প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়
তিনি ইন্ডাস্ট্রির পুরোধা হিসেবে পরিচিত। প্রত্যাশা ছিল, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় প্রযোজনায় আসবেন। কিন্তু এখনকার ট্রেন্ডকে উদাহরণ হিসেবে দেখলে প্রসেনজিৎ অনেকটা দেরি করেই প্রযোজনায় এসেছেন। খুচখাচ কিছু প্রযোজনা করলেও ছোট পর্দায় ‘গানের ওপারে’ দিয়েই তিনি মূলত ফোরফ্রন্টে আসেন। ‘বাপি বাড়ি যা’, ‘তিন ইয়ারি কথা’, ‘শঙ্খচিল’ আলাদা জঁরের ছবির প্রযোজনা করেছেন প্রসেনজিৎ। তবে নিয়মিত প্রযোজনায় আসেন ২০১৮ সালে। পরপর একগুচ্ছ ছবির ঘোষণা করেন। তার মধ্যে ‘উড়নচণ্ডী’, ‘মহালয়া’ মুক্তি পেয়েছে। প্রসেনজিতের সংস্থা এনআইডিয়াজ় ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’-এর যৌথ প্রযোজক। ছোট পর্দায়ও ফের কাজ শুরু করেছেন।
হিট-ফ্লপের হিসেব: তাঁর প্রযোজিত কোনও ছবি সুপারহিট নয়। যদিও প্রসেনজিতের মতে, ‘‘বক্স অফিসে ‘উড়নচণ্ডী’ বা ‘মহালয়া’ সফল না হলেও ভাল ছবির স্বীকৃতি পেয়েছে।’’
নতুন ট্যালেন্ট: সবচেয়ে বড় উদাহরণ মিমি চক্রবর্তী। অর্জুন চক্রবর্তী, গৌরব চক্রবর্তী, রাজনন্দিনী পাল, অমর্ত্য রায়— প্রসেনজিৎ চিরকালই নতুন মুখেদের সুযোগ দিয়েছেন। তুলনামূলক নতুন পরিচালকদের সঙ্গেও তিনি কাজ করেন। চন্দ্রাশিস রায়ের ডেবিউ ছবির তিনি অভিনেতা-প্রযোজক দুই-ই। ‘উড়নচণ্ডী’তে সুযোগ দিয়েছেন অভিষেক সাহাকে। ‘মহালয়া’র জন্য সৌমিক সেন প্রযোজক পাচ্ছিলেন না। এগিয়ে আসেন বুম্বাদা। নতুন পরিচালকের ছবি ভাল লাগলে, তাঁকে উৎসাহ দিতেও দ্বিধা করেন না সুপারস্টার। অনেক সময়ে তাঁদের প্রচারেও নিজের উদ্যোগে শামিল হয়ে যান।
মতাদর্শ: অভিনেতা যদি প্রযোজক হন, তা হলে একটা দ্বন্দ্ব কাজ করে। মলাট চরিত্র অন্য কাউকে ছাড়ার দ্বন্দ্ব। নিন্দুকের মতে, তাঁর বয়সি ভাল চিত্রনাট্য পেলে সেটা প্রসেনজিৎ নিজেই করবেন। হয়তো তাই। যে কারণে অভিনেতা বলে থাকেন, নিজের ব্র্যান্ড প্রসেনজিতের জায়গায় তিনি হিটলার। কোন ছবি বক্স অফিসের জন্য, কোনটা সম্মান আর কোনটা পুরস্কারের জন্য, সবটা তাঁর কাছে খুব পরিষ্কার। প্রযোজক প্রসেনজিতের বক্তব্য, ‘‘ভাল কনটেন্ট, ভাল ট্যালেন্ট তুলে আনতে হবে। এর বেশি কিছু ভাবছি না।’’
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
তাঁকে নিয়মিত প্রযোজক বলা যাবে না। মাঝে মধ্যে হয়তো একটি ছবি প্রযোজনা করেছেন। তবুও এই তালিকা থেকে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে বাদ রাখা যাবে না। নতুনদের উৎসাহ দিতে তিনি বরাবরই উৎসাহী। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের প্রথম ছবি ‘ইচ্ছে’র অন্যতম প্রযোজক ছিলেন ঋতুপর্ণা। অনেক নতুন পরিচালককে তিনি প্রযোজকও খুঁজে দিয়েছেন।
হিট-ফ্লপের হিসেব: ‘ইচ্ছে’ সুপারহিট ছিল। তবে ‘পটাদার কীর্তি’ সফল হয়নি। ‘আহা রে’ দর্শক-সমালোচকের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
নতুন ট্যালেন্ট: নতুনদের তিনি বরাবরই উৎসাহ দিয়েছেন। ‘আহা রে’তে বাংলাদেশের অভিনেতা আরিফিন শুভকে নিয়েছিলেন তিনি। নতুন কেউ ভাল কাজ করছে শুনলে তাঁর নামও সুপারিশ করে থাকেন ঋতুপর্ণা।
মতাদর্শ: প্রযোজক হিসেবে ঋতুপর্ণার বক্তব্য, ‘‘আমি খুব বেশি কাজ হয়তো করিনি। কিন্তু নতুন ট্যালেন্টকে এনডোর্স করেছি। ভবিষ্যতে আরও করব।’’
দেব
কেরিয়ার শুরুর দশ বছরের মধ্যে প্রযোজনায় এসেছিলেন দেব। ‘চ্যাম্প’, ‘কবীর’, ‘হইচই আনলিমিটেড’... পরপর ছবি করে যাচ্ছেন। নিজে প্রযোজক হওয়ার পর থেকে অন্য ব্যানারে ছবি করা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছিলেন। সম্প্রতি আবার শুরু করেছেন। তাঁর প্রযোজিত ছবিতে নতুন মুখ থাকলেও প্রধান চরিত্রে দেবকেই দেখা যায়। অভিনেতা অবশ্য যুক্তি দেন, ‘হইচই...’এ তিনি প্রধান মুখ ছিলেন না। এবং ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’তে তিনি নেই।
হিট-ফ্লপের হিসেব: বাণিজ্যিক ছবির সুপারস্টার হলেও পটবয়লারের বদলে অন্য ধারার ছবিতেই প্রযোজক দেব বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু প্রত্যাশিত সাফল্য অধরাই। ‘চ্যাম্প’, ‘ককপিট’, ‘কবীর’, ‘হইচই আনলিমিটেড’ কোনওটিই বক্স অফিসে সফল নয়। অন্য প্রযোজকের ঘরে ‘কিডন্যাপ’ও ব্যবসা করতে পারেনি। তবে দেব যেহেতু বড় মুখ, তাই টেলিভিশনের পর্দায় ছবিগুলির দাম আছে।
নতুন ট্যালেন্ট: রুক্মিণী মৈত্রকে লঞ্চ করেছেন তিনি। থিয়েটারের অর্ণ মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণেন্দু দেওয়ানজিকে কাস্ট করেছিলেন ‘কবীর’-এ। কিন্তু উল্টো দিকেও অনেক কিছু বলার আছে। রুক্মিণীকে সকলেই দেবের প্রেমিকা হিসেবে চেনেন। সুতরাং তাঁকে কাস্ট করা দেবের খাতায় কোনও বাড়তি নম্বর যোগ করে না। বিশেষত, যেখানে তাঁদের জুটির এখনও পর্যন্ত গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়নি। নতুন পরিচালকের সঙ্গেও কাজ করতে দেখা যায়নি দেবকে।
মতাদর্শ: অভিনতা দেব যে ধরনের ছবি করতেন, প্রযোজক দেবের পছন্দ তার চেয়ে আলাদা। বক্স অফিসে সফল না হলেও, দেব কনটেন্টভিত্তিক ছবি করায় বিশ্বাসী। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সবে শুরু করেছি। কত জনকে লঞ্চ করলাম, এ সব নিয়ে ভাবছি না। দর্শককে নতুন কনটেন্ট উপহার দিতে চাই।’’
জিৎ
অতীতের উদাহরণ বাদ দিলে, এ কালের নায়কদের মধ্যে জিৎ-ই প্রথম, যিনি প্রযোজনায় আসেন। মূল কারণ ছিল ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের সঙ্গে নায়কের সংঘাত। তার পরে রিলায়্যান্সের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনা শুরু করেন জিৎ। রিলায়্যান্স সরে গেলে তিনি একক ভাবে, নয়তো বাংলাদেশের কোনও সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন। এসভিএফ-এর সঙ্গে ঝামেলা মিটিয়ে ‘বেশ করেছি প্রেম করেছি’ এবং ‘পাওয়ার’-এ জিৎ কাজ করলেও সেই বন্ধুত্ব স্থায়ী হয়নি। এ বছর থেকে জিৎকে অন্য ধারার ছবিতেও দেখা যাচ্ছে।
হিট-ফ্লপের হিসেব: তাঁর প্রযোজনায় ‘বস’ এবং ‘গেম’ ভাল ব্যবসা করেছিল। ‘বচ্চন’, ‘অভিমান’, ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’... বক্স অফিসে সফল নয়। তবে দেবের মতোই টেলিভিশনের পর্দায় জিতের সুপারস্টার ইমেজ এখনও কার্যকর। তাই বড় অঙ্কের স্যাটেলাইট রাইটস তাঁর বাঁধা।
নতুন ট্যালেন্ট: নতুন অভিনেত্রীদের সঙ্গে জিৎকে জুটি বাঁধতে দেখা গিয়েছে। তবে তা সেই অভিনেত্রীদের কেরিয়ারে কোনও বাড়তি সুবিধে যোগ করেনি। এত দিন প্রতিষ্ঠিত পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করলেও, সম্প্রতি বিশ্বরূপ বসাক এবং অংশুমান প্রত্যুষের মতো নতুন পরিচালকের সঙ্গেও কাজ করেছেন জিৎ। তবে নিজস্ব প্রযোজনায় মুখ্য চরিত্রে তিনিই।
মতাদর্শ: মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি নিয়ে এত দিন অনড় ছিলেন জিৎ। সম্প্রতি অন্য ধারার ছবিতেও ঝুঁকছেন তিনি। ‘বাচ্চা শ্বশুর’ এবং পাভেলের পরিচালনায় ‘অসুর’ তার অন্যতম উদাহরণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy