‘অ্যানিমাল’ ছবিতে রণবীর কপূরের লুক। ছবি: সংগৃহীত।
এখনও পর্যন্ত তাঁর ঝুলিতে মোট ছবির সংখ্যা মাত্র তিন। তার মধ্যেও একটি ছবি এখনও মুক্তি পায়নি। অর্থাৎ, মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা সর্বসাকুল্যে দুই। তাতেই গোটা দেশের বিতর্কের কেন্দ্রে থেকেছেন পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি বঙ্গা। দক্ষিণী বিনোদন জগতের পরিচালক তিনি। তাঁর উত্থান তেলুগু ছবি ‘অর্জুন রেড্ডি’র মাধ্যমে। বিজয় দেবেরাকোন্ডা অভিনীত এই ছবি পরিচালক হিসাবে সন্দীপের কেরিয়ারের অন্যতম সেরা ছবি তো বটেই। পাশাপাশি, এই ছবিতে অভিনয় করেই নজরে এসেছিলেন অধুনা দক্ষিণী তারকা অভিনেতা বিজয়। এর আগে একাধিক ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। তবে ‘অর্জুন রেড্ডি’ প্রায় রাতারাতি ভাগ্য বদলে দিয়েছিল বিজয়ের। তারকা তকমা পেতেও আর সবুর করতে হয়নি তাঁকে। তা সত্ত্বেও ছবি নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। কেন? কারণ ‘অর্জুন রেড্ডি’ ছবির মুখ্য চরিত্র অর্জুন রেড্ডি আদপে এক জন চূড়ান্ত রগচটা মানুষ। তার রাগ হলেই সে এক কিস্তিতে চারটে সিগারেটে টান দেয়। তাতেও মাথা ঠান্ডা না হলে সেই রাগের কোপ গিয়ে পড়ে তার বন্ধুবান্ধবের উপরে। তার রোষের হাত থেকে মুক্তি নেই তার বাড়ির কাজের মাসিরও। রেগেমেগে তাকেও ছুরি হাতে তাড়া করে সে। তা ছাড়াও, অতিরিক্ত রাগের বশে প্রেমিকার গায়ে হাত তোলা তো আছেই। সঙ্গে আছে ঘন ঘন চোখরাঙানো শাসানি। তার প্রেমিকার দিকে যেন অন্য কোনও পুরুষ ভুলেও না তাকায়। এই সব মিলিয়েই মহান প্রেমিক অর্জুন রেড্ডির জীবন।
তবে সেই জীবনের সঙ্গে বোধহয় একাত্ম হতে পেরেছেন দেশের বেশির ভাগ দর্শক। ‘অর্জুন রেড্ডি’-র বেনজির বক্স অফিস সাফল্যের জেরে তেলুগু ছবির পরে হিন্দিতেও তৈরি হয়েছে এই ছবি। সেই ছবির নাম ‘কবীর সিংহ’। পরিচালনায় সেই সন্দীপ রেড্ডি বঙ্গাই। ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শাহিদ কপূর। বক্স অফিসে প্রায় ৩৮০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল এই ছবি। ছবি ও ছবিতে শাহিদ কপূরের চরিত্র নিয়ে হাজার বিতর্ক হলেও নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন পরিচালক। একাধিক সাক্ষাৎকারে সন্দীপ জানিয়েছেন, প্রেমে নাকি এ সব একটু-আধটু হয়! কাউকে সত্যিকারের ভালবাসলে তাঁকে আঘাত করার অধিকারও নাকি মেলে বিনামূল্যে! একুশ শতকে দাঁড়িয়ে এক জন জনপ্রিয় পরিচালকের মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়েছেন দর্শক। সমালোচনায় সরব হয়েছেন সংবেদনশীল শিল্পীরা। তবে নিজের বিশ্বাসের জায়গা থেকে একচুলও নড়েননি সন্দীপ। এ বার সেই একই ফর্মুলায় নিজের পরবর্তী ছবি বানাচ্ছেন সন্দীপ।
‘অ্যানিমাল’ ছবিতে রণবীর কপূরের লুক প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই দর্শক নিশ্চিত, এই ছবিতেও ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’-এর এক চরিত্রেই দেখা যেতে চলেছে রণবীরকে। মাথায় লম্বা চুল, গালে চাপদাড়ি, সঙ্গে চোখেমুখে এক কঠিন অভিব্যক্তি। ছবির শুটিংয়ের সেট থেকে ফাঁস হয়েছে রণবীরের একাধিক ছবি। চলতি বছরের প্রথমে প্রকাশ্যে এসেছে ‘অ্যানিমাল’-এর পোস্টারও। সেখানে কুড়ুল হাতে, রক্তমাখা শার্ট গায়ে দেখা গিয়েছিল রণবীরকে। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ছবির প্রচার ঝলকেও একেবারে রণং দেহি মূর্তিতে রয়েছে রণবীর। তাঁর পরনে সাদা শার্ট, সঙ্গে দক্ষিণী কায়দায় পরা সাদা ধুতি, হাতে কুড়ুল। মুখোশ পরে থাকা এক দল মানুষের দিকে কুড়ুল হাতে ধেয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার পর এক এক করে শত্রুনিধন। প্রচার ঝলকের লালচে আভা থেকেই পরিষ্কার, বেশ রক্তাক্ত এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে চলেছেন দর্শক। সন্দীপের এই ছবির মূল সুরও যে তাঁর আগের দুই ছবির থেকে বিশেষ আলাদা নয়, তা বেশ স্পষ্ট। তবে কি দর্শকের সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়ে নিজের চেনা ঘরানা ধরেই ছবি বানিয়ে যেতে চান সন্দীপ?
বিনোদন জগতের মতো অনিশ্চয়তার দুনিয়ায় গতে বাঁধা পথ ধরে সাফল্যে পেয়েছেন একাধিক ছবি নির্মাতা। অনুরাগ কাশ্যপ, আশুতোষ গোয়ারিকর, প্রকাশ ঝা থেকে শুরু করে সঞ্জয় লীলা ভন্সালী, ইমতিয়াজ় আলি, কর্ণ জোহরেরাও হেঁটেছেন নিজেদের চেনা পথেই। কারও মুনশিয়ানা আলো-আঁধারির জগৎ নিয়ে কাজ করায়, কেউ আবার রাজনীতির পরিসরে গল্প বলতে বেশি আগ্রহী। কেউ ইতিহাসের বিশেষ এক অধ্যায় নিয়ে কাজ করতে চান, কারও আবার দক্ষতা আদ্যোপান্ত প্রেমের গল্প বলায়। কেউ সমান্তরাল ঘরানায় বেশি সাবলীল, কারও ‘ইউএসপি’ আবার বলিউডি প্রেম। ছক ভেঙে অন্য ধরনের ছবি যে তাঁরা করার চেষ্টা করেননি, তা নয়। তবে সাফল্য পাননি বিশেষ। সন্দীপ রেড্ডি বঙ্গাও ব্যতিক্রম নন। সমালোচনায় সত্ত্বেও কি তাই নিজস্ব ঘরানাতেই আবদ্ধ থাকবেন তিনি? উত্তর দেবে তাঁর পরের ছবি ‘অ্যানিমাল’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy