত ভুলে মন দিয়েছেন ছোট পর্দায়। যাতে রোজ অভিনয়ের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হতে পারেন। সঙ্গে উপরি পাওনা নিশ্চিত উপার্জন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE