ফিরে দেখা: শুটিংয়ের ফাঁকে।
আমি মানিকদার সঙ্গে পাঁচটি ছবিতে কাজ করেছি। ‘সীমাবদ্ধ’য় ছোট একটা দৃশ্যে অভিনয় দিয়ে শুরু করে ‘জনঅরণ্য’, ‘গণশত্রু’, ‘শাখা প্রশাখা’, ‘আগন্তুক’। মানিকদার শৈল্পিক ভাবনাচিন্তা প্রথম দিকে যেমন ছিল, শেষ দিকেও তেমন। একই ছিল। শেষের দিকে শারীরিক কারণে একটু ইনডোর নির্ভর হয়ে পড়েছিলেন। আউটডোরেযেতে পারতেন না। কিন্তু সেখানেও পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে সমস্ত ছকা থাকত। সবরকম প্রস্তুতি নিয়েই কাজ শুরু হত।
আমি যে বাণিজ্যিক ছবিগুলো করতাম, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাবনাচিন্তার বালাই থাকত না। গতানুগতিক শট ডিভিশন, সংলাপ, পাতার পর পাতা বলে যাও। মানিকদার ছবি সেসব ছবি থেকে একেবারেই আলাদা। আগে থেকে ভাবনাচিন্তা তাঁর করা থাকত। কতটুকু শট তুলবেন, তার কতটুকু রাখবেন।তাঁর সবচেয়ে বড়গুণ সংক্ষিপ্ততা। অল্প কথায় বা অনুচ্চারিত থেকেও যে অনেক কথা বলা যায়, সেটা মানিকদা অল্প সংলাপে, সাইলেন্ট শটে দেখিয়েছেন। গভীর দর্শন অথচ কত সহজ করে বলা। সেট ডিজাইন থেকে শুরু করে, লোকেশন হান্টিং, প্রপ্স, পোশাক, মিউজিক— সবটাই ছবির মেজাজ অনুযায়ী। ভাবা যায় না এত নিখুঁত। সামগ্রিকভাবে তিনি যা ছিলেন এবং যে স্তরের মানুষ ছিলেন, ওই স্তরে কারও পক্ষেই চট করে পৌঁছনো মুশকিল।আর তাই মানিকদার মতো ভাল ছবি করাও সহজ নয়। সেই জন্য আমার মনে হয় মানিকদাকে সকলের থেকে একেবারে আলাদা রেখে, দূরে রেখে, তাঁকে একটা সশ্রদ্ধ প্রণাম জানানোটাই ভাল।
মানিকদার উত্তরাধিকার একমাত্র ওঁর ছেলে সন্দীপ রায়ের মধ্যেই দেখতে পাচ্ছি আমি। বাকি যেসব পরিচালক আছেন তাঁদের মধ্যে ঋতুপর্ণ ঘোষ ও কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যেই ওই ধারার খানিকটা দেখতে পেয়েছি। বাকি কারও মধ্যে দেখিনি। তবে ভাল ছবি করার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। মুষ্টিমেয় কয়েকজন চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাংলা ছবির সামগ্রিক মান তো খুবই নিম্নগামী।
অল্প কথায় বা অনুচ্চারিত থেকেও যে অনেক কথা বলা যায়, সেটা মানিকদা অল্প সংলাপে, সাইলেন্ট শটে দেখিয়েছেন
আর একটা জিনিস আমার খুব মনে হচ্ছে করা উচিত, আর্টিস্ট ফোরাম আর ফেডারেশনের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব, টেকনিশিয়ানরা টাকা পাচ্ছেন না, অভিনেতারা টাকা পাচ্ছেন না, প্রযোজক টাকা দিচ্ছেন না— এই লড়াই আর তার সমাধানের মধ্যে আটকে না থেকে, মানিকদার বাছাই কিছু ছবি নিয়ে সন্দীপ রায়ের সহযোগিতায় যদি একটা মিনি ফিল্ম ইনস্টিটিউট কলকাতার টালিগঞ্জে করা যেত, ভাল হত। কীভাবে ছবি তৈরি হয়, কীভাবে চিত্রনাট্য তৈরি হয়, কীভাবে ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল ঠিক করতে হয়, অভিনেতাদের কত কম অভিনয় করিয়ে তাঁদের সেরাটা বের করে নেওয়া যায়, এই শিক্ষাগুলো সেখান থেকে পেলে টালিগঞ্জে তৈরি বাংলা ছবির উপকার হত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy