একটু একটু করে সামলে উঠছে মেয়েটা। সম্প্রতি বন্ধুদের পার্টিতে এসেছিল। ওর মুখে আবার আগের মতো হাসি। আগের মতো ঝলমল করছে। দেখেই মনটা ভাল হয়ে গেল। বেঁচে থাকার আর এক নাম লড়াই। সেটা ও হাসিমুখে লড়ছে। এখন ও আগের থেকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী, আত্মনির্ভর, আমার কাছে যাকে বলে ‘পারফেক্ট রোল মডেল’। নানা কথা, নানা আলোচনা, সমালোচনা— সব পেরিয়ে দুই মেয়েকে আগলে রাখছে। তাদের গায়ে কোনও আঁচড় যাতে না পড়ে— দেখা, সব সামলাতে হয়েছে ওকে। এখনও হচ্ছে। তারকাদের দাম্পত্য ভাঙলে যা হয়। তাই সকলের কাছে বন্ধুর জন্য অনুরোধ, নীলাঞ্জনার জন্মদিনে যিশু সেনগুপ্তের নাম না-ই বা উচ্চারিত হল!
আমরা বরং এক লড়াকু নারীকে কুর্নিশ জানাই?
আমাদের বন্ধুত্ব আট বছরের। ২০১৭ সালে ‘পোস্ত’ ছবি করতে গিয়ে। সেই শুরু। ওদের বাড়িতে অনুষ্ঠান, পার্টি লেগেই থাকত। আমাদের নিমন্ত্রণ থাকত। আমিও যাওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে থাকতাম। কারণ, নীলাঞ্জনা ভীষণ অতিথিপরায়ণ। কে কী খাবে, কোনটা কার পছন্দ, কী করলে নিমন্ত্রিতরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন— নীলাঞ্জনা বোঝে। প্রত্যেককে সমান গুরুত্ব দিতেও জানে। তখন থেকেই দেখেছি, এক দিকে যেমন দিলদরিয়া, অন্য দিকে তেমনই শক্ত হাতে সব কিছু সামলানোর দক্ষতা রয়েছে ওর। প্রথম আলাপের সময় ও ছোট পর্দা থেকে দূরে। সংসারে নিবেদিতপ্রাণ এক নারী। স্ত্রী হিসাবে, মা হিসাবে, মেয়ে হিসাবে দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত। শেষ কারণের জন্য নীলাঞ্জনাকে আমার বেশি ভাল লাগত। কারণ, মেয়েরা নিজের সংসার এমনিতেই সামলায়। নীলাঞ্জনা কিন্তু মা-বাবাকে সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে। নিজের কাছে এনে রেখেছে। এক জন ছেলে যা করে। এর থেকে বড় লিঙ্গসাম্য আর কী হতে পারে!

এক ফ্রেমে জ়িনিয়া সেন, নীলাঞ্জনা সেনগুপ্ত, নন্দিতা রায়। ছবি: জ়িনিয়া সেন।
শুনেছি, স্বামীকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক কিছু করেছে। অনেক কিছু ছেড়েওছে। মেয়েদের স্কুল, শিক্ষিকাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলা। সন্তানদের ভালমন্দ সামলানো। বড় মেয়ে সারার বর্তমান পেশাজীবন— সব ওদের মায়ের গড়ে দেওয়া। নিন্দকেরা বলে, নীলাঞ্জনা নাকি মেজাজি, ‘ডমিনেটিং’। ওর মেজাজের আঁচ আমি কোনও দিন পাইনি। আর যদি ‘ডমিনেটিং’ হয়েও থাকে, তাতেই বা কী ক্ষতি? সংসার সামলাতে গিয়ে আমাদের মায়েরা আধিপত্য দেখান না! ওর মধ্যে এই জোরালো দিকটা আছে বলেই নীলাঞ্জনা সফল প্রযোজক। আবারও ছোট পর্দায় ফিরতে পেরেছে। অন্যান্য ধারাবাহিক যখন অল্প দিনে শেষ হয়ে যাচ্ছে সেখানে ‘হরগৌরী পাইস হোটেল’ ধারাবাহিক তিন বছর ধরে সম্প্রচারিত হল।
এ বারের জন্মদিনে নীলাঞ্জনা বাইরে। শুনেছি, বোন চন্দনাকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছে। সমাজমাধ্যমে ওর মধ্যরাতের উদ্যাপনের মুহূর্ত দেখলাম। সামনে রকমারি কেক। জ্বলতে থাকা মোমবাতির আলো মুখেচোখে ছড়িয়ে। যেন ওর জীবনে নতুন দিনের আভাস দিচ্ছে। আগের মতোই উজ্জ্বল, উচ্ছ্বল। এ রকমই থেকো নীলাঞ্জনা। জীবনে ওঠাপড়া, ঝড়ঝাপটা থাকবেই। তোমায় দেখে বাকি মেয়েরা যেন সে সব পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পাঠ নেয়।