টিকা নিয়ে কী ভাবছেন টলিউডের বর্ষীয়ান শিল্পীরা গ্রাফিক- নিরুপম পাল
সোমবার থেকে ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের প্রতিষেধক দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হল। ‘কো উইন ০.২’ পোর্টাল চালু করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্যে। অ্যাপ মারফত নিজেদের নাম নথিভুক্ত করে হাসপাতালে টিকা দিতে গিয়েছিলেন অনেক বয়স্ক মানুষ। কয়েক জনের শরীরে প্রতিষধক প্রবেশ করলেও অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা টিকা পাননি। অ্যাপ সংক্রান্ত বোধগম্যতা থেকে শুরু করে ভিড়ের চাপ, সমস্যায় পড়েছেন অনেকেই। আনন্দবাজার ডিজিটালের পক্ষ থেকে টলিউডের কয়েক জন বর্ষীয়ান শিল্পীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, তাঁরা কী ভাবছেন? কবে নেবেন টিকা? আদৌ নেবেন কি?
‘কোন ভরসায় টিকা নেব?’ প্রশ্ন তুললেন বর্ষীয়ান অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘আদৌ এই টিকা শরীরের জন্য ভাল কি না, সেটা তো জানি না। কিছু দিন আগে বাজারে ‘করোনিল’ এসেছিল। ‘করোনার ওষুধ চলে এসেছে’ বলে দাবি করেছিলেন আমাদের রামদেব বাবা। তার পরে দেখা গেল, সব ভুলভাল জিনিস বিক্রি করা হচ্ছিল। তাই যে ভাবে মানুষ এ পৃথিবীর টিকিটে আসে, আবার চলে যায়, সে ভাবেই চলে যাব। বেঁচে থাকার জন্য টিকাকরণের দিকে যেতে চাই না। তাও যদি পরিবারের লোক টিকা নিতে জোর করে, অথবা পরিবারের চিকিৎসক মনে করেন, আমার ওই টিকা নেওয়া উচিত, তবে দেখা যাবে। প্রযুক্তির ব্যবস্থাও করবে তারাই। কিন্তু আমার ইচ্ছে নেই। কারণ, আমার বিশ্বাসটা তো আগে!’’
কোভিড পরিস্থিতিতে বহু দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাজ করেননি অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী। কিন্তু গত জুলাই মাস থেকে নিজের কথা না ভেবে কেবল কলাকুশলীদের রুজিরুটির জন্য শ্যুটিং শুরু করেছেন। টিকা নিয়ে প্রশ্ন করতে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলেন যে, তিনিও প্রতিষেধক নিতে প্রস্তুত নন। অন্তত এখন তো নয়ই। তিনি আগে এই টিকার ফলাফল দেখে নিতে চান। যদি দেখেন, এই টিকায় ভাল কাজ হচ্ছে, দিকে দিকে মানুষ সুফল পাচ্ছেন, তবেই ভাববেন। সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে পারছেন না অভিনেত্রী। তার উপরে অ্যাপ সংক্রান্ত প্রযুক্তি নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের বয়সে এই সব প্রযুক্তিতে সকলে অভ্যস্ত নন। বিকল্প কিছু ভাবা হোক। পরিষ্কার একটা রাস্তা থাকবে। যাব, টিকা নেব, চলে আসব। না হলে এটা কোনও উপায় হতে পারে না।’’
এই মুহূর্তে ধারাবাহিকের শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত সুমন্ত মুখোপাধ্যায়। কিন্তু ‘কো উইন ০.২’ পোর্টাল এবং টিকাকরণের দ্বিতীয় অভিযানের কথা উঠতে উৎসাহের সুর শোনা গেল তাঁর গলায়। অভিনেতার কথায়, ‘‘কাজের চাপে দম ফেলতে পারছি না। তবে আমি আগ্রহী এই টিকা নিতে।’’ নিজের সুস্থতা বজায় রাখার পাশাপাশি আশপাশের মানুষ, পরিবারের সবাইকে রোগমুক্ত রাখতে এই টিকা নেবেন বলে আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানালেন প্রবীণ অভিনেতা। তবে এ কথাও জানাতে ভুললেন না, অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে তাঁর গৃহচিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন সবের আগে। তাঁর পরামর্শ মেনেই যাবতীয় পদক্ষেপ করবেন।
সপরিবার করোনায় ভুগে উঠেছেন অভিনেতা ফাল্গুনী চট্টোপাধ্যায়। আনন্দবাজার ডিজিটাল যোগাযোগ করতেই প্রবীণ অভিনেতার বক্তব্য, ইতিমধ্যেই ছেলে আবির চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। জি বাংলার ‘সারেগামাপা’-র সঞ্চালনায় ব্যস্ত অভিনেতা তাঁর বাবাকে আশ্বাস দিয়েছেন, ২-৩ দিনের মধ্যেই তিনি এ সংক্রান্ত সব তথ্য সংগ্রহ করে নেবেন। ফাল্গুনী ক্যানসারে আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্য কিছু দিনের মধ্যেই তাঁকে ‘কেমো’ নিতে হবে। তাই তিনি নিজে কথা বলেছেন প্রথম সারির দুই চিকিৎসকের সঙ্গেও। তাঁদের মতে, এই টিকার কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তাই এই টিকা নিয়েও তিনি নিশ্চিন্তে ‘কেমো’ চালিয়ে যেতে পারেন। তবে সরকারের তরফে কিছু অব্যবস্থার কথা প্রবীণ অভিনেতার কানে পৌঁছেছে। তাই তিনি সম্পূর্ণ নির্ভরশীল এখন বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার উপরে। জানালেন ‘‘শুনেছি, সরকারি হাসপাতালে টিকা নিয়ে অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে। যেহেতু আমি মারণ রোগের রোগী, তাই কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নই। নামী বেসরকারি হাসপাতালে এই টিকা দেওয়া হচ্ছে নামমাত্র খরচে। তাই স্ত্রী, রুমকি আর আমি সে রকমই কোনও হাসপাতাল থেকে এই টিকা নেব।’’
অভিনেতা চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী ইতিমধ্যেই করোনার টিকা নিয়ে নিয়েছেন। নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে লড়বেন তিনি। তা করতে গেলে এই অতিমারির সঙ্গে যুঝতে হবে। তাঁর মতে, এর জন্য টিকা নিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। তিনি বললেন, ‘‘করোনার টিকা নেওয়ার পরে আমার জ্বর বা ব্যথা কিছুই হয়নি। সুস্থ আছি। বাকিরাও এই পথ অবলম্বন করুন।’’ নিজের গাড়ির চালককেও টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ভোটের প্রচারে তাঁকেও তো সঙ্গে যেতে হবে! কেবল নিজের নয়, দেশ ও দশের কথা ভেবে সকলকেই টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy