কান-এ পিয়েঁর অ্যাঞ্জিন্যু সম্মান সন্তোষ শিবনের। নিজস্ব চিত্র।
৬০ বছরে ঝুলিতে অনেক পুরস্কার। আরও আছে। তিনি শাহরুখ খানকে পরিচালনা করেছেন অশোকা ছবিতে। আন্তর্জাতিক মঞ্চ তাঁকে ‘দিল সে’ ছবির ‘ছঁইয়া ছঁইয়া’ গানের সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে জানে। তিনি সন্তোষ শিবন। দক্ষিণ এবং হিন্দি দুনিয়ার প্রযোজক, পরিচালক, সিনেমাটোগ্রাফার, অভিনেতা। এমন গুণীর এত দিন একটি সম্মান অধরা ছিল। দেশ তাঁকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চ তাঁকে কবে সম্মানিত করবে?
২০২৪ তাঁকে সেই সম্মানও এনে দিয়েছে। এ বছরের কান চলচ্চিত্র উৎসব গুণী ভারতীয়দের উপস্থিতিতে উজ্জ্বল। সেই মঞ্চে প্রথম এশীয় এবং ভারতীয় হিসেবে পিয়েঁর অ্যাঞ্জিন্যু সম্মান পেলেন শিবন। আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল শিবনের সঙ্গে। তিনি গর্বিত কান মঞ্চে পুরস্কার হিসেবে কান এবং তাঁর নাম লেখা ক্যামেরার লেন্স পেয়ে। জানিয়েছেন, তিনি সেখানে দুটো মাস্টার ক্লাসও নিয়েছেন।
২০১৩ থেকে চালু হওয়া এই পুরস্কার এর আগে কোনও ভারতীয় পাননি। সিনেমাটোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর অবদানের জন্য এই সম্মান পেলেন তিনি। ২০১৮ থেকে এই বিভাগেই আরও একটি পুরস্কার চালু হয়। নাম ‘প্রমিসিং ক্যাটেগরি’। ২০১৯-এ সেই পুরস্কার পান কলকাতার মধুরা পালিত। মধুরাও একমাত্র ভারতীয় এবং বাঙালি সিনেমাটোগ্রাফার, যিনি এই পুরস্কার পেয়েছেন। শিবনের সম্মানিত হওয়ার খবর ছড়াতেই উচ্ছ্বসিত শাহরুখ খান, আমির খান, কর্ণ জোহরের মতো ব্যক্তিত্ব। তাঁদের দাবি, কান চলচ্চিত্র উৎসবে শিবন সম্মানিত হওয়ায় তাঁরা অবাক হননি। কারণ, যোগ্য ব্যক্তির হাতে যোগ্য সম্মান উঠেছে। বন্ধুর উদ্দেশে রসিকতা করতেও ভোলেননি শাহরুখ। তাঁর কথায়, ‘‘পুরস্কার পেয়ে বিয়ারে গলা ভিজিয়ো। ওটা তোমার প্রাপ্য!’’ তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়ার সময় বিদেশি তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রীতি জ়িন্টা। সম্মানিত হওয়ার পর শিবন কাকে সেই স্মারক উৎসর্গ করলেন? মা-বাবা, পরিবারের সঙ্গে তিনি মনে করেছেন নিজের রাজ্য কেরলকে। যেখানে তিনি জন্মেছেন, সিনেমা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শিখেছেন। তিনি কৃতজ্ঞ মালয়ালাম ইন্ডাস্ট্রির কাছেও। যেখানে তিনি হাতেকলমে সিনেমাটোগ্রাফি শিখেছেন। শিবনের আন্তরকিতায় মুগ্ধ বিদেশি তারকারা তত ক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছেন ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’ দেবেন বলে। মিনিট পাঁচেক ধরে হাততালির ঝড় সভাগৃহে।
সদ্য দেশে ফিরেই শিবন ব্যস্ত কাজে। তার ফাঁকে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে ফোনে কথোপকথন। কান-এর মঞ্চে তিনি সম্মানিত। এই আবেগ ভাষায় বর্ণনা সম্ভব? বিনীত জবাব এসেছে, ‘‘এত দিন এই সম্মানের উপর ইয়োরোপ আর আমেরিকার সিনেমাটোগ্রাফারদের দখলদারি ছিল। আমি প্রথম এশিয়া এবং ভারতের মানুষ হিসেবে এই সম্মানে ভূষিত হলাম। এটা কম গর্বের কথা! ওঁরা আমায় নিয়ে কত খুঁটিয়ে গবেষণা করেছেন জানলে আপনারাও অবাক হবেন।’’ বলতে বলতে উচ্ছ্বসিত তিনি। পাশাপাশি, শিবন শুভেচ্ছা জানান কলকাতার বিশিষ্ট সিনেমাটোগ্রাফার মধুরাকে। বলেন, ‘‘মধুরাকে চিনতাম না। আমি সম্মানিত হওয়ার খবর জেনে সমাজমাধ্যমে তিনি আমায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তখনই শুনলাম প্রথম ভারতীয় হিসেবে এই পুরস্কারের ‘প্রমিসিং ক্যাটেগরি’তে সম্মানিত তিনি। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আগামী দিনে পিয়েঁর অ্যাঞ্জিন্যু সম্মানে সম্মানিত হন।’’ ৩৮ বছর ধরে বিনোদন দুনিয়ায় তিনি। ব্লকবাস্টার ছবির সিনেমাটোগ্রাফার, পরিচালক তিনি। তাঁর বিচারে তাঁর সেরা কাজ কোন ছবিতে? প্রশ্ন শুনেই প্রথমে হাসি। বলেছেন, ‘‘ও ভাবে বলা যায়! আমার কাছে প্রত্যেকটি ছবি সন্তানের মতো। আর বাবা তাঁর সব সন্তানকে সমান ভালবাসে। তা ছাড়া, সেরা কাজ করে ফেলা মানেই তো সব ফুরিয়ে গেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy